পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ, থাকছে বিশেষ ট্রেনও
Published: 29th, March 2025 GMT
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এবার ১৯৮তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিদের জন্য এ বছর পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঈদের দিন ঈদগাহে আসার প্রতিটি রাস্তায় থাকবে তল্লাশিচৌকি। মোতায়েন থাকবে বিপুলসংখ্যক র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্য। সাদাপোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে সেনাসদস্যদের বিশেষ টহল। সব মিলিয়ে দেড় হাজারের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন উপস্থিত থাকবেন।
নজরদারির জন্য মাঠে ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ ছাড়া ঈদ জামাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাযুক্ত শক্তিশালী চারটি ড্রোন মুসল্লিদের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করবে। তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যমে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদগাহে মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ ও জরুরি প্রয়োজনে মুঠোফোন নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছাতা, ব্যাগ ও অন্যান্য ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।
মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে ঈদের জামাত আদায়ের সুবিধার্থে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে মাঠ। সারির দাগ কাটা হয়েছে। সীমানাপ্রাচীরসহ মাঠের ভেতরের গাছগুলোকে রং করা হয়েছে। মিম্বরের চারপাশে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থায়ী অজুখানার পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য অজুখানা। সুপেয় পানির জন্য মাঠের বিভিন্ন স্থানে ও আশপাশে স্থাপন করা হয়েছে টিউবওয়েল ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ট্যাংকি। মুসল্লিদের জরুরি প্রয়োজন সারতে রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা। মুসল্লিদের স্বাগত জানানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি তোরণ।
সকাল ১০টায় ঐতিহ্য ও রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে পরপর তিনবার বন্দুকের ফাঁকা গুলি ছুড়ে এ ময়দানে শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
শনিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, র্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি নাইমুল হাসান শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ফৌজিয়া খান বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবারের ঈদ জামাত হচ্ছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্তিতে এবার মুসল্লিদের সংখ্যা বিগত দিনের চেয়ে বেশি হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৯৮তম পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।’
ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যাপারে ডিসি বলেন, ‘ঈদ স্পেশাল-১১ ট্রেনটি ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ছয়টায় এবং কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল আটটায়। আর শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১২ ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায়, যা ভৈরব পৌঁছাবে বেলা দুইটায়। এ ছাড়া শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১৩ ট্রেনটি ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ছয়টায় ও কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে আটটায়। অন্যদিকে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল-১৪ ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা তিনটায়।’
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঈদ স প শ ল ক শ রগঞ জ ঈদগ হ ম র জন য ট র নট ময়দ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের প্রতিবাদে রোববার তিন পার্বত্য জেলা, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
শনিবার বিকেলে চাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিন দাবি তুলে ধরা হয়।
দাবিগুলো হলো– পাঁচ শিক্ষার্থীকে সুস্থ অবস্থায় দ্রুত মুক্তি, তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের জোরালো ও কার্যকর ব্যবস্থা এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
বিজু উৎসব শেষে চবি ক্যাম্পাসে ফেরার পথে গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে রিশন চাকমা, অলড্রিন ত্রিপুরা, মৈত্রীময় চাকমা, দিব্যি চাকমা ও লংঙি ম্রোকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় জেএসএস সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা ইউপিডিএফকে দায়ী করলেও, অস্বীকার করেছেন সংগঠনের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে যৌথ বাহিনী খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত চালাচ্ছে। শনিবারও খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোন ছড়াসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে চার দিনেও অপহরণে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা জানান, তিনি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে। সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা মুক্ত হওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জাল্লাং এনরিকো কুবি বলেন, অপহরণের পর শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে চবি প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। চার দিনেও আমরা তাদের কোনো খোঁজ পাইনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তিন পার্বত্য জেলা শহর, মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে সংহতি জানাতে সচেতন, মানবিক, প্রগতিশীল ছাত্র এবং নাগরিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চবি শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন সূত্রে আমরা এ অপহরণে ইউপিডিএফের জড়িত থাকার বিষয় জানতে পেরেছি। যে এলাকা থেকে অপহৃত হয়েছেন, সেটিও ইউপিডিএফ অধ্যুষিত।’
তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে অপহরণকারীরা কী বলেছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি জেনেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক শাংথুই প্রু, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ভুবন চাকমা, পহেলা চাকমা, পালি বিভাগের উহ্লাথোয়াই মারমা প্রমুখ।