মৌলভীবাজারের বাজারে নতুন কিছু লেবু আসতে শুরু করেছে। এতে লেবুর দাম কিছুটা কমার দিকে। তবে যে দাম আছে, তা এখনো অনেকের নাগালের বাইরে।

বড় আকারের পরিপক্ব, রসালো লেবুর জোগান একেবারেই কম। জোগান না থাকায় পরিপক্ব লেবুর দাম রোজার আগে থেকে যা ছিল, এখনো একই রকম আছে। যে লেবু এখন বাজারের চাহিদা পূরণ করছে, তার অনেকটাই অপরিপক্ব, পুরোপুরি রস হয়নি। বাজারে নতুন লেবু ওঠায় মাঝারি ও ছোট লেবুর হালি (চারটা) আকার অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

এই সময়ে (শুকনো মৌসুমে) মৌলভীবাজারে প্রাকৃতিকভাবেই লেবুর উৎপাদন কম হয়ে থাকে। উপরন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই। অন্য সময় ফাল্গুন মাসে দু-এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যায়। তাতে বাগানের লেবুগাছে ফুল-ফল চলে আসে। পর্যায়ক্রমে বাজারে লেবুর জোগানও বাড়তে থাকে, সংগত কারণেই দাম কমতে থাকে। এবার একদিকে কম উৎপাদনের মৌসুম, অন্যদিকে রোজা এবং ঈদ চলে আসায় বাজারে চাহিদার চাপ আছে। এতে বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, ঈদ উপলক্ষে লেবুর দাম রোজার আগের মতো না বাড়লেও আপাতত যতটুকু কমেছে, ঈদের সময়টিতে তার বেশি খুব একটা কমবে না।

শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার এলাকার সবজির আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, খুব অল্পই লেবু তোলা হয়েছে আড়তের দোকানগুলোতে। একই দিন বিকেলে শহরের অন্যতম দুটি কাঁচাবাজার টিসি মার্কেট ও পশ্চিমবাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময় যেমন সব খুচরা সবজি বিক্রেতার কাছে বিভিন্ন রকম সবজির পাশাপাশি কমবেশি লেবু থাকে, বেশির ভাগ বিক্রেতার কাছেই সে রকম লেবু নেই। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা নিয়মিত ও প্রধান পণ্য হিসেবে লেবু বিক্রি করেন, তাঁরাই বিভিন্ন টুকরিতে বিভিন্ন আকারের লেবু সাজিয়ে রেখেছেন।

এই ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০-১২ দিন ধরে লেবুর দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি হালি লেবুতে আকারভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে বড় আকারের পরিপক্ব, রসাল লেবুর দাম রোজার আগের মতোই আছে। রোজার আগে যে বড় লেবু খুচরা বাজারে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, এখনো সে রকমই আছে। তবে বড় আকারের লেবুর জোগান বাজারে নেই বললেই চলে।

টিসি মার্কেটের খুচরা লেবু বিক্রেতা মো.

লায়েছ মিয়া বলেন, তিনি মৌলভীবাজার শহরের টিসি মার্কেটে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে লেবু বিক্রি করছেন। এই শুকনো মৌসুমে সব সময়েই লেবুর দাম চড়া থাকে। এ সময় লেবু উৎপাদন কমে যায়, তাই লেবুর সরবরাহ কম থাকে। যে কারণে এবার রোজার আগে থেকেই লেবুর দাম চড়া ছিল। রোজার সময় বলে যে দাম বেড়েছে, এ রকম বিষয় ছিল না। রোজার মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আগের দামেই লেবু বিক্রি হয়েছে। তবে ১০ থেকে ১২ দিন ধরে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আকারের লেবুর দাম কিছুটা কমছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় ১ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়ে থাকে।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ার লেবুচাষি জনক দেববর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেবুর দাম একটু কমছে। কিন্তু কোয়ালিটি (পুষ্ট ও রসাল) লেবুর দাম কমেনি। কোয়ালিটি লেবুর দাম এখনো পাইকারি ১৫ টাকার (একটা) কম বিক্রি হচ্ছে না। রোজার শুরুতে যে সাইজের (বড়) লেবু বেচছিলাম, এখন নাই। কিছু বাগানমালিক কোয়ালিটির লেবু রেখেছেন, এখন বিক্রি করছেন।’ এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, গত বছর এই সময় (চৈত্র মাসে) একেকটি বাগান থেকে প্রতিদিন দু-তিন ঠেলা লেবু বিক্রি করা গেছে। ফাল্গুন মাসে দু-তিনবার বৃষ্টি হয়েছিল, তাই ফসল ধরেছিল। এবার এখনো বৃষ্টির দেখা মিলছে না।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে সফরে এলেও শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন না জে ডি ভ্যান্স

চার দিনের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার ভারতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তবে চার দিন ভারতে থাকলেও শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছেন না তিনি। কেন যাচ্ছেন না, তা অবশ্য কারও জানা নেই।

জে ডি ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা বালা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ৩৯ বছর বয়সী ঊষার বাবা রাধাকৃষ্ণ (কৃষ) ও মা লক্ষ্মী দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ঊষার বাবা রাধাকৃষ্ণ মাদ্রাজ আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মা লক্ষ্মী মলিকিউলার বায়োলজিস্ট। দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৮৬ সালে ঊষার জন্ম। আইনজীবী ঊষার সঙ্গে জে ডি ভ্যান্সের বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ইউয়ান ও বিবেক। মেয়ে মিরাবেল। জে ডি ও ঊষা তিন সন্তান নিয়েই আজ সকাল ১০টার সময় ইতালি থেকে দিল্লি আসেন। চার দিন ভারতে থাকলেও অন্ধ্রপ্রদেশে যাওয়ার কোনো কর্মসূচি তাঁদের নেই।

ভ্যান্সের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হচ্ছে আজ রাতেই। ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মানে প্রধানমন্ত্রী নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। সেই বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত থাকবেন।

নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা হয়েছিল। তার পর থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। মোদি-ভ্যান্স বৈঠকে সেই চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আলোচনায় আসতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিও।

এই সফর নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগে জানিয়েছিল, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে যা যা বলা হয়েছিল, সেগুলোর রূপায়ণ ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে দুই দেশের নেতারা আলোচনা করবেন। সেই সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি।

ভ্যান্সের সঙ্গে ভারতে এসেছেন মার্কিন প্রশাসনের পাঁচ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁদের কেউ পেন্টাগনের, কেউ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত।

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, মোদি-ভ্যান্স বৈঠকে চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আগামী বছরের শেষ দিকে কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন ভারতে হওয়ার কথা। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাবেচা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভ্যান্সের এটাই প্রথম ভারত সফর। আজ দিল্লি বিমানবন্দরে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় রেল ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ভ্যান্সের ছেলেদের পরনে ছিল কুর্তা–পায়জামা। আর মেয়ে পরেছিল ঘাগরা–চোলি।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ বা বৈঠক হওয়ার কোনো খবর নেই। কেন নেই, তা নিয়ে কোনো কোনো মহলে আলোচনা চলছে। প্রটোকল অনুযায়ী, ভ্যান্সের সম্মানে ভোজ দেওয়ারও কথা উপরাষ্ট্রপতির। কিন্তু নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

আজই দিল্লিতে স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দিরে যাবেন ভ্যান্স দম্পতি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও নৈশভোজের পর তাঁরা চলে যাবেন মরুরাজ্য রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে। সেখানে এক অনুষ্ঠানে জে ডি ভ্যান্স ভাষণ দেবেন। আগামী বুধবার জয়পুর থেকে তাঁরা যাবেন আগরা। বৃহস্পতিবার জয়পুর থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশে ফিরবেন। শ্বশুরবাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশ তাঁর অদেখা থেকে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ