Prothomalo:
2025-04-01@00:40:12 GMT

প্রথম মুসলিম নৌ-যোদ্ধা নারী

Published: 29th, March 2025 GMT

খ্যাতিমান সাহাবি আনাস ইবনে মালিকের (রা.) খালার নাম ছিল উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)। তিনি দুধপানের দিক থেকে রাসুলের(সা.) ও খালা ছিলেন। তার স্বামী ছিলেন উবাদা ইবনে -সামিত (রা.)। মদিনায় হিজরতের সময় প্রায় দুই সপ্তাহ রাসুল (সা.) কুবায় অবস্থান করেন। সেই সময় তিনি সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, মসজিদে কুবা। এই মসজিদের পাশে ছিল উম্মু হারাম বিনতে মিলহানের বাড়ি।

রাসুল (সা.

) প্রতি শনিবার মসজিদুল কুবাতে যেতেন। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো বাহনে চড়ে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১,১৯৩)

কুবায় গেলে প্রায়ই উম্মু হারামের বাড়িতে তিনি বেড়াতে যেতেন এবং দুপুরে বিশ্রাম নিতেন। একদিন তেমন করেই তিনি সে-বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। উম্মু হারাম রাসুল(সা.)কে খাবার খাওয়ান। খাওয়ার পর তিনি বিশ্রাম নেন, উম্মু হারাম রাসুলের মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় রাসুলুল্লাহ(সা.) ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে ওঠেন। উম্মু হারাম বেশ অবাক হন, জানতে চান, ‘আল্লাহর রাসুল(সা.) , আপনার হাসির কারণ কী?’

রাসুলুল্লাহ (সা.) জানালেন, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন। বললেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোককে যুদ্ধরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হলো। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমন অবস্থায় আরোহী, যেমন বাদশাহ তখতের ওপর।’

আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এই স্বপ্ন ছিল একটি ভবিষ্যদ্বাণী। মুসলিমদের তখন কোনো নৌবাহিনী ছিল না। এমনকি আবু বকর (রা.)বা উমরের (রা.) খেলাফতকালেও মুসলিমদের নৌবাহিনী ছিল না। ফলে এই ভবিষ্যদ্বাণী সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ছিল বিস্ময়কর। উম্মু হারাম (রা.)অনুরোধ করেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন, আমাকে যেন সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ তিনি প্রার্থনা করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। আবারও হাসতে হাসতে ঘুম থেকে উঠলেন। উম্মু হারাম (রা.)হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে পূর্বের মতো বললেন এবং জানালেন যে, ‘তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। ‘ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৭৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর খালা উম্মু হারামকে কে শাহাদতের সুসংবাদ দেন। ফলে উম্মু হারাম জীবিত থাকাবস্থায় ‘শহিদা; (নারী শহিদ) উপাধি লাভ করেন। কেউ কেউ তাঁকে এই নামে ডাকত। (ড. আব্দুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৫১)

আরও পড়ুননারী সাহাবি হজরত শিফা (রা.)১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.) চলে গেলেন। আবু বকর (রা.), উমর-ও (রা.) ইন্তেকাল করেন। উম্মু হারাম (রা.)আশায় বসে আছেন, কবে সেই সুবর্ণ সুযোগ আসবে। প্রায় ২০-২৫ বছর পরের ঘটনা। উসমানের (রা.) খিলাফতকালে মুআবিয়া (রা.) নৌ-অভিযানের প্রস্তাব দেন। খলিফা উসমান (রা.) অনুমতি দেন।

মুআবিয়া (রা.) অভিযান চালান বর্তমান ইউরোপের সাইপ্রাসে। যোদ্ধাদের মধ্যে রাসুলের (সা.) কয়েকজন সাহাবি সেই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন উবাইদা ইবনে সামিত (রা.); উম্মু হারামের স্বামী।

মুসলিম বাহিনীর প্রথম নৌ-অভিযানে স্বামীর সাথে উম্মু হারাম (রা.)অংশগ্রহণ করেন। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধ ছাড়াই সাইপ্রাস জয় করে। বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন একদিন উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)তাঁর ঘোড়া থেকে পড়ে যান এবং ঘাড়ে আঘাত পান। সেই জখমের ফলে তিনি ইন্তেকাল করেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৭৮৮, ৭,০০২)

উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রা.)প্রথম মুসলিম নৌ-যোদ্ধা নারী। মদিনায় জন্মগ্রহণ করা সেই নারী সাহাবির কবর ইউরোপের সাইপ্রাসে।

আরও পড়ুনহজরত উমর (রা.) ছিলেন সুশিক্ষিত সাহাবি০২ ডিসেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ র ম ব নত প রথম মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে মিয়ানমারে। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

এদিকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস।  খবর- বিবিসি

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না। 

শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। 

সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। 

২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ