পাকিস্তানে আট সেনাসদস্যসহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছেন। সেনাসদস্য ছাড়া বাকি নিহত ব্যক্তিদের আটজন তালেবান যোদ্ধা, একজন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে কয়েকটি আলাদা হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রদেশটিতে গত কয়েক মাসে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র  হামলা বেড়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র আজ শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে ‘সশস্ত্র তালেবানের’ বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সময় সাতজন সেনাসদস্য নিহত হন। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর গুলি চালাচ্ছিলেন।

অভিযানে সামরিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী লড়াই হয়। এতে আট তালেবান সদস্য নিহত হন। একই সঙ্গে ছয় সেনাসদস্যও আহত হন।

দক্ষিণ বেলুচিস্তানের পুলিশ কর্মকর্তা মহসিন আলী এএফপিকে বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মোটরসাইকেলে একটি বোমা পেতে রেখেছিল। এটা বিস্ফোরিত হয়ে একজন সেনা নিহত হন। একই ঘটনায় একজন সাধারণ মানুষও প্রাণ হারান।

গত মাসে এই অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল। এ ঘটনায় ছুটিতে থাকা বেশ কিছু সেনাসদস্য নিহত হন।

বেলুচিস্তান প্রদেশের গোয়াদর জেলায় পৃথক একটি সামরিক গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন সেনাসদস্য ও একজন সাধারণ নাগরিক আহত হন। এই জেলায় চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রয়েছে। তাই এই অঞ্চলটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় ১৯০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন, যাঁদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘বসন্ত অভিযান’ ঘোষণা করেছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্যমতে, গত বছর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১ হাজার ৬০০–এর বেশি মানুষ নিহত হন। গত এক দশকে দেশটিতে এক বছরে সন্ত্রাসী হামলায় এত বেশি মানুষ নিহতের এটাই রেকর্ড।

সহিংসতার অধিকাংশ ঘটনাই ঘটছে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন সদস য সশস ত র একজন স

এছাড়াও পড়ুন:

বীথি: পর্ব ১৭

বিথী,

তোকে লিখছি ৩৯ টাইডল্যান্ড ড্রাইভের এক নির্জন বাড়িতে বসে। টরন্টোতে এখন পুরো সামার, দেশ কি এত সুন্দ্রর হয় বীথি? প্রকৃতি কি এত অপরূপ আর মোহনীয় হয়?

নিজের বাড়ি থেকে বাস দূরত্বে প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা দূর হবে এই বাসা। অন্যদিকে ব্রাম্পটনে কষ্টি অফিস থেকে এই বাসার বাসের দূরত্ব মাত্র ৫০ মিনিট।

তোকে প্রথমে এই বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই কেমন। ইনেদ মুলেট, বয়স ৫১ বছর, মূল বাড়ি ত্রিনিদাদ। কানাডায় আছে ২৫ বছর, এই বছরের শুরুর দিকে মার্চ–এপ্রিল নাগাদ ইনেদ–এর সাথে পরিচয় হয় গুডলাইফ ফিটনেস সেন্টারে। যেখানে রেগুলার ব্যায়াম করতে যাই। কী করে ইনেদ–এর বাসায় উঠলাম, কী করে এমন ভিনদেশি একটা মেয়ে এত কাছের ও নির্ভরতার মেয়ে হয়ে উঠছে বা উঠল, সে গল্পে পরে আসছি।

এই বাড়ির দ্বিতীয় মানুষ সাগা কিম, এসেছে কানাডার কুইবেক প্রভিন্স থেকে। মূলত ফরাসি ভাষার ১৭ বছরের মেয়ে সাগা একজন জ্বলজ্বলে সুন্দরী, সারাক্ষণ স্কাইপে বয়ফেন্ডের সাথে কথা বলছে, ইনেদ এবং আমার সাথেও কথা বলছে আবার নিজের কাজ ও রান্না করছে মন দিয়ে।

এই যে, এইমাত্র সাগা ওর ছোট নোটপ্যাড নিয়ে কথা বলতে বলতে ওপর থেকে নিচে নামল, সাগা এসেছে ওয়াইএমসির একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে। সাগা মনে করে ও ইংলিশে কাঁচা, কিন্তু আমি জানি সাগা বেশ ভালোভাবেই ইংলিশ বলতে জানে।

ঘড়িতে এখন সন্ধ্যা ছয়টা, ইফতার হতে আরও তিন ঘণ্টা বাকি। বীথি, জীবনে বিচিত্র রকমের কষ্ট/ হাহাকার/ না পাওয়া আছে। সবার জীবনেই আছে, কিন্তু প্রাপ্তিও কি ভীষণভাবে আছে, সেটাও তো আমাদের মনপ্রাণ উজাড় করে বলা দরকার, তা–ই না?

কি ভীষণ প্রাপ্তি আছে এই বিদেশবিঁভুইয়ে তোকে সেই গল্প বলে বোঝানো যাবে না। এই আনন্দ আর বিশ্বাস বারবার আরও বেশি জীবনমুখী করে তোলে নিজেকে। আমিও সরদার ফজলুল করিম স্যারের মতো বিশ্বাস করি ‘মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু জীবনের মৃত্যু নেই—জীবন অমর’ শেষনিশ্বাস ফেলার আগেও স্যার বলে গেছেন জীবনের এই বিপুল জীবনমুখী দর্শন।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

যুগে যুগে সেই জীবন হাত থেকে হাতের নিশানা বদলে বেঁচে থাকে। এ যে গতকাল রাতে ‘ক্রাচের কর্নে’ বইটা শেষ করে কেবলই মনে হয়েছে, কী করে পৃথিবী এত মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে? কিন্তু আসলেই কি তা–ই? কর্নেল তাহের হয়তো নেই আমাদের মাঝে, কিন্তু সৎ আর নির্ভীক তাহের তো বেঁচে আছে সাহসী হয়ে, আমাদের ইতিহাসের পাতায়, জীবনের পাতায়।

এবার আসি নিজের প্রসঙ্গে, কি কর ইনেদ–কে পেলাম? তুই তো জানিস নাইয়া যদি বাসায় না থাকে, তাহলে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা জার্নি করে বাড়ি ফেরার কোনো মানে হয় না। গত বছর এই সামারে ছিলাম ৭৪ বছর বয়সী মনিকা পারকিন্সনের বাসায় ব্রাম্পটনেই, কিন্তু হায়, মনিকা মারা গেল গত বছরই আগস্টের মাঝামাঝি। প্রিয় মনিকাও আমার কাছের মানুষ হয়েছিল।

বীথি, এসব দেশে আমি যত বেশি বিদেশিদের দেখি, তত অবাক হই, ভাবি, আহা বাংলাদেশে এদের টিভিতে দেখে মনে করতাম, এরা বুঝি কেবলই ছোট ছোট কাপড় পরে এবং যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়।

কিন্তু বাস্তবতা যে কত বেশি অন্য রকম, সেটাও জানার সুযোগ হলো একজীবনেই। মনিকা বা ইনেদ বা আমার অফিসের আরও সব বিদেশি সহকর্মীরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে, পরিবারের ব্যাপারে কত বেশি যে মনোযোগী, সেটা খুব কাছে থেকে না দেখলে কোনো দিন জানা যাবে না। ইনেদকে বলেছিলাম, আমি সামারের দুই মাস সপ্তাহের কয়েকটা মাত্র দিন কারও বাসায় থাকতে চাই, তেমন বেশি পে করতে পারব না, খুব সামান্যই দেব, কিন্তু আমি একটা থাকার জায়গা খুঁজছি। হাসিমুখে ইনেদ বলে, আমার একটা বেজমেন্ট আছে, তুমি দেখতে পারো।

আমি তো মহাখুশি, এপ্রিল নাগাদ আমি এসে ইনেদের বাসা দেখে গেলাম। কিন্তু বাদ সাধল অন্য জায়গায়। ইনেদ বলে, না লুনা, তুমি আমার গেস্ট, তুমি আমার রুমে থাকবে, কিছুতেই নিচের ঘরে না। এই নিয়ে তুলকালাম, কথা–চালাচালি ফোনে, ৫১ বছর বয়স, ইনেদকে দেখলে মনে হবে ৩৫ বছরের ইয়াং মেয়ে।

এই কথোপকথনের ভেতর দিয়ে ইনেদকে আরও ভালো করে চিনে গেলাম। কিন্তু অন্য জায়গায়ও কিছু হিসাব আছে, তা–ই না বীথি? সবার উপরে একজন আছেন, যারও হিসাব আছে পাকাপাকি।

জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি বুঝতে পারলাম, আমার গাড়িটা অন্তত দুই মাস চালানো বন্ধ রাখতে হবে। আর অফিস থেকে যেহেতু ইনেদের বাসায় আসতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে, তাহলে নিজের বাসায় ফিরে যাওয়াই ভালো।

এ কথা ইনেদকে জানানোর জন্য ফোন করতেই ইনেদ বলে, না লুনা, তুমি আসো, আমি তোমাকে তোমার অফিসে নামানো–ওঠানো করব, তোমাকে বাস ধরতে হবে না। ভাবতে পারিস বীথি? আমার চোখে পানি এসে গেল ওর কথা শুনে।

এই পড়ন্ত অপরূপ সামারের বিকেলে বসে আছি ওর বাসায়, আমাকে থাকতে দিয়েছে ওর বেডরুমে, চারপাশ দিয়ে রুপালি আলোয় ভরে যাচ্ছে ঘর। কতখনি আন্তরিক ইনেদ হয়েছে, আমার আতিথেয়তার ব্যাপারে সেটা বলতে আরও কিছু সময় নেব।

আরও পড়ুনবীথি: পর্ব-১৪২৯ মার্চ ২০২৫

কেবল ভাবছি, এ ভালোবাসার প্রপ্তিকে কোথায় রাখব?

আজকে আর না বীথি, লম্বা হয়ে গেল চিঠি। এখান থেকেই আবার লেখা শুরু করব তোকে, কেমন? ল্যাপটপ নিয়ে এসেছি, থাকব বুধবার রাত পর্যন্ত, দেখি এর ভেতরেই আবার লিখব তোকে।

এখন উঠে যাই, ইনেদ আসার আগেই কিছু কাজ সারি—মনে রাখিস, আবার শুরু করব এখান থেকেই। আদর। চলবে...

আরও পড়ুনবীথি: পর্ব-১৬১১ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনবীথি: পর্ব-১৫০২ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি গোলরক্ষক হুগো গাত্তি আর নেই
  • ‘বিসিবি আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে’
  • শিক্ষকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ কতটা যৌক্তিক
  • প্রাণনাশের ভয় নিয়ে পালাতে হয়েছিল, দাবি হাথুরুসিংহের
  • খাল–নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না
  • ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • নোয়াখালীতে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি 
  • নাটোরের শিশুর লাশ উদ্ধারের মামলায় পাঁচ কিশোর আটক
  • কৃষি পরিবারের বউ হয়ে এসেছিলেন, হয়েছেন দেশসেরা কৃষক
  • বীথি: পর্ব ১৭