সবাই ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিল, আমি ফিরছিলাম কাফনে জড়ানো মাকে নিয়ে
Published: 30th, March 2025 GMT
বছর ঘুরে আবারও ঈদ এসেছে। চারদিকে সাজ সাজ রব। নতুন পোশাক, বাহারি খাবারের আয়োজন, হাসি-আনন্দে ভরে উঠেছে শহরগঞ্জ। এই আনন্দের ভিড়ে আমি যেন এক নিঃসঙ্গ দ্বীপের বাসিন্দা। ঈদ আসে, ঈদ যায়। আমার জীবনে ঈদের আনন্দ আর ফিরে আসে না।
স্মৃতিতে ভাসে চার বছর আগের ছবি। সময়ের হিসাবে সেটা ২০২১ সাল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা নামক মহামারির বিষবাষ্প। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে মাকে দেখে মনটা কেমন বিষণ্নতায় ভরে গেল। শরীরটা ভালো নেই, ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখ, তবু হাসির আড়ালে সব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। জানতে পারলাম, ডাক্তার দেখানো হয়েছে, ওষুধ চলছে। কিন্তু ঈদের আগের দিন বিকেল থেকে হঠাৎই খারাপ হতে লাগল মায়ের শরীর। বুকের ব্যথায় ছটফট করছেন, নিশ্বাস নিতে পারছেন না ঠিকমতো। ভয় পেয়ে গেলাম। সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
উৎসবের আমেজে শহর তখন অন্য রকম ব্যস্ত। কিন্তু আমার কাছে সবকিছুই বিভীষিকাময় লাগছিল। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি—কোথাও পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই, কোথাও চিকিৎসক নেই, দরকারি ওষুধ নেই! একজন ডাক্তার বললেন, ‘আগামীকাল ইসিজি করাতে হবে, এখন তো কিছুই খোলা নেই!’
মনে মনে ভয় পেলাম। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আগামীকাল! কিন্তু কাল আর যদি না আসে!’
আরও পড়ুনসামনের দিনগুলোতে তোমার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হয়ে থাকবেন মা-বাবাই০৫ মে ২০২৪রাত বাড়তে থাকল। আর আমি দেখতে পেলাম হাসপাতালের করিডরে একের পর এক মৃত্যু। এত কাছ থেকে কখনো মৃত্যু দেখিনি। আরও কটা নিশ্বাস নেবে বলে কত মানুষ লড়ছে। তখনো শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিলেন মা। হয়তো বুঝতে পারছিলেন, আর বেশিক্ষণ নেই।
ভোর ৬টায় ডাক্তার এসে মৃদুস্বরে জানালেন—‘আপনার মা আর নেই!’
মা নেই! কী ভয়ংকর কথা! আমি বোবা হয়ে গেলাম। কাঁদতে পারছিলাম না। নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসেছিলাম চুপচাপ। ঈদের দিন, যখন অন্যরা ঈদের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফিরছিলেন, আমি তখন সাদা কাফনে মোড়ানো মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।
ঈদের সেই সকালটা আমার কাছে একটা বিভীষিকা হয়ে আছে। বাড়ির উঠানে মাকে শুইয়ে রাখা হলো। আত্মীয়স্বজনরা বিলাপ করছে, কিন্তু আমার চোখে তখনো পানি আসেনি। কেবল মনে হচ্ছিল, মা এখনই চোখ খুলে বলবেন—‘বাবা, ঈদের নামাজ পড়েছিস?’
সেই থেকে ঈদ আমার কাছে কেবলই শূন্যতার নাম। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে আর সালাম করার কেউ নেই। মায়ের হাতের রান্না নেই, ঈদের সকালে শখ করে লাল শাড়ি পরা মা নেই। এখন শুধু কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়াই, চোখের পানি আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করি, আর বিড়বিড় করে পড়ি—‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’
শুনতে পাও মা?
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতে টেকনাফ সমিতি ইউএই`র ঈদ পুনর্মিলনী
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের প্রবাসীদের সামাজিক ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান 'টেকনাফ সমিতি ইউএই'র ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩০ মার্চ) শারজাহ হুদায়বিয়া রেস্টুরেন্টে আয়োজিত দুই পর্বের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুস সালাম আজহারি। সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ঈদ পুণর্মিলনীতে বক্তব্য রাখেন দুবাই মিউনিসিপালিটির প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আরিফ সিকদার বাপ্পী।
বক্তারা বলেন, প্রবাসীরা এবারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ প্রবাসী সংখ্যানুপাতের ভিত্তিতে একজন করে এমপি মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিপ্লবোত্তর সরকারের কাছে দাবি জানায়।
তারা আরো বলেন, যে সমস্ত দেশে তিন লক্ষাধিক প্রবাসী থাকবে সেখানে এমপি মানের একজন প্রবাসীকে সংসদের প্রতিনিধি নিয়োগের বিধান রেখে বৈষম্যহীন সংবিধান প্রণয়ন করা হউক।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন, সমিতির সহসভাপতি রাশেদ উল্লাহ, অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইদ্রিস, সাংগঠনিক সম্পাদক ছৈয়দ আকবর, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আজিজ উল্লাহ, নির্বাহী সদস্য হোছাইন বাদশা, মুহাম্মদ খোরশিদুল ইসলাম, তাহের কবির, হোছাইন আহমদ ও নুরুল আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের নিয়ে দেশীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সমিতির প্রস্তাবিত বিল্ডিংয়ের প্লানিং মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ঢাকা/ইভা