ক্ষোভ থেকে হা–মীমের কর্মকর্তাকে হত্যা: র্যাব
Published: 29th, March 2025 GMT
রাজধানীর তুরাগে হা–মীম গ্রুপের কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ হত্যায় জড়িত অভিযোগে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে একজন হলেন মো. ইস্রাফিল (১৯)। অপরজন কিশোর (১৬) হওয়ায় তার নাম–পরিচয় প্রকাশ করা হলো না। শনিবার রাতে তাদের তুরাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত গাড়িচালক সাইফুল ইসলাম ও নূর নবী মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব সূত্র জানায়, ‘ক্ষোভের বশে’ আহসানকে হত্যা করেন সাইফুল। তবে হত্যার পরিকল্পনা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি। মারধরের একপর্যায়ে আহসান মুমূর্ষু হয়ে পড়লে তিনি ভীত হয়ে পড়েন। তখন উত্তরায় নিথর দেহ ফেলে পালিয়ে যান জড়িতরা। গ্রেপ্তার অপর তিনজন তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। ক্ষোভের পাশাপাশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল তাদের।
র্যাব-১ এর সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিফ বিন হালিম সমকালকে বলেন, গাজীপুরের কাশিমপুর থেকে শনিবার রাতে এক কিশোর এবং শুক্রবার ইস্রাফিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন সাইফুল। তিনি নিজের বেতন–ভাতা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বিশেষ করে বেতনের বাইরে কখনও বাড়তি অর্থ বা টিপস না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। এ কারণে তিনি আহসানকে মারধর করে তাঁর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী নিহত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব থেকে নিজের হিসাবে ৩০ হাজার টাকা স্থানান্তর করেন সাইফুল। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করে নেওয়া হয়েছে।
নিহত আহসান উল্লাহ হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ২৩ মার্চ বিকেলে প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করে ব্যক্তিগত গাড়িতে আশুলিয়া থেকে তুরাগের চন্ডালভোগের বাসায় ফিরছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সাইফুল। পথেই আহসানকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে সাইফুল নিহতের বাসায় গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। এর দুদিন পর মঙ্গলবার দুপুরে তুরাগ থানাধীন উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে কাশবন থেকে আহসানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই সাইফুলকে আসামি করে পল্লবী থানায় অপহরণ মামলা করেছিলেন নিহতের স্ত্রী লুৎফুন নাহার। লাশ পাওয়ার পর সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে এবার দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণ
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের চার দিনের মাথায় বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি রবির দুই টেকনিশিয়ানকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার মানিকছড়ি উপজেলা সদরের ময়ূরখীল এলাকায় রবির টাওয়ার মেরামতকালে তাদের অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রোববার মানিকছড়ি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অপহরণের শিকার ব্যক্তিরা হলেন ইসমাইল হোসেন ও আব্রে মারমা।
রবির মানিকছড়ির টাওয়ারগুলো দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাঠকর্মী মংথুই মারমা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ময়ূরখীল এলাকার অচল টাওয়ার মেরামতের কাজ চলছিল। দুপুর ১টার দিকে পাশের গচ্ছাবিল এলাকা থেকে ফিরে মেরামতের কাজে নিয়োজিত ইসমাইল ও আব্রেকে দেখতে পাননি মংথুই। মোবাইল ফোনে কল করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এ ঘটনায় রোববার দুপুরে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন মংথুই। মানিকছড়ি থানার ওসি শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, অস্ত্রধারীরা দুই টেকনিশিয়ানকে টাওয়ার থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে গেছে।
এর আগে ১৬ এপ্রিল চবির পাঁচ আদিবাসী শিক্ষার্থী খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকায় তাদের বহনকারী অটোরিকশা আটকায় দুর্বৃত্তরা। এর পর অটোরিকশাচালক ও পাঁচ শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। পরে অপহরণকারীরা চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের খোঁজ পাঁচ দিনেও মেলেনি। ওই শিক্ষার্থীরা হলেন– মৈত্রীময় চাকমা, অলড্রিন ত্রিপুরা, দিব্যি চাকমা, রিশন চাকমা এবং লংঙি ম্রো। তারা চবির বিভিন্ন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মুক্তি দাবিতে আজ ‘আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। কর্মসূচিতে একই সঙ্গে রাঙামাটির কাউখালীতে এক আদিবাসী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অভিযোগ করে বিচার দাবি করা হয়। সমাবেশ শেষে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার ও কাউখালীর ঘটনার বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদ ও তাদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে চবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে তারা অপহৃত শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক প্রচারণার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রোববার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীরা। তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
পাঁচ শিক্ষার্থীকে মুক্তি ও কাউখালীতে নারী ধর্ষণের বিচার দাবিতে রোববার রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। ‘আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে কুমার সমিত রায় জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে আয়োজিত
সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
পাঁচ শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে উদ্ধার করার দাবি জানিয়েছে সাতটি বাম ছাত্র সংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। রোববার জোটের বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
খাগড়াছড়ির এসপি আরেফিন জুয়েল জানান, পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তাদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন রাঙামাটি অফিস, মানিকছড়ি ও চবি প্রতিনিধি)