খুলনার কয়রা উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নামে ইফতার মাহফিল আয়োজনে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আবদুর রউফের বিরুদ্ধে একই কমিটির সদস্যসচিবসহ একাধিক নেতা-কর্মী এমন অভিযোগ এনেছেন। তবে গোলাম রব্বানী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল শুক্রবার কয়রা উপজেলা পরিষদের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করে কয়রা উপজেলা এনসিপির ব্যানারে ইফতার মাহফিল হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো.

গোলাম রব্বানী। ইফতার মাহফিলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাসহ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।

কয়রা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব এস কে গালিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়রায় এখনো এনসিপির কমিটি নেই। আমরা চেষ্টা করছি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দলে সংগঠিত করতে। কিন্তু হঠাৎ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা বলে গোলাম রব্বানী ও তাঁর অনুসারী আবদুর রউফ নামের একজন মিলে চাঁদাবাজির মাধ্যমে ইফতারের আয়োজন করে আমাদের বিব্রত করেছেন। এ চাঁদা দেওয়ার তালিকায় যেমন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ছিলেন, তেমনি অনেক সরকারি কর্মকর্তাকেও দিতে হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়ায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তাঁর সঙ্গে সব সময় থাকেন আবদুর রউফ নামের একজন আমার কাছে এসে নাগরিক পার্টির ইফতারের কথা বললে আমি ১০ হাজার টাকা দিয়েছি।’

কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আমার কাছে গোলাম রব্বানী, রউফসহ কয়েকজন এসে ইফতার আয়োজনের জন্য ৫০ হাজার টাকা চান। তাঁরা বলেছিলেন, আমি যেন ইফতারির জন্য পুরো মাংস কেনার টাকাটা দিই। তবে আমি পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এনসিপি কয়রার মূল সংগঠকেরা এর সঙ্গে নেই।’

কয়রায় জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের দাওয়াতপত্রে লেখা ছিল, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কয়রা এর পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল। উক্ত ইফতার মাহফিলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।’ দাওয়াতপত্রে কারও নাম না থাকলেও যোগাযোগের জন্য দুটি নম্বর লেখা ছিল। নম্বর দুটিতে কল করলে একটিতে কথা হয় মো. গোলাম রব্বানীর সঙ্গে, অপরটিতে কথা হয় আবদুর রউফের সঙ্গে।

চাঁদাবাজির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে কয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হিতাকাঙ্ক্ষী এবং নিজেদের অর্থে ইফতারের খরচ চালানো হয়েছে। আমাদের ভালো কাজগুলো দেখে দলের মধ্যে অনেকের হিংসা হয়। তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যাচার করছেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার মুখ্য সংগঠক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের আগে ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থেকেছি। আর গোলাম রব্বানী এক দিনও আন্দোলনে না গিয়ে ঘরে বসে আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন। এ কারণে দলের জন্য তাঁর কোনো মায়া নেই। ইফতার মাহফিলের বিষয়ে আমাদের সঙ্গেও আলাপ করেনি। আমি নিজে ইফতারের টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেছেন, এসব করতে গেলে একটু-আধটু চাঁদাবাজি করতে হয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলার উপদেষ্টা সাহারুল ইসলামের অভিযোগও একই। তিনি বলেন, ‘দলের কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গোলাম রব্বানী নিজের ক্রেডিট জাহির করতে এবং তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী আবদুর রউফকে আগামীতে নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে আনতে এমন কাজ করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে চাঁদাবাজি করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আমরাও বিব্রত।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনে আহত আলতাফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি আন্দোলনের সময় আহত হই। নাগরিক পার্টির হয়ে কাজ করছি। নাগরিক পার্টির ইফতার মাহফিল হয়েছে অথচ আমি জানি না।’

কয়রা উপজেলার এনসিপি কর্মী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাঁরা মূলত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে এ কাজ করেছেন। আর ভয় দেখিয়ে চাঁদা তুলে ব্যানারকে কলঙ্কিত করাসহ নিজেরা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির সেটআপই নতুন দল এনসিপির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এখনো খুলনা জেলা কমিটি গঠন হয়নি। উপজেলা কমিটির তো প্রশ্নই আসে না। ইফতার ইস্যুতে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঠিক নয়। আমরা খতিয়ে দেখব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম রব ব ন আবদ র রউফ এনস প র উপজ ল র ইফত র র কর ছ ন র জন য আম দ র র কয়র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

৯ মাসে মতিন স্পিনিংয়ের ৬৫০ কোটি টাকা ব্যবসা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬৫০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি মতিন স্পিনিং। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ব্যবসা করেছিল ৫৫৭ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ডিবিএল গ্রুপের সহযোগী এই কোম্পানির ব্যবসা বেড়েছে ৯৩ কোটি টাকার বা প্রায় ১৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুনাফাও।

মতিন স্পিনিং গতকাল রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তাদের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-মার্চ) আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে গত শনিবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে মার্চ—এই ৯ মাসে কোম্পানিটি ৩৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তাতে এটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ৬৬ পয়সায়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে মতিন স্পিনিং মুনাফা করেছিল ১৫ কোটি টাকা। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২১ কোটি টাকা বা ১৪০ শতাংশ।

মুনাফায় ভালো প্রবৃদ্ধির বিষয়ে মতিন স্পিনিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের বছরগুলোর তুলনায় কারখানার বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো ছিল। সে কারণে আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার ভালোভাবে করতে পেরেছি। আবার পণ্য বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে ভালো মূল্য সংযোজন হয় এ রকম পণ্য উৎপাদনে গিয়েছি। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ যাতে না বাড়ে, সেই ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম। এসব পদক্ষেপের কারণে আমরা ভালো মুনাফা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে, তবে আমরা ব্যবসা ও মুনাফা প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’

পণ্য বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে ভালো মূল্য সংযোজন হয় এ রকম পণ্য উৎপাদনে গিয়েছি। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ যাতে না বাড়ে, সেই ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলাম। এসব পদক্ষেপের কারণে আমরা ভালো মুনাফা করতে পেরেছিএম এ জব্বার, এমডি, মতিন স্পিনিং

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানিটির ব্যবসা যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে মুনাফা। যার বড় কারণ কাঁচামালের খরচ তুলনামূলক কম ছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৫৫৭ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ হয়েছিল ৫০৬ কোটি টাকা। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা করতে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ হয় ৫৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ৯৩ কোটি টাকার। তার বিপরীতে একই সময়ের ব্যবধানে কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে ৪১ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ। এ ছাড়া প্রশাসনিক ও উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ খরচও খুব বেশি বাড়েনি। তাতে গত জুলাই-মার্চ সময়কালে মতিন স্পিনিংয়ের পরিচালন মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৪৮ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের তিন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করেছে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। বাকি দুই প্রান্তিকের প্রতিটিতে মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০ কোটি টাকার ঘরে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা বেশি করলেও গত তিন প্রান্তিকের মধ্যে কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে যখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া হিমশিম ছিল, তখন কোম্পানিটি ২২৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। বাকি দুই প্রান্তিকের মধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ২২১ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ২০৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। তাতে সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির ব্যবসা দাঁড়ায় ৬৫০ কোটি টাকায়।

এদিকে মুনাফা বাড়লেও গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। সার্বিকভাবে বাজারে দরপতন চলতে থাকায় তাতে মতিন স্পিনিংয়ের শেয়ারের দামও কমে যায়। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় পৌনে ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ টাকা ৫০ পয়সায়। গত ৫ মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ১৩ টাকা বা ২২ শতাংশের বেশি কমেছে। গত ১৭ নভেম্বর এটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫৭ টাকা ২০ পয়সা। গতকাল তা সাড়ে ৪৪ টাকায় নেমে আসে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ