বগুড়ায় অ্যালকাহল পানে দুই জনের মৃত্যু এবং অসুস্থ হয়ে আরো দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাতে অ্যালকোহল পান করার পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

মৃতরা হলেন, বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হাজী পাড়ার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের পালিত ছেলে আওরঙ্গজেব চিন্টু (৩৫) ও ঠনঠনিয়া বটতলা এলাকার আবু তালেবের ছেলে রাসেল (৩০)। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা হলেন, ঠনঠনিয়া বটতলার পিলু (৫৬) এবং একই এলাকার জয়দেব দাসের ছেলে সনি দাস (৩০)।

তাদের মধ্যে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় আওরঙ্গজেব চিন্টু এবং রাসেল মধ্যরাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।

আরো পড়ুন:

টেকনাফে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ৭

চার বছরের সাজা নিয়ে ছিলেন পলাতক, ধরা পড়লেন ইয়াবাসহ

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পিলু জানান, গত শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাসেল শহরের ১নং রেল ঘুমটি থেকে প্লাস্টিকের বোতলে অ্যালকাহোল কিনে আনেন। ওই দিন বিকেলে চারজন একসঙ্গে অ্যালকাহোল পান করেন। রাতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পিলু আরো জানান, পুলিশের ভয়ে হাসপাতালে ভর্তির সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বলে ভর্তি হয়েছেন। সনি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা.

সাইফুর শাহীন জানান, পিলু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ডায়রিয়া এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে শ্বাসকষ্ট ও পেটে ব্যথা থাকায় তাকে মেডিসিন বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি এখনো শংকা মুক্ত না। অ্যালকাহোল পান করে অসুস্থ কি-না তা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওরঙ্গজেব চিন্টুর পরিবারের একজন জানান, চিন্টু ও রাসেল আগে থেকে অ্যালকাহল পান করতেন। অ্যালকাহল পান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিন্টু কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে আসে। বিকেল ৫টার পর অসুস্থবোধ করলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চিন্টু মারা যায়। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার পর রাসেল মারা যায়।

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, চিন্টু ও রাসেল মারা যাওয়ার তথ্য তাদের কাছে নেই। সম্ভবত তারা রাস্তায় মারা গিয়েছিল। আর সনি নামে একজন ভর্তি আছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে তার কি ধরনের সমস্যা রয়েছে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, মদপানে দুইজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে দুইজনের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। মারা যাওয়া দুইজনের পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে সহযোগিতা করেনি। তারা পুলিশকে কোনো তথ্য দেননি। বেলা ৩টার মধ্যে দুইজনের লাশ পরিবারের পক্ষ থেকে দাফন করা হয়েছে।

ওসি আরো বলেন, হাসপাতাল থেকে এই দুইজনের মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশকে অবহিত না করায় আপাতত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
 

ঢাকা/এনাম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক রব র ল প ন কর দ ইজন র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বোনের ‘বটতলা’

সিরাজগঞ্জের বেতকান্দি গ্রামের দুই বোনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনসংগ্রাম এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। তার নাম ‘বটতলা’। এটি ঠিক পারিবারিক উদ্যোগ নয়। বলা যেতে পারে বটতলা মাহমুদা রশীদ লতা ও মারিয়াম রশীদ ছন্দা– দুই বোনের সংগ্রামের ফল। বড় বোন লতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে। ছোট বোন ছন্দার পড়াশোনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম থেকেই তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছেন। করোনাকালে দুই বোনের চিন্তা এক হয়ে বটতলায় রূপ নেয়।
কাগজে-কলমে চার বছর হলেও বটতলার নিয়মিত কাজের বয়স তিন। ছন্দা তখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, আর লতা চাকরি করতেন। এর মাঝে কাজ চলত। দুই বছর ধরে দুই বোন সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে শহরের যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকেই ‘বটতলা ফ্যাশন’-এর যাত্রা শুরু বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার ছন্দা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণ হাটগুলো বসত বটগাছের নিচে, ওটা ছিল আমাদের কাছে শুদ্ধতার প্রতীক। তাই আমাদের নাম বটতলা। করোনার লকডাউনে ভাইবোনদের আড্ডা থেকে এই নামটা উঠে এসেছে। নামটি আমার প্রয়াত ভাই মুত্তালিব রিপনের দেওয়া।’
লতা বলেন, ‘১০ বছর চাকরি করার পর এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। তার প্রথম কারণ ছিল, আমি যেহেতু সিঙ্গেল মাদার, তাই আমার সন্তানকে যেন আমার মতো করে সময় ও সাপোর্ট দিতে পারি। তা ছাড়া মনে হয়েছে চাকরি করে আমি কখনও অন্যদের ভরসার জায়গা হতে পারব না বা আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব না, একটা বিজনেস দাঁড় করালে যেটি সম্ভব। আমার মতো বহু নারী আমাদের দেশে আছে, যারা শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে শুধু আর্থিক ব্যাকআপ না থাকার জন্য। আমি যা পেরেছি তা অন্যদের জন্য করতে চাই।’
ছন্দা জানান, ‘বটতলা ফ্যাশনের শুরুটা পারিবারিক আড্ডায় শুধু দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য হলেও পরে এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। এর পেছনে দুটো কারণ ছিল– প্রথমত, পার্টটাইম কিছু চাকরির অভিজ্ঞতার পর মনে হলো, আমার স্বাধীন পেশা দরকার এবং যেহেতু আমি নারী, ভবিষ্যতে সন্তানদের পরিপূর্ণ সময় দিতে হলেও ব্যবসাকে উপযুক্ত পেশা মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা আমার তীব্র। ব্যবসার মাধ্যমে অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এখনও আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক ছোট, কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কিছু লোক আমাদের ওপর নির্ভরশীল।’
বটতলার শুরুটা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে। সেখান থেকে এখন মাসে ২ লাখ টাকার মতো আয় হয়। এর সিংহভাগই পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় বলে জানান ছন্দা। এখনও তারা কোনো বেতন নেন না। ভবিষ্যতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে চান তারা। ছন্দা বলেন, ‘আমরা সবসময়ই ক্রেতার ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। আমাদের রিপিট কাস্টমার প্রচুর। সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে পারিনি, তবুও প্রায় ৫০ হাজার পরিবার আমাদের স্মরণে রেখেছে।’
এখন বটতলায় মেয়েদের শাড়ি, ব্লাউজ, থ্রিপিস, টুপিস, কুর্তি, টপস, স্কার্ট, ওড়না; ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া; শিশুদের ফ্রক, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। বটতলায় হাতের কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শাড়ি, জামায় হাতের কাজের নকশা, প্যাচওয়ার্ক, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, মোমডাই, টাইডাই, ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ রয়েছে। এ ছাড়া হাতে তৈরি গহনা পাওয়া যাবে ঈদের পর থেকে।
ছন্দা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা শুধু পোশাক নিয়ে কাজ করলেও অদূর ভবিষ্যতে আমাদের গ্রাম সলপের ঘোল, ঘি, দুধ, গুড়, সরিষার তেল নিয়ে কাজ করব। আমাদের আবাদি জমি আছে। সেখান থেকে উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করব।’
এখন সাভারে একটি আউটলেট আছে বটতলার। ব্যবসা বড় করতে চান দুই বোন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লতা বলেন, ‘বড় একটি অফিস, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনকে বেতন দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। এরপর ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে আউটলেট দেব। খাবার নিয়ে কাজ করব, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের পণ্য তুলে ধরতে চাই। স্বপ্ন অনেক বড়। সে পথে ছোট ছোট পা ফেলছি শুধু।’ v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই বোনের ‘বটতলা’
  • বগুড়ায় মদ পানে দুজনের মৃত্যু, আরেকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণে কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক
  • বগুড়ায় দুজনের মৃত্যু, মদ পানের কারণেই কিনা খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসক