দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে বিএনপি আবার মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বিএনপি সফল হবে।

আজ শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে রাজধানীর মাদানী অ্যাভিনিউর ১০০ ফিটের বেরাইদ ঈদগাহ মাঠে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে, কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। ফ্রান্স, লন্ডন, আমেরিকা থেকে কেউ যদি দেশের মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেন, তবে তা রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।

বিএনপি বাংলাদেশের পক্ষে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ভারতের পক্ষেও না, পাকিস্তানের পক্ষেও না। আবার আমরা আমেরিকার পক্ষেও না ইংল্যান্ডের পক্ষেও না, আমরা বাংলাদেশের পক্ষে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন সবার আগে বাংলাদেশ।’

বিএনপি সব পরিবর্তন এনেছে দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, সংস্কার করেছে বিএনপি, একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে তার দল।

বিগত ১৭ বছরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি করে এমন ৯৯ শতাংশ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ড.

ইউনূসকে দেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে স্বল্প সময়ের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য। সব সংগ্রাম হয়েছে নির্বাচনের জন্য, সে জন্য বিএনপি নির্বাচনের কথাই বলে। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই সরকার ক্ষমতায় বসে থাকবে, জনপ্রতিনিধিত্বে কেউ থাকবে না, এমনটা মেনে নেওয়া হবে না।

একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য নির্বাচনকে পেছাতে চাইছে অভিযোগ করে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।

ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র জন য সরক র ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এ দেশের মানুষকে ঠিক করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে ট্রাম্প এসে ঠিক করে দেবেন না বা চীন থেকে সি এসেও এটা করে দেবেন না কিংবা ভারত থেকে মোদিও আমাদের ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এ বিষয় আমাদের অন্তরে গেঁথে নিতে হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’শীর্ষক এক আলোচনায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু সমস্যা আছে, এর জন্মই হয়েছে বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে, এটা নিয়ে অনেকে ভুল–বোঝাবুঝি করেন। বহু চিন্তার মধ্য দিয়ে, অনেক চিন্তা এসে এখানে একসঙ্গে হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহবুব উল্লাহ্ তখন বড় নেতা ছিলেন।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘তখন আমাদের একেকজনের একেক চিন্তা ছিল। কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ কমিউনিজম, কেউ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা করেছেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমরা সবাই এক হয়েছি এবং এক হয়ে লড়াই লড়েছি। আজ ২৪–এ একই ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা এসেছি, যেদিন ছাত্রদের ওপর গুলি শুরু হয়েছে, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে।’

‘প্রায় শত বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ লড়াইয়ে আমাদের অনেক ত্যাগ আছে, অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই আমাদের কয়েক হাজার তরুণ-তাজা প্রাণ চলে গেছে।’ তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের ত্যাগের কারণেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, সুখী দেশের স্বপ্ন দেখছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে।’

আমাদের চারদিকের অবস্থা, টেলিভিশনের টক শো, বিদ্যান মানুষের বক্তৃতা—সবকিছু শুনে সবাই কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘(সবাই) বলছেন, এত যে রক্তপাত হলো, এত রক্ত ঝরল, এত মায়ের বুক খালি হলো—কী হবে এর শেষ পরিণতি? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পরিণতি খুব ভালো হবে। কারণ, আমরা বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল ভালোর জন্য লড়াই করেছি এবং জয়ী হয়েছি।’

আজকের বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার সবটা তরুণদের জন্য হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একেবারে ২৪–এর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সামনে থেকে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং সেখানেই আমাদের শক্তি।’

দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তাঁদের কথা কেউ বলেন না। আমাদের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, বৈষম্য তো তাঁদের কাছে, পুরো বৈষম্য তো সেখানে। তাঁদের কথা বলা দরকার, তাঁরা হেসেখেলে তাঁদের কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে মির্জা ফখরুল শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যদি এর সুরাহা করা না যায়, তবে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে। আমার মনে হয়, কৃষক ও কৃষির সঙ্গে জড়িতদের যদি আমরা এগিয়ে আনতে পারি, তাঁদের কাজ দিতে পারি, তাঁদের নতুন প্রযুক্তি দিতে পারি, তবে সমস্যাগুলো আমরা অতিদ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের আছে, বরাবরই আছে। দেড় শ বছর যখন এখানে ব্রিটিশরা শাসন করেছে (তখনো ছিল)। পলিটিক্যাল তর্ক করা আমাদের মজ্জাগত। আমরা চায়ের দোকানে বসে পলিটিক্যাল আলাপ করি।’

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি, সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো চলে গেছে। আমি প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাসও আছে, তিনি সফল হবেন। আসুন, সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করে আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি। তবে একটা কথা, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই এবং গণতন্ত্রকে কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না—এটা চর্চা করতে হবে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে এক ভিডিও বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই সংস্কার চালাচ্ছে সরকার: জি এম কাদের
  • পররাষ্ট্র দপ্তরে ব্যাপক পরিবর্তন, থাকবে না গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ব্যুরো
  • ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে’
  • রাজনীতির ব্যাকরণ
  • ‘নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার বেশি দিন থাকলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে’
  • বিএনপির জন্ম হয়েছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য: সালাম
  • ইবি অর্থনীতি ক্লাবের কমিটি গঠন
  • বাংলাদেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে: শামসুজ্জামান দুদু
  • নির্বাচন ছাড়া দেশ আর কতদিন চলবে: রিজভী
  • ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল