‘পৌরসভার আওতাভুক্ত হয়ে আট বছর কোনো সুবিধা তো পাইনি, উল্টো বিপদে আছি। মানুষের ওপর পৌরসভা হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, বাড়ির খাজনা-করগুলো এক প্রকার চাপিয়ে দিয়েছে। তার বিপরীতে পৌর কোনো সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হয় না। এখন এক কৃষকের যে পরিমাণ খাজনা দিতে হয়, শহরের বাসিন্দাকেও একই খাজনা দিতে হয়। তাহলে পৌর নাগরিক হয়ে লাভটা হলো কী!’
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শহিদুল ইসলাম, যিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। তাঁর মতো আরও চার ইউনিয়ের বাসিন্দাদের একই আক্ষেপ। কারণ হিসেবে তারা জানান, ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর শহরকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। সিটি করপোরেশন গঠনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে সীমানা বাড়ানো হয় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার। সদর উপজেলার পৌর এলাকা সংলগ্ন কৃষ্ণনগরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামকে সীমানা নির্ধারণ করে আগের ৯ ওয়ার্ড মিলিয়ে গঠন করা হয় মোট ২৭টি ওয়ার্ড। নানা জটিলতায় নতুন এলাকাগুলোকে নিয়ে সরকার সিটি করপোরেশন অনুমোদন না দেওয়ায় অবশেষে ‘ফরিদপুর বর্ধিত পৌরসভা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন। কোনো যাচাই-বাছাই ও মতামত ছাড়াই দ্রুত পৌরসভার এলাকা বর্ধিত করা হয়। বর্ধিত গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেলেও জমির খাজনা, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বাড়তি পৌর করের বোঝার চাপ তাদের ওপর। জমি কেনাবেচা করতে রেজিস্ট্রেশন ফি বেড়েছে জমির শ্রেণিভেদে ৫ থেকে ১২ গুণ। আট বছর আগে ফরিদপুর পৌরসভা থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায়, বর্ধিত পৌরসভা থেকে মুক্তি চায় প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচটি গ্রামের সিংহভাগ জমি কৃষি ফসলের এলাকা, যা বর্তমান বর্ধিত পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। এমন অনেক গ্রাম, মাঠসহ ফসলি জমি এই পৌরসভার সীমানায় পড়েছে। এলাকাগুলোতে বড় ধরনের স্থাপনা, কারখানাসহ কোনো অফিস নেই; নেই ন্যূনতম নাগরিক সেবার ব্যবস্থা। নতুন এলাকাগুলোতে আলোক বাতি, পানির ড্রেন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ পৌরবাসীর। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কৃষ্ণনগর, গেরদা, কৈজুরীসহ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে কেটে সংযুক্ত হওয়া বর্ধিত পৌরবাসী বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। পৌরসভার নামে বৈষম্যের শিকার হয়ে আগের ইউনিয়নে ফিরে যেতে চান তারা।

কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদ পুনর্বহাল আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ শেখ বলেন, ফরিদপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ৮০ শতাংশ কৃষি এলাকা। এটি আগে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্ধিত পৌরসভার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটিও বর্তমান রয়েছে। আমাদের পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হলেও নাগরিক সেবার উন্নয়ন হয়নি।
ফরিদপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শামসুল আরেফিন সাগর বলেন, আমরা কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় বর্ধিত এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে বিপাকে ছিলাম। আমি পরপর দু’বার কাউন্সিলর হয়েছি। কিন্তু বর্ধিত এলাকায় হাজার হাজার মানুষকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারিনি। দিনের পর দিন তাদের আক্ষেপের কথা শুনেছি। সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছি। এখন বর্তমান সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা এবং জনগণের প্রাপ্য সেবা তাদের বুঝিয়ে দেওয়া।
ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় অন্তর্ভুক্ত কোনো এলাকাকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা পৌরসভার নেই। তবে যদি কোনো এলাকাবাসী পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে না চান, তাহলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তদন্তের মাধ্যমে দাবি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রসভ র প রসভ র ইউন য ন র ইউন য় র এল ক

এছাড়াও পড়ুন:

কাগজে-কলমেই পৌর নাগরিক জোটে না কোনো সুবিধা

‘পৌরসভার আওতাভুক্ত হয়ে আট বছর কোনো সুবিধা তো পাইনি, উল্টো বিপদে আছি। মানুষের ওপর পৌরসভা হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল, বাড়ির খাজনা-করগুলো এক প্রকার চাপিয়ে দিয়েছে। তার বিপরীতে পৌর কোনো সুযোগ-সুবিধাই দেওয়া হয় না। এখন এক কৃষকের যে পরিমাণ খাজনা দিতে হয়, শহরের বাসিন্দাকেও একই খাজনা দিতে হয়। তাহলে পৌর নাগরিক হয়ে লাভটা হলো কী!’
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন শহিদুল ইসলাম, যিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন। তাঁর মতো আরও চার ইউনিয়ের বাসিন্দাদের একই আক্ষেপ। কারণ হিসেবে তারা জানান, ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর শহরকে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। সিটি করপোরেশন গঠনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে সীমানা বাড়ানো হয় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভার। সদর উপজেলার পৌর এলাকা সংলগ্ন কৃষ্ণনগরসহ পাঁচটি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামকে সীমানা নির্ধারণ করে আগের ৯ ওয়ার্ড মিলিয়ে গঠন করা হয় মোট ২৭টি ওয়ার্ড। নানা জটিলতায় নতুন এলাকাগুলোকে নিয়ে সরকার সিটি করপোরেশন অনুমোদন না দেওয়ায় অবশেষে ‘ফরিদপুর বর্ধিত পৌরসভা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নেন। কোনো যাচাই-বাছাই ও মতামত ছাড়াই দ্রুত পৌরসভার এলাকা বর্ধিত করা হয়। বর্ধিত গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দারা পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেলেও জমির খাজনা, হোল্ডিং ট্যাক্সসহ বাড়তি পৌর করের বোঝার চাপ তাদের ওপর। জমি কেনাবেচা করতে রেজিস্ট্রেশন ফি বেড়েছে জমির শ্রেণিভেদে ৫ থেকে ১২ গুণ। আট বছর আগে ফরিদপুর পৌরসভা থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায়, বর্ধিত পৌরসভা থেকে মুক্তি চায় প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের প্রায় পাঁচটি গ্রামের সিংহভাগ জমি কৃষি ফসলের এলাকা, যা বর্তমান বর্ধিত পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। এমন অনেক গ্রাম, মাঠসহ ফসলি জমি এই পৌরসভার সীমানায় পড়েছে। এলাকাগুলোতে বড় ধরনের স্থাপনা, কারখানাসহ কোনো অফিস নেই; নেই ন্যূনতম নাগরিক সেবার ব্যবস্থা। নতুন এলাকাগুলোতে আলোক বাতি, পানির ড্রেন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ পৌরবাসীর। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কৃষ্ণনগর, গেরদা, কৈজুরীসহ কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে কেটে সংযুক্ত হওয়া বর্ধিত পৌরবাসী বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। পৌরসভার নামে বৈষম্যের শিকার হয়ে আগের ইউনিয়নে ফিরে যেতে চান তারা।

কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদ পুনর্বহাল আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ শেখ বলেন, ফরিদপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ৮০ শতাংশ কৃষি এলাকা। এটি আগে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্ধিত পৌরসভার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটিও বর্তমান রয়েছে। আমাদের পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হলেও নাগরিক সেবার উন্নয়ন হয়নি।
ফরিদপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শামসুল আরেফিন সাগর বলেন, আমরা কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় বর্ধিত এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে বিপাকে ছিলাম। আমি পরপর দু’বার কাউন্সিলর হয়েছি। কিন্তু বর্ধিত এলাকায় হাজার হাজার মানুষকে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারিনি। দিনের পর দিন তাদের আক্ষেপের কথা শুনেছি। সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছি। এখন বর্তমান সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ফরিদপুর পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা এবং জনগণের প্রাপ্য সেবা তাদের বুঝিয়ে দেওয়া।
ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় অন্তর্ভুক্ত কোনো এলাকাকে বাদ দেওয়ার ক্ষমতা পৌরসভার নেই। তবে যদি কোনো এলাকাবাসী পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে না চান, তাহলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তদন্তের মাধ্যমে দাবি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ