‘ইসরায়েল আমাদের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে’
Published: 29th, March 2025 GMT
নতুন করে বোমা বর্ষণে স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন ভেঙে পড়েছে। গাজাবাসী নিরন্তর বাস্তুচ্যুতি ও ক্ষুধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পাঁচ সন্তানের মা উরুদ আসফুর অষ্টমবারের মতো বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তিনি জানান, অন্য গাজাবাসীর মতো তাদেরও ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ইসরায়েল।
গাজার খান ইউনিসের কাছে লোকজনে ঠাসা ইউএনআরডব্লিউএ’র একটি স্কুলে অস্থায়ী তাঁবুতে বসে আছেন ২৬ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের জননী উরুদ আসফুর। তিনি কিছুটা হলেও ঘরের মতো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। ইসরায়েলের অবিরাম ১৫ মাসের অবরোধে স্কুলটি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়। তবে ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় এখানে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নির্দেশে আশ্রয়কেন্দ্রটি আবারও ভরে উঠেছে। খান ইউনিসের পূর্বাংশ ও উত্তর বেইত হানুন থেকে আতঙ্কিত পরিবারগুলো এখানে আশ্রয় নিচ্ছে।
যা তারা শেষ বাস্তুচ্যুতির সময় বাঁচিয়ে এনেছিলেন, তা দিয়ে উরুদ আসফুরের স্বামী আহমেদ তাদের পুরোনো তাঁবু দ্রুত সাজাচ্ছেন। ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে অনেক আগে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর তারা অষ্টমবারের মতো বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময় তারা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। ইসরায়েলের পুনরায় বোমাবর্ষণ সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
দুই কন্যা– তিন বছরের সানা ও দুই বছরের আমিরাকে জড়িয়ে ধরে উরুদ আসফুর বলেন, ‘আমি ঈদে আমার বাচ্চাদের কিছু আনন্দ দিতে চেয়েছিলাম– হয়তো নতুন জামা কিনে দেব বা মিষ্টি। কিন্তু ইসরায়েল আমাদের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে, আমাদের বাড়ি ও নিরাপত্তার মতোই।’
উরুদ আসফুরের তিন ছেলে– আদম (৮), আবদুল্লাহ (৭) ও হাসান (৬) তাদের বাবার সঙ্গে বেকারি ও পানির লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। উরুদ বলেন, ‘সারাবিশ্বের শিশুরা যেখানে ঈদ উদযাপন করছে, সেখানে আমার বাচ্চাদের খাবার ও পানির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিটি উৎসবই কেড়ে নেওয়া হয়েছে, এমনকি রমজানও। আমরা ভেবেছিলাম যুদ্ধ শেষ হচ্ছে। এখন শুধু সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের একমাত্র সংগ্রাম।’
সপ্তাহখানেক আগে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে। কারণ, ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে হামাসের হাতে আটক ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। এর মধ্যেই গাজাবাসী আবারও বোমাবর্ষণের নির্মম মূল্য দিচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও আর্টিলারি গাজায় অবিরাম হামলা চালাচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ৪৫০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার বেশির ভাগই শিশু ও নারী। শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
এ হামলায় দৈনন্দিন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির সময় অস্থায়ীভাবে চালু হওয়া দোকান ও বাজারগুলো আবারও পরিত্যক্ত। স্বাভাবিক জীবনের যে কোনো সম্ভাবনা এখন ধোঁয়া ও ধ্বংসস্তূপে মিলিয়ে গেছে।
৫২ বছর বয়সী আমাল আহমেদ তাঁর নাতিকে যখন সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন, তখন সে বসেছিল তাদের বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করা জিনিসের স্তূপের ওপর। পরিবারের অন্য সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা পূর্ব খান ইউনিসের ধ্বংস হয়ে যাওয়া পাড়ার কাছে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। আমাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম জীবন আবার গুছিয়ে নিতে পারব। এমনকি ঈদের কুকিজ বানানোরও প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, শুধু কিছুটা স্বাভাবিক বোধ করার জন্য। ইসরায়েলের যুদ্ধ সেই আশাও শেষ করে দিয়েছে।’
আমালের ছয় সন্তান ও সাত নাতি-নাতনি এখন বিভিন্ন জায়গায় আছে। তাঁর ছেলে মোহাম্মদের এক সন্তান কয়েক মাস আগে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছিল, এখন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আমালের সন্তানদের মধ্যে নেসমা (২২), মাহমুদ (১৯) ও মুয়াতাজ (১৫) তাঁর সঙ্গেই আছে, কিন্তু তাদের ভাগ্য অনিশ্চিত।
আমাল আহমেদের স্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল চায় আমরা হয় মরব, নয়তো দেশ ছাড়ব। আমার স্বামীও ঈদের আগে ছেলেমেয়ের জন্য কিছু কিনতে টাকা ধার করেছিল। কিন্তু এখন আমাদের আবারও একমাত্র লক্ষ্য– এই গণহত্যা থেকে বেঁচে থাকা।’ রাগান্বিত আমাল বলেন, ‘আমাদের কি অনন্ত দুঃখেই বাঁচতে হবে? আমাদের বাচ্চারা কি মুসলিম বিশ্বের অন্য শিশুদের মতো আনন্দ পাওয়ার অধিকারী নয়? ইসরায়েল চায় আমরা হয় মরব, নয়তো দেশ ছাড়ব।’
যুদ্ধ গাজার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ঈদের জন্য পণ্য মজুত করা দোকানিরা এখন তাদের খালি দোকান দেখছেন। গত কয়েক সপ্তাহে খাদ্যের দাম কমলেও এখন তা আবার বেড়ে গেছে এবং সরবরাহ আবারও কমে আসছে।
খান ইউনিসের জালা স্ট্রিট, যেখানে ঈদের কেনাকাটায় পোশাকের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকত, এখন সেই দৃশ্য কল্পনাতীত। ৩২ বছর বয়সী দোকানদার নাসার আল-মাসরি তাঁর দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন। মাত্র দু’দিন আগেও যে দোকান ভরে ছিল ক্রেতায়। এখন নতুন পোশাকের র্যাকগুলো ফাঁকা। নাসার জানান, বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর মানুষ কেনাকাটা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা জানে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
ইসরায়েল ফের আক্রমণ শুরু করার আগে গাজার সীমানা বন্ধ এবং ২ মার্চ থেকে জরুরি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আটার অভাবে বেকারিগুলো বন্ধ, হাসপাতালগুলো বন্ধ হওয়ার পথে। দৈনন্দিন জিনিসপত্রের জোগান দেওয়া এখন এক নিদারুণ সংগ্রাম।
গাজার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড.
উরুদ ও আমালের মতো বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর কাছে এই রাজনৈতিক বিতর্ক বিমূর্ত। তাদের কাছে যা মূর্ত তা হলো, প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ঈদে তাদের প্রার্থনা– এই নিরন্তর কষ্টের অবসান হোক। আসফুর তাঁর মেয়েদের জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমরা জানি না কখন এই যুদ্ধ শেষ হবে; কিন্তু আমরা এটা জানি– গাজা রক্তাক্ত হচ্ছে, বিশ্ব এখনও নীরব দর্শকের ভূমিকায়।’ v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ন ইউন স র ত র সময আম দ র র জন য আনন দ ইসর য আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধির ফোনালাপ
যুক্তরাষ্ট্রের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যালেক্স এন ওং বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেছেন। দুই কর্মকর্তা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে বলেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।
মার্কিন সরকার সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ২০১৭ সাল থেকে তারা প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে এবং জাতিসংঘকে জরুরি খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র জুলাই বিদ্রোহের সময় বাংলাদেশের ছাত্রী প্রতিবাদী নেতাদের মর্যাদাপূর্ণ ম্যাডেলিন অ্যালব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।