বাসের বেপরোয়া গতি কেড়ে নেয় তিন সহোদরের প্রাণ
Published: 29th, March 2025 GMT
তিন সহোদর ভাইয়ের নিথর দেহের পাশে পড়ে আছে ঈদের রঙিন পোশাক। রক্তে ভিজে রং পরিবর্তন হয়েছে পোশাকের। চারদিকে স্বজনদের আহাজারি। তিন সদস্যকে হারিয়ে পরিবারের ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে।
এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সোনার বাংলা এলাকায়। শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় পাথরঘাটা থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার টিকিকাটা ইউনিয়নের বাইশকুরা এলাকার নাসির খানের ছেলে নাঈমুজ্জামান শুভ (২২), শান্ত (১৪) ও নাদিম (৮)।
স্থানীয়রা তিন সহোদরকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা।
স্বজনরা জানান, ঢাকার শাসা গার্মেন্টসে চাকরি করেন শুভর খালাতো ভাই রাকিব। তিনি এক সহকর্মীর মাধ্যমে বাবা-মায়ের জন্য ঈদের পোশাক পাঠান শুভর কাছে। সেই পোশাক খালা-খালুর কাছে পৌঁছে দিতে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন শুভ ও তার দুই ভাই। পথে পাথরঘাটার সোনার বাংলা এলাকায় রাজিব পরিবহনের বাসের চাপায় তিন ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাসের বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সোনার বাংলা এলাকার বাসিন্দা আল আমিন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, রাজীব পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৭৪৮৬) গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে আসছিল পাথরঘাটা থেকে। বিপরীত দিক থেকে একটি মোটরসাইকেলে আসছিল তিন ভাই। বাসটি হঠাৎ করে উল্টো পাশে গিয়ে মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলের আরোহী তিন ভাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এর আগে নাসির খান ও শিউলি বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। এখন বাসচাপায় গেল বাকি তিন সন্তানের প্রাণ। সন্তান হারানোর শোকে বার বার চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন নাসির খান ও শিউলি বেগম।
নিহতদের মামা ওয়াহিদুর রহমান বলেছেন, ঈদের জন্য নতুন রঙিন পোশাক দিতে এসে সাদা পোশাকে জড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে গেলাম তিন ভাগিনাকে। বিচার চেয়ে কী হবে! তারা তো ঠিকই পার পেয়ে যাবে। সামান্য কিছু জরিমানা, এরপর মুক্ত। আবার তারা অন্য কেউকে চাপা দিয়ে মারবে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান রাইজিংবিডিকে বলেছেন, বাসের সুপারভাইজার সবুজ হাওলাদার ও চালকের সহকারী সোহেল সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাসচালককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এই ঘটনায় নিহতদের মামা ওয়াহিদুর রহমান বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে পাথরঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ঢাকা/ইমরান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করেই রোগীর পেট সেলাইয়ের অভিযোগ
পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যান শিল্পী বেগম। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। ৫০ হাজার টাকা চুক্তিতে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন রোগী। পরে তাঁর পেট কেটে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন না করে সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে ভৈরবের মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে।
ভুক্তভোগী নারী নরসিংদীর পটিয়া গ্রামের দারোগা বাড়ির প্রবাসী মাসুম মিয়ার স্ত্রী। প্রচণ্ড পেটে ব্যথা নিয়ে গত বুধবার সকালে ভর্তি হন ভৈরব পৌর শহরের নিউটাউন মোড় এলাকার মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ক্লিনিক থেকে জানানো হয় তাঁর পেটে টিউমার রয়েছে। এটি বেশি জটিল হয়ে গেছে দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শিল্পী বেগমের পেটে অস্ত্রোপচার শুরু হয়, কিন্তু শেষ না করেই চিকিৎসক তাঁর পেট সেলাই করে বেডে স্থানান্তর করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে এখন ব্যথায় কাতরাচ্ছেন শিল্পী বেগম।
শিল্পী বেগম জানান, তাঁর পেটে ব্যথা অনুভব হলে নরসিংদীর একটি হাসপাতাল থেকে ইনজেকশন নিয়ে ব্যথা কমিয়ে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারে যান। চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করে জানান রোগ বেশি জটিল, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচার শুরু করে বুঝতে পারেন তারা পারবেন না। পরে পেট সেলাই করে বলে দেন দুই-এক মাস বাসায় থেকে একটু সুস্থ হয়ে ঢাকায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে তাঁর স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে চিকিৎসাটা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তারা। এর আগে ভুল স্বীকার করতে চাননি।
রোগীর মেয়ে তানজিনা বলেন, ‘অপারেশন করে রোগী যদি ভালো নাই করা যাবে তাহলে তা করা হলো কেন? অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করার পর আমাদের বলা হয় বাসায় নিয়ে যেতে এবং দুই-এক মাস বাসায় রেখে কিছুটা সুস্থ করে অন্য জায়গায় গিয়ে অপারেশন করাতে। পরে আমাদের চাপে এই হাসপাতালে আরও কয়েকদিন চিকিৎসা দিয়ে কিছুটা সুস্থ করে কয়েক মাস পর অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে সহযোগিতা করবেন বলে একটি লিখিত দিয়েছেন হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।’ তাঁর প্রশ্ন, এ হাসপাতালের চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার নাই করতে পারবেন তাহলে কেন রোগীকে ধরল? তারা যা করেছেন তা সম্পূর্ণ অন্যায়। এর কারণে যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর মায়ের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে তার দায়-দায়িত্ব এই হাসপাতালকেই নিতে হবে।
হাসপাতালটির মালিক ডা. একেএম জাহাঙ্গীর আলম। শিল্পী বেগমের অস্ত্রোপচারও শুরু করেন তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে তাঁর ভাষ্য, পেট কাটার পর দেখা যায় টিউমারের সঙ্গে পেটের ভেতরের অন্যান্য অঙ্গ পেঁচিয়ে রয়েছে, যার কারণে অস্ত্রোপচার করেননি তারা। যদি তারা অস্ত্রোপচার করতেন তাহলে রোগী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকত। তাই ঝুঁকি নেননি তারা। পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে যেকোনো হাসপাতালে এই রোগীর অস্ত্রোপচার করা হলে তাদের হাসপাতাল থেকে রোগীকে সহযোগিতা করা হবে।
চিকিৎসকরা রোগীর অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে যদি বড় ধরনের সমস্যা পান তবে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর। তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে অপারেশন করতে গিয়ে কোনো গাফিলতি আছে কিনা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে কোনো অবহেলা ছিল কিনা। বিশেষ করে রোগী ও তাঁর স্বজনরা যদি তাঁর কাছে অথবা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অভিযোগ করেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালটির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, তাঁর জানা মতে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে। তারপরও রোববার (আজ) খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।