ঈদুল ফিতরে নৌপথে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালু ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ নানা কারণে নৌপথে যাত্রীখরার শঙ্কায় থাকা লঞ্চ মালিকরাও যাত্রীসেবা বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন। ফলে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
এবারের ঈদের ছুটি বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় আগেভাগে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। এই অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস চালানো হবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাভাবিক সময়ে যে সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করে থাকে, তার অতিরিক্ত সংখ্যক লঞ্চ দিয়েই এই বিশেষ সার্ভিস চালানো হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত লঞ্চের সংখ্যা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির কর্মকর্তারা।
সরেজমিন রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর আনাগোনা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। কোনো কোনো নৌরুটের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী পারাবত-২ লঞ্চের ম্যানেজার সুমন সমকালকে বলেন, মঙ্গলবার বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হলেও প্রথম দুইদিন তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এরপর ঈদের ছুটি শুরুর দিন বৃহস্পতিবার থেকেই মূলত যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। শনিবার এই ভিড় ছিল অনেক বেশি।
এদিকে ঘরমুখী মানুষের সর্বাত্মক সুবিধা নিশ্চিতে সতর্ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগে থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নৌপুলিশ ও আনসারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও বেড়েছে। ফলে সদরঘাট ঘুরে যাত্রীদের জন্য পরিচ্ছন্ন ঘাট, ওয়াশরুম, ব্রেস্টফিডিং কর্নার এবং বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা দেখা গেল। বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চগুলোকে যথা সময়ে ছাড়তে ঘাটকর্মীদেরও তৎপর হতে দেখা গেছে।
এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দু'দফা বৈঠক করে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে নানা সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যাওয়ার রাস্তায় যানজট নিরসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধ ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, টার্মিনাল ও লঞ্চগুলো হকারমুক্ত রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন, বিআইডব্লিউটিএ'র কন্ট্রোলরুম চালু, যথাসময়ে লঞ্চ আসা-যাওয়া নিশ্চিত করা, নৌদুর্ঘটনা রোধে ঈদের আগের ও পরের পাঁচদিন সার্বক্ষণিক বাল্কহেড (বালুবাহী জাহাজ) চলাচল বন্ধ রাখা প্রভৃতি। গত ১৮ মার্চ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
এরই মধ্যে ঈদে নৌপথের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চের সময়সূচি চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটি'র ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সদরঘাটে সকল অংশীদারের সাথে মিটিং করেছি আমরা। নৌপথের বিদ্যমান ৩৮টি রুটেই লঞ্চ চালানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেছি। আমরা ঈদযাত্রাকে ঘিরে ১৭৫টি লঞ্চের সময়সীমা ঠিক করেছি।
তিনি বলেন, যাত্রী বাড়লে প্রয়োজনে লঞ্চ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। যাত্রীসেবা দিতে অন্য উদ্যোগগুলোও চলমান থাকবে। যাত্রীদের সচেতনতা ও দিকনির্দেশনা দিতে বন্দরকর্মীরা সার্বক্ষণিক সহায়তা দেবেন।
যাত্রী টানতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন লঞ্চ মালিকরাও। ঈদযাত্রাকে ঘিরে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে লঞ্চে যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, মাঝপথে যাত্রী উঠা-নামা না করানো, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়ার রাখাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিশ্চিতে সতর্কভাবে কাজ করছেন তারা। যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি যেন না হয় সেটি নিয়েও বেশ তৎপর লঞ্চ মালিকরা।
এর আগে কোনো কোনো লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি মানালী অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। ঈদের আগে-পরের উভয় সময়ের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হচ্ছে। ১৫ রমজান থেকেই অগ্রিম টিকিট ছেড়েছে তারা। অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই অন্য লঞ্চগুলোতে।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় আমরা বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব বলে আশাবাদী। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন পথ ন শ চ ত কর ন পর বহন ব যবস থ সদরঘ ট র বহন ঘরম খ
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদে র্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
র্যাব-১০ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শনিবার (২৯ মার্চ) সকালে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “ঈদুল ফিতরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে র্যাব সদস্য মোতায়েন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কন্ট্রোল রুম স্থাপন, বিশেষ বিশেষ রাস্তায় ও মোড়ে চেকপোস্ট স্থাপন, জাল টাকা বিস্তার রোধ ও শনাক্তকরণ এবং ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া সাইবার জগতে নজরদারি করছে র্যাব-১০। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঈদকে সামনে রেখে দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের পদচারণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সদরঘাট থেকে ৫০টি রুটে ১৭৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করবে। নৌপথে নির্বিঘ্ন যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও হয়রানি রোধে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে র্যাব-১০ এর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছে এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
৯ দিনের ছুটি, ফাঁকা হচ্ছে নরসিংদী
ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়ে ঈদ-নিরাপত্তায় বিশেষ তৎপরতা
এছাড়া ঈদকেন্দ্রিক দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের যাতায়াত ও নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড়, শ্যামপুর, ওয়ারী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও মাওয়া ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে ১০টি টিম ও সাদা পোশাকে ১০টি টিম নিয়োজিত রয়েছে।
ভ্রমণকালে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপসহ অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে একই সঙ্গে লঞ্চ-স্টিমার-স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে র্যাব।
ঢাকা/এমআর/এসবি