আসাম কো-অপারেটিভ অ্যাপেক্স ব্যাংকে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক দিলওয়ার হোসেন মজুমদার গত বৃহস্পতিবার গুয়াহাটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও আরেকটি মামলায় পুলিশ তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গৌহাটির কেন্দ্রে পল্টন বাজার থানার সামনে গতকাল শুক্রবার রাতভর মৌন বিক্ষোভ করেছেন সতীর্থ সাংবাদিকরা।

ভারতের বিভিন্ন প্রেসক্লাবের তরফে মজুমদারকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, বিবৃতি দিয়েছেন ভারতের একাধিক সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতাও।

আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অবশ্য বলেছেন, ‘দিলওয়ার সাংবাদিক নন। কেউ যদি লিখে দেয়, দিলওয়ার হোসেন মজুমদার সাংবাদিক, তাহলে তাঁকে এক্ষুনি ছেড়ে দেওয়া হবে।’

হিমন্তের বক্তব্য, দিলওয়ার ডাম্পারের ব্যবসা করেন। পোর্টালের কোনো সাংবাদিককেই তাঁরা পরিচয়পত্র দেন না। পোর্টালকে এখনো সাংবাদিকতা বলে বিবেচনা করা হয় না।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অ্যাপেক্স ব্যাংক নিয়ে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দিলওয়ারের কোনো কথা হয়নি। তবে ব্যক্তিগত কাজে বা ঋণ চাইতে তিনি ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন কি না সেটা জানতে সাংবাদিকেরা ব্যাংকে গিয়ে কথা বলতে পারেন। দিলওয়ারের বিরুদ্ধে এখন ব্যাংকের নথিপত্র হাতানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

গৌহাটির অন্যান্য সাংবাদিক অবশ্য দিলওয়ার সম্পর্কে অন্য কথা বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দিলওয়ার সংবাদভিত্তিক পোর্টাল ‘দ্য ক্রসকারেন্টে’–এর প্রধান প্রতিবেদক। তিনি গত মঙ্গলবার অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন।

দিলওয়ারের সতীর্থ সাংবাদিকেরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসাম কো-অপারেটিভ অ্যাপেক্স ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক বিশ্বজিৎ ফুকনের এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান। ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি।

আসামের সাবেক সংসদ সদস্য ও কংগ্রেস নেতা আবদুল খালেকও এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি সামাজিকমাধ্যমে লিখেছেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী এখন বিচারক হয়ে উঠেছেন। কে সাংবাদিক, আর কে সাংবাদিক নন—সেটা তিনিই এখন ঠিক করে দিচ্ছেন। গুয়াহাটি প্রেসক্লাব, প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা যেকোনো মিডিয়া সংস্থাকে সাংবাদিক নির্ধারণ করতে গেলে এখন হিমন্ত বিশ্বশর্মার সম্মতি নিতে হবে। এটা গণতন্ত্রের জন্য একটি মারাত্মক প্রবণতা।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে ভারত ক্রমে নিচে নামছে। প্রেস ফ্রিডম (সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা) বিষয়ক আন্তর্জাতিক সূচকে ভারতের অবস্থান ২০২২ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২ নম্বরে ছিল। ২০২৩ সালে ১৯ ধাপ নেমে ১৬১ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে। এরপরে সামান্য উন্নতি হয়। ২০২৪ সালে ভারত ১৬১ থেকে ১৫৯ নম্বরে উঠে এসেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র দ লওয় র হ মন ত মন ত র দ লওয

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় মিয়ানমারে, সাতদিনের শোক ঘোষণা

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয় চলছে মিয়ানমারে। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

এদিকে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস।  খবর- বিবিসি

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না। 

শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। 

সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। 

২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ