Samakal:
2025-04-01@02:23:22 GMT

দুই বোনের ‘বটতলা’

Published: 29th, March 2025 GMT

দুই বোনের ‘বটতলা’

সিরাজগঞ্জের বেতকান্দি গ্রামের দুই বোনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনসংগ্রাম এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। তার নাম ‘বটতলা’। এটি ঠিক পারিবারিক উদ্যোগ নয়। বলা যেতে পারে বটতলা মাহমুদা রশীদ লতা ও মারিয়াম রশীদ ছন্দা– দুই বোনের সংগ্রামের ফল। বড় বোন লতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে। ছোট বোন ছন্দার পড়াশোনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম থেকেই তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছেন। করোনাকালে দুই বোনের চিন্তা এক হয়ে বটতলায় রূপ নেয়।
কাগজে-কলমে চার বছর হলেও বটতলার নিয়মিত কাজের বয়স তিন। ছন্দা তখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, আর লতা চাকরি করতেন। এর মাঝে কাজ চলত। দুই বছর ধরে দুই বোন সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে শহরের যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকেই ‘বটতলা ফ্যাশন’-এর যাত্রা শুরু বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার ছন্দা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণ হাটগুলো বসত বটগাছের নিচে, ওটা ছিল আমাদের কাছে শুদ্ধতার প্রতীক। তাই আমাদের নাম বটতলা। করোনার লকডাউনে ভাইবোনদের আড্ডা থেকে এই নামটা উঠে এসেছে। নামটি আমার প্রয়াত ভাই মুত্তালিব রিপনের দেওয়া।’
লতা বলেন, ‘১০ বছর চাকরি করার পর এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। তার প্রথম কারণ ছিল, আমি যেহেতু সিঙ্গেল মাদার, তাই আমার সন্তানকে যেন আমার মতো করে সময় ও সাপোর্ট দিতে পারি। তা ছাড়া মনে হয়েছে চাকরি করে আমি কখনও অন্যদের ভরসার জায়গা হতে পারব না বা আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব না, একটা বিজনেস দাঁড় করালে যেটি সম্ভব। আমার মতো বহু নারী আমাদের দেশে আছে, যারা শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে শুধু আর্থিক ব্যাকআপ না থাকার জন্য। আমি যা পেরেছি তা অন্যদের জন্য করতে চাই।’
ছন্দা জানান, ‘বটতলা ফ্যাশনের শুরুটা পারিবারিক আড্ডায় শুধু দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য হলেও পরে এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। এর পেছনে দুটো কারণ ছিল– প্রথমত, পার্টটাইম কিছু চাকরির অভিজ্ঞতার পর মনে হলো, আমার স্বাধীন পেশা দরকার এবং যেহেতু আমি নারী, ভবিষ্যতে সন্তানদের পরিপূর্ণ সময় দিতে হলেও ব্যবসাকে উপযুক্ত পেশা মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা আমার তীব্র। ব্যবসার মাধ্যমে অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এখনও আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক ছোট, কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কিছু লোক আমাদের ওপর নির্ভরশীল।’
বটতলার শুরুটা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে। সেখান থেকে এখন মাসে ২ লাখ টাকার মতো আয় হয়। এর সিংহভাগই পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় বলে জানান ছন্দা। এখনও তারা কোনো বেতন নেন না। ভবিষ্যতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে চান তারা। ছন্দা বলেন, ‘আমরা সবসময়ই ক্রেতার ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। আমাদের রিপিট কাস্টমার প্রচুর। সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে পারিনি, তবুও প্রায় ৫০ হাজার পরিবার আমাদের স্মরণে রেখেছে।’
এখন বটতলায় মেয়েদের শাড়ি, ব্লাউজ, থ্রিপিস, টুপিস, কুর্তি, টপস, স্কার্ট, ওড়না; ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া; শিশুদের ফ্রক, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। বটতলায় হাতের কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শাড়ি, জামায় হাতের কাজের নকশা, প্যাচওয়ার্ক, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, মোমডাই, টাইডাই, ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ রয়েছে। এ ছাড়া হাতে তৈরি গহনা পাওয়া যাবে ঈদের পর থেকে।
ছন্দা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা শুধু পোশাক নিয়ে কাজ করলেও অদূর ভবিষ্যতে আমাদের গ্রাম সলপের ঘোল, ঘি, দুধ, গুড়, সরিষার তেল নিয়ে কাজ করব। আমাদের আবাদি জমি আছে। সেখান থেকে উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করব।’
এখন সাভারে একটি আউটলেট আছে বটতলার। ব্যবসা বড় করতে চান দুই বোন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লতা বলেন, ‘বড় একটি অফিস, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনকে বেতন দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। এরপর ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে আউটলেট দেব। খাবার নিয়ে কাজ করব, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের পণ্য তুলে ধরতে চাই। স্বপ্ন অনেক বড়। সে পথে ছোট ছোট পা ফেলছি শুধু।’ v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে মৃত বেড়ে ২০৫৬, ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। খবর- বিবিসি

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না। 

গত শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। 

সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। 

২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা
  • স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা
  • বিধ্বস্ত স্কুলে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা
  • নিহতের সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়ে গেল, ৬০ ঘণ্টা পর চারজনকে জীবিত উদ্ধার
  • মিয়ানমারে মৃত বেড়ে ২০৫৬, ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার
  • চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাবে ব্যাহত ত্রাণ তৎপরতা: জাতিসংঘ
  • বগুড়ায় অ্যালকাহল পানে ২ জনের মৃত্যু
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণে কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণেই কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক