কালকিনিতে ফাঁদ পেতে কুমির ধরার পর পিটিয়ে হত্যা
Published: 29th, March 2025 GMT
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় একটি খালে কুমির দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে স্থানীয় জেলেদের সহযোগিতায় ফাঁদ পেতে কুমিরটি জালে আটকে ফেলা হয়। পরে কুমিরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে উৎসুক জনতা।
আজ শনিবার বেলা ১টার দিকে উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের নতুন আন্ডারচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কুমিরটি প্রায় আট ফুট লম্বা ও দুই ফুট প্রস্থ।
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালের মধ্যে একটি কুমির দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন কুমিরটি ধরেন। পরে তাঁরা পিটিয়ে কুমিরটি হত্যা করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের টিম পাঠানো হয়েছে। মৃত কুমিরটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বন বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার পালরদী নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদে কিছুদিন ধরে একটি কুমির দেখতে পান স্থানীয় লোকজন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনও মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে। এরপর সতর্ক অবস্থানে থাকেন বাসিন্দারা। আজ সকালে উপজেলার নতুন আন্ডারচরের পালরদী নদীর সংযোগ খালে কুমির দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। পরে জেলেদের সহযোগিতা নিয়ে ওই খালে ফাঁদ পাতে ওই কুমিরটি আটকে ফেলা হয়। পরে রশি দিয়ে বেঁধে সমতল ভূমিতে কুমিরটি আনা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে সেখানে ভিড় জমান স্থানীয় লোকজন। একপর্যায়ে কুমিরটিকে তাঁরা পিটিয়ে হত্যা করেন।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘কুমির আটকের খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজনকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসনও যায়। উৎসুক জনতা কুমিরকে পিটিয়ে মেরে ফেলছে। কিন্তু বন্য প্রাণী হত্যা করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। মৃত কুমিররের দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করে বন বিভাগ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
মাদারীপুর বন্য প্রাণী সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কুমির দেশে এখন বিলুপ্তি প্রায়। এই প্রাণীটি মাদারীপুরের নদ–নদীতে দেখা যায় না। ধারণা করা হচ্ছে, কুমিরটি সুন্দরবন থেকে বিভিন্ন নদ নদী হয়ে মাদারীপুরে আসতে পারে। কুমিরটি ধরার পরে জীবিত উদ্ধার করতে আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু স্থানীয় উৎসুক জনতা কুমিরটি পিটিয়ে মেরে ফেলে। এ ঘটনায় প্রাণিকুলের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে সচেতনতার অভাবের দিকেও ইঙ্গিত করে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স থ ন য় ল কজন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে সরকারি পুকুরের মাছ ধরে নিলেন বিএনপি নেতা
জামালপুরে সরকারি একটি পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে গেছেন বিএনপির এক নেতা। আজ শনিবার ভোরে শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় প্রাঙ্গণের পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা ঘটে।
ওই নেতার নাম এস এম আপেল মাহমুদ। তিনি জামালপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা।
পাউবোর জামালপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ ভোরে আপেল মাহমুদ জেলেসহ ১০ থেকে ১২ জন লোক নিয়ে এসে পাউবোর পুকুরে জাল দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পাউবোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুকুর পাড়ে গিয়ে তাঁকে মাছ ধরতে নিষেধ করেন। কিন্তু ওই নেতা তাঁদের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) বিভিন্নভাবে শাসান। পরে পাউবোর কর্মকর্তারা ৯৯৯–এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ওই নেতা মাছ ধরে নিয়ে যান।
ঘটনাস্থলে যাওয়া জামালপুর সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আশরাফ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে দেখেন মাছ ধরা শেষ। জাল ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তখন ভ্যান থেকে তাঁরা জাল নামান। পরে পাউবোর কয়েকজন কর্মকর্তার সম্মতিতে জাল ফেরত দেওয়া হয়। পাউবোর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাউবোর জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস আগে পুকুরে মাছের পোনা ছাড়া হয়েছিল। মাছ তেমন একটা বড়ও হয়নি। হঠাৎ সকালে অফিস থেকে জানানো হয়, আপেল নামের ওই ব্যক্তি পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরছেন। পরে উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন পুকুর পাড়ে যান। কিন্তু এর আগেই তাঁরা মাছ ধরে নিয়ে গেছেন। তখন পুকুর পাড়ে ওই নেতা ও তাঁর লোকজন ছিলেন। তিনি (আপেল) শফিকুল ইসলামকে নানাভাবে হুমকিও দেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তাঁরা বিএনপির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম আপেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই জায়গায় আমি মাছ ছাড়ছি। সরকারি পুকুরে আমি মাছ অবমুক্ত করছি। মাছ ধরা ও ছাড়া নিয়ে তো কোনো সমস্যা নেই। আপনি (প্রতিবেদক) আমাকে ফোন করছেন কেন?’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, বিএনপির দু–একজন কর্মীর অপকর্মের দায় বিএনপি নেবে না। অপকর্মের দায় তাঁকেই বহন করতে হবে। অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।