বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অতি অল্প সময়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই বর্তমান সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হওয়া উচিত। জনগণ নির্বাচিত সরকার চায়, যেখানে প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। কারণ, সব সংগ্রাম হয়েছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। তাই, নির্বাচনের কথা বলছে বিএনপি। জনগণ অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার চায় না।

আজ শনিবার বিকেলে বাড্ডায় মহানগর বিএনপির এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর বাড্ডার মাদানি সড়কে বেরাইদা ঈদগাহ মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।

ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শেষ হয়নি। সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবই, করব।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকেই দেবো- এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনটা চাই। আমরা এখনো বলছি, আমরা এখনো রাস্তায় নামি নাই। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি ঈদ, ইফতার সামগ্রী নিয়ে, তাদের সুখ-দুখে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু আমাদের স্বার্থে যদি, জনগণের স্বার্থে যদি কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়; তাহলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে। মাঠে নেমে দাবি আদায় করে নিতে জানে বিএনপি। এজন্য আমাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুব পরিস্কার কথা। যে যেখানেই থাকেন, সেই ইউনাইটেড স্টেটে থাকেন, ফ্রান্সে থাকেন আর আমেরিকায় থাকেন আর সেখান থেকে মানুষকে উত্তেজিত করবার চেষ্টা করেন, বিভাজন সৃষ্টি করবার চেষ্টা করেন। আমরা মানুষের সঙ্গে আছি, আমরা মানুষের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করছি। সুতরাং আমাদেরকে কেউ বিপথে পরিচালিত করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষকেও কেউ বিপথে পরিচালিত করতে পারবে না।

ভারত-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য কারোই পক্ষে আমরা নই উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিস্কার কথা। আমরা ভারত, পাকিস্তান, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের পক্ষেও নই। আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিস্কার করে বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ, আমরা বাংলাদেশি।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনাবিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জেলে নিয়েছিলো। ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। প্রায় ১৭ শ’ নেতাকর্মীকে গুম করছিলো। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা-গায়েবি মামলা দিয়েছিলো। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এই ধরনের নজির খুব কম। সেই একটা অবস্থা আমরা পার হয়ে এসেছি। আল্লাহ তাআলার অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে তিনি হঠাৎ করে একদিন হাসিনাকে যেন গুম করে দিলেন। হাসিনা গুম হয়ে গেছে আল্লাহতাআলার নির্দেশে। যে অত্যাচার-নির্যাতন তিনি মানুষের ওপরে করেছেন; সেখান থেকে আপাতত মুক্তি পেয়ে একটা মুক্ত পরিবেশে একটা জায়গায় আমরা এসে দাঁড়িয়েছি।

মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলাম তুহিন সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবিষয়ক সম্পাদক এমএ কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর, আখতার হোসেন, আলফাজ উদ্দিন, এজিএম শামসুল হক, গাজী রেজাউনুল হোসেন রিয়াজ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ম র জ ফখর ল ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ষড়যন ত র অন ষ ঠ ন আম দ র ফখর ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা যদি দুর্নীতি করি সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘অনেক সময় আমাকে শুনতে হয়, আপনারা দুর্নীতির কথা বলেন, কিন্তু আপনার নিজের অফিস তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমি এটি মোটেও উড়িয়ে দিই না। আমরা যদি দুর্নীতি করি সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন। আমরা চেষ্টা করব যতটা সম্ভব এই দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন যদি দুর্নীতি করে, তখন তো আর বাকিদের বলার কিছু থাকে না।’

আজ রোববার সকালে নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ’ স্লোগানে রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই গণশুনানি হয়।

নীলফামারী জেলা প্রশাসন ও দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সহযোগিতায় দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই গণশুনানির আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।

গণশুনানিতে জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় অভিযুক্তদের অনেকের উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ লিখিতভাবে ৮১টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সেই সঙ্গে সেবাবঞ্চিত জনসাধারণের করা অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গণশুনানিতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে ২টি আদালতে বিচারাধীন, কয়েকটি অপ্রাসাঙ্গিক ও ৫৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানীকে পঞ্চপুকুর শাহ পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কার্যালয় সহকারী বোরহান উদ্দিন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ইএফটি ও এফপিও সংশোধনের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগে তাঁকেও বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়।

সমাপনী বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আমার ধারণা নীলফামারীতে দুর্নীতির প্রকোপ কম। কিন্তু আমি ঢাকার অবস্থা যেটা দেখি, সেটা অনেক বেশি। যেখানে প্রকোপ কম, সেটাকে একটা মডেল জেলা হিসেবে দাঁড় করানো সম্ভব। আমি আশা করব, একটা সময় আপনারা নিজেরাই ঘোষণা করবেন নীলফামারী হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।’

দুর্নীতি রুখতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান যদি ঠিকমতো কাজ করে তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন আসবে? প্রাতিষ্ঠানিক প্রধান পর্যন্ত হচ্ছে শেষ দোষ। তারপরও আইনগত কিছু বিষয় আছে। যেগুলো অনেক সময় আদালতে চলে যায়। এটা ছাড়া আমি তো মনে করি, আজকে যে অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে, এর দু–একটি ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখানে আসার কোনো কারণ ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে জনগণের অর্থে আমাদের বেতন হয়, আমরা বড় চেয়ারে বসি, ভালো পোশাক পরি। আমাদের সেই কমিটমেন্ট থাকা দরকার। সেই প্রতিশ্রুতি থাকা দরকার। আমরা যেন তাদের (জনগণের) ঋণ শোধ করতে পারি।’

ভবিষ্যতে দুর্নীতি যাতে না হয় তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মনে করেন, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কীভাবে নিরসন করা যায়, তার পেছনে। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেটা রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয়, আমি, আপনি, আমরা সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি তাহলে কি দুর্নীতি দূর হবে না?’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রন হক সিকদারের ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ 
  • রন হক সিকদারের নামে থাকা ১০০ একর জমি জব্দের আদেশ
  • আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী: ধর্ম উপদেষ্টা
  • মিয়ানমারে যে কারণে চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়ছে
  • ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই সংস্কার চালাচ্ছে সরকার: জি এম কাদের
  • ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব, দেরি হলে সংকট বাড়বে
  • ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে’
  • আমরা যদি দুর্নীতি করি সেটাও আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন: দুদক চেয়ারম্যান
  • বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: শামসুজ্জামান দুদু
  • নির্বাচন ছাড়া দেশ আর কতদিন চলবে: রিজভী