প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতিতে আমূল পরিবর্তন দেখে অনেকেই মনে করছেন, তিনি দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকাকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ করতে চান। এখন ধারণা করা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া মিলে বিশ্বকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে, যেমনটি ১৯৪৫ সালের ইয়াল্টা সম্মেলনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ীরা করেছিল। ট্রাম্প আমেরিকার ৮০ বছরের পুরোনো নিয়ম ও আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ধরে রাখার অঙ্গীকার থেকে সরে আসছেন, ফলে বিশ্ব আবার সেই যুগে ফিরে যাচ্ছে, যেখানে শক্তিই শেষ কথা বলে।

তবে এর মানে এই নয় যে ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চান বা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রতি গভীর প্রশংসা প্রকাশ করেন। তদুপরি ধরে নেওয়া উচিত নয় যে পুতিন ও সি আমেরিকার প্রতি কখনোই পুরোপুরি আস্থাশীল হবেন, এমনকি যদি তঁারা ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়েও তোলেন। 

বর্তমান পরিস্থিতিকে বোঝানোর জন্য আরও ভালো একটি উপায় হতে পারে এই যে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকছেন না, যতটা না তিনি ইউরোপের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে এবং সম্ভব হলে পুরো আটলান্টিক জোট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চান। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন একটি প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্র সমান অধিকার ভোগ করে, যা ট্রাম্পের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মেলে না। 

ট্রাম্প মনে করেন যে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতি আমেরিকার দায়বদ্ধতা তার দেশের জন্য একধরনের ব্যয়বহুল বাধা। তাঁর বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্র যদি আন্তর্জাতিক আইন, নিয়ম ও প্রতিশ্রুতি পরিহার করতে পারে, তাহলে এককভাবেই বিশ্বকে শাসন করতে পারবে। এই নতুন বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামরিক সংঘাতে পরিণত না–ও হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও আর্থিক আধিপত্যের জন্য একধরনের যুদ্ধের রূপ নেবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন কৌশল ইউরোপের জন্য গভীর প্রভাব ফেলবে। আমেরিকার সরে যাওয়ার ফলে ইউরোপে এক ধরনের ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হবে, যা ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্প মনে করেন তিনি ইউরোপ থেকে নিজেকে মুক্ত করেছেন, কিন্তু রাশিয়া ও চীন তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে এবং তারা এই ভাঙনকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত।

বিরোধপূর্ণ হলেও, যখন বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারকেন্দ্র ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চল থেকে ইন্দো-প্যাসিফিকে স্থানান্তরিত হয়েছে, তখনো ইউরোপ আবারও বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপের ভূরাজনৈতিক প্রভাব হয়তো এখনো ততটা শক্তিশালী নয়, তবে এর মানে এই নয় যে ইউরোপের দেশগুলো ও প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দুর্বল অবস্থানে থাকবে। 

জার্মানি ইউরোপকে আরও সহায়তা করতে পারে কেবল সামরিক শক্তি বাড়িয়েই নয়, কূটনৈতিক সংলাপের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে। সামরিক শক্তি এবং সংলাপের জন্য উন্মুক্ততা—এই দুই দিক একসঙ্গে মিলেই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে। ইউরোপের শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণ ইউরোপীয়দের হাতেই।

ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ঘোষিত ‘ইচ্ছুকদের জোট’ একটি বড় পদক্ষেপ, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর পথে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই উদ্যোগে ইইউর বাইরের সদস্যরাও রয়েছে এবং এটি ইইউর পরিবর্তে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য (প্রত্যেকেই পারমাণবিক শক্তিধর) নেতৃত্ব ধরে রাখলে, এই জোট একটি অস্থায়ী নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করতে পারে, যা ভবিষ্যতে একটি ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ইউনিয়ন গড়ে তোলার জন্য কাজ করবে। এতে জার্মানি, পোল্যান্ড ও ইতালিকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই পরিষদ সদস্যপদের প্রশ্ন নির্ধারণের পাশাপাশি ইইউ ও ন্যাটোর সঙ্গে জোটের সম্পর্ক কী হবে, তা স্পষ্ট করতে পারবে। 

এ ছাড়া ইউরোপকে দক্ষিণের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নত করতে হবে। বিপরীতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থেকে পিছিয়ে গিয়ে কেবল সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সম্পদ ব্যয় করা ইউরোপের জন্য বিপজ্জনক হবে। কারণ, এটি সেই প্রতিযোগিতামূলক বৈশ্বিক পরিবেশকে আরও তীব্র করবে, যা ইউরোপ এড়িয়ে যেতে চাইছে। 

এই প্রচেষ্টায় জার্মানির ভূমিকা কেন্দ্রীয় হবে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি ইউরোপের ব্যাপারে মনোযোগ হারিয়ে নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোতেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। তবে এখন সেই বিপজ্জনক অবস্থান অতীত হতে চলেছে।

নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বিশ্বকে একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন: জার্মানি আবারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ফিরছে এবং এবার এটি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ফিরে আসছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও অবকাঠামো শক্তিশালী করতে যে বিশাল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা প্রমাণ করে যে এটি শুধু কথার কথা নয়। মের্ৎস বুঝতে পেরেছেন, ইউরোপমুখী সফল জার্মান নীতির জন্য একটি শক্তিশালী ও গতিশীল অর্থনীতি অপরিহার্য। 

মের্ৎস ও তাঁর ভবিষ্যৎ জোটসঙ্গী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বুঝতে পেরেছেন যে ইউরোপের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে জার্মানির নেতৃত্বে ইউরোপীয় সংহতি জোরদার করার ওপর। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও এটি উপলব্ধি করেছেন এবং তিনি ইতিমধ্যে নতুন জার্মান নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। 

তবে জার্মানি ইউরোপকে আরও সহায়তা করতে পারে কেবল সামরিক শক্তি বাড়িয়েই নয়, কূটনৈতিক সংলাপের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে। সামরিক শক্তি এবং সংলাপের জন্য উন্মুক্ততা—এই দুই দিক একসঙ্গে মিলেই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে। ইউরোপের শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ এখন সম্পূর্ণ ইউরোপীয়দের হাতেই।

সিগমার গ্যাব্রিয়েল আটলান্টিক-ব্রুকের চেয়ারম্যান ও জার্মানির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর 

পিটার আইটেল জার্মানির এফটিআই কনসাল্টিংয়ে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শ বিভাগের সিনিয়র পরিচালক


স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক র প র জন য ইউর প র অবস থ ন ইউর প য

এছাড়াও পড়ুন:

স্কুলের ধ্বংসস্তূপে সন্তানদের নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা

গোলাপী-নীল-কমলা রঙের স্কুলব্যাগগুলো পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। চূর্ণ-বিচূর্ণ ইটের সঙ্গে মিশে গেছে ভাঙা চেয়ার, টেবিল। স্পাইডারম্যান খেলনা আর অক্ষর সাজানোর বর্ণমালাগুলোও পড়ে আছে। প্রায় ১৫টি শিশুর স্কুলব্যাগ ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছোট সন্তানদের খুঁজছেন, নাম ধরে ডাকছেন অসহায় বাবা-মায়েরা। কাঁদতে কাঁদতে রাত পর্যন্ত সন্তানদের নাম ধরে ডাকতে দেখা যাচ্ছে। তিন দিন পর সোমবার ঘটনাস্থলটি নীরব। স্থানীয় লোকদের মুখে শোকের ছাপ। 

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে বিধ্স্ত একটি প্রাক প্রাথমিক স্কুলের চিত্র এটি। মান্দালয় থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে কিয়ুকসে শহরটি ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি। 

স্থানীয়রা বলছেন- পুরো শহরের লোকজন উদ্ধার কাজে সাহায্য করতে এসেছিল এই স্কুলে। শুক্রবার বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে। তারা বলছেন, শুক্রবার স্কুলে দুই থেকে সাত বছর বয়সী প্রায় ৭০ জন শিশু আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু এখন ইট, সিমেন্ট ও লোহার রডের স্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ১২ জন শিশু ও একজন শিক্ষক মারা গেছেন। তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস- সংখ্যাটি কমপক্ষে ৪০ জন হবে। সেখানকার বাসিন্দা ও অভিভাবকরা হতাশ।   

৭১ বছর বয়সী কিউয়ে নাইইন স্কুলটির ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। পাঁচ বছর বয়সী নাতনি থেট হটার সানের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার পরিবার। তিনি বলেন, ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সময় সানের মা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি স্কুলে দৌড়ে যান, কিন্তু ভবনটি সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে ছোট্ট শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, আমরা আমাদের প্রিয়জনের মৃতদেহ অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি, এক টুকরো অবস্থায়।’

এমন অবস্থা মিয়ানমারের আরও অনেক জায়গায়। উদ্ধার ও চিকিৎসা তৎপরতা যথেষ্ট  নয। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন। সাহায্যকারী সংস্থাগুলো মিয়ানমারে মানবিক সংকটের আরও অবনতির বিষয়ে সতর্ক করছে। হাসপাতালগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মান্দালয় থেকে বিবিসি বার্মিজের রিপোর্টার হতেত নাইং জাও-এর বক্তব্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এটি এলাকা দেখেছি যেখানে একটি ভবন ছিল যা সরকারি কর্মচারীদের আবাসিক এলাকা। পুরো নিচতলাটি ধসে পড়েছে, যার উপরে আরও তিনটি তলা এখনও দাঁড়িয়ে। ধ্বংসস্তূপে রক্তের দাগ। তীব্র দুর্গন্ধ থেকে বোঝা যাচ্ছিল, সেখানে অনেক লোক মারা গেছে, কিন্তু উদ্ধার কাজের কোনো চিহ্ন নেই। একদল পুলিশ আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীর জিনিসপত্র ট্রাকে ভরছিল। মনে হচ্ছিল, তারা এখনও ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র উদ্ধার করার চেষ্টা করছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার আমাদের সাক্ষাৎকার দেননি, যদিও কিছুক্ষণের জন্য ভিডিও করার অনুমতি দিয়েছিল। আমরা স্থানীয় লোকদের শোকাহত ও নিশ্চুপ অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলাম। সামরিক সরকারের ভয়ে তারা মিডিয়ার সঙ্গে হয়তো কথা বলতে চাইছিল না।

হতেত নাইং জাও বলেন, আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল। ধ্বংসস্তূপের নিচে কতজন লোক থাকতে পারে? তাদের মধ্যে কেউ কি এখনও বেঁচে থাকতে পারে? কেন কোনো উদ্ধারকাজ করা হয়নি, এমনকি মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়নি?

মিয়ানমারের রাজধানীর একটি হাসপাতালের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি, যা এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। 
ওই হাসপাতালের জরুরি কক্ষের ছাদ ভেঙে পড়েছে। প্রবেশপথে, ইংরেজিতে ‘জরুরি বিভাগ"’ লেখা একটি সাইনবোর্ড মাটিতে পড়েছিল। বাইরে ছয়টি সামরিক চিকিৎসা ট্রাক এবং বেশ কয়েকটি তাঁবু ছিল, যেখানে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তীব্র গরম থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য তাঁবুগুলোতে পানি ছিটানো হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, সেখানে প্রায় ২০০ জন আহত ব্যক্তি ছিলেন, যাদের কারও কারও মাথা রক্তাক্ত, কারও কারও হাত-পা ভাঙা ছিল।

হতেত নাইং জাওয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা একজন কর্মকর্তাকে জরুরি অবস্থার সময় কাজে না আসা কর্মীদের তিরস্কার করতে দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম লোকটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. থেট খাইং উইন। এক সাক্ষাৎকারের জন্য তার কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি সাক্ষাৎকারের অনুরোধে তিনি সাড়া দেননি। শহরে ঢোকার পথে, মহাসড়কের কেন্দ্রীয় রিজার্ভেশনে গাছের নিচে মানুষ দলবেঁধে বসেছিল প্রচণ্ড রোদ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার জন্য। এটা বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম সময়। তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু আফটারশকের (ভূকম্প পরবর্তী কম্পন) কারণে তারা ভবনের ভেতরে থাকতে ভয় পাচ্ছিল।

প্রতিবেদক বলেন, আমরা রোববার ভোর ৪টায় ইয়াঙ্গুন থেকে ভূমিকম্প অঞ্চলে যাত্রা শুরু করেছিলাম যা মান্দালয় থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। রাস্তায় আলো ছিল না। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় গাড়ি চালানোর পর আমরা কমলা রঙের পোশাক পরা প্রায় ২০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দলকে দেখতে পেলাম, যাদের জ্যাকেটের ওপর লোগো ছিল যাতে লেখা- তারা হংকং থেকে এসেছেন। আমরা উত্তর দিকে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় ফাটল দেখতে শুরু করি।

সাধারণত এই রুটে বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্ট থাকে, কিন্তু আমরা ১৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি চেকপয়েন্ট দেখতে পাই। একজন পুলিশ অফিসার আমাদের জানান, ভাঙা সেতুর কারণে সামনের রাস্তা বন্ধ। তিনি আমাদের একটি বিকল্প পথ দেখিয়ে দিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, রোববার রাতের মধ্যে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে পৌঁছাব। কিন্তু সেই পথ ও গরমে আমাদের গাড়ির সমস্যা হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। একদিন পর, আমরা অবশেষে শহরে পৌঁছে যাই। শহরটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে আছে, রাস্তার বাতি জ্বলছে না। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই। সকাল হলে এখানে কী পাব তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ