মিয়ানমারে গতকাল শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর চারদিকে শুধু সাহায্য চেয়ে মানুষের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। এমনটাই বলেছেন মান্দালয় শহরের এক উদ্ধারকর্মী। তিনি বলেছেন, ভূমিকম্পের পরপরই তিনি লোকজনকে সাহায্য করতে খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরানো শুরু করেছিলেন।

ভূমিকম্পের পরপরই স্থানীয় যেসব বাসিন্দা দুর্গত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন, ওই ব্যক্তি তাঁদেরই একজন। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাহায্য করুন’, ‘আমাকে সাহায্য করুন’ বলে লোকজন চিৎকার করছিলেন। তখন তাঁর নিজের কাছে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল।

একটি ধসে পড়া হোটেল থেকে বেঁচে বের হতে পারা আরেক নারী বলেন, তিনি ভেতরে আটকা পড়া লোকজনের চিৎকার শুনেছেন।

পেশায় শিক্ষক ওই নারী বলেন, ‘আমি শুনতে পাচ্ছিলাম মায়েরা কাঁদছেন। কারণ, তাঁদের সন্তানেরা তখনো ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। এটা দেখাও ভয়ানক অভিজ্ঞতা। এই ভূমিকম্প সম্পূর্ণ বিপর্যয়কর ছিল। আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

যদিও সেখানে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া বেশ কঠিন। ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে।

মান্দালয়ে ভূমিকম্পে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধারকাজ চলছে। ২৯ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স হ য য কর ভ ম কম প

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে

আমার ছেলেবেলায় পয়লা বৈশাখের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল কেনাকাটা। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বাবা আর কাকার সঙ্গে ‘এটা কিনে দাও, সেটা কিনে দাও’ বলে দেনদরবার চলত। এখনো বাড়িতে কেনাকাটার রীতি আছে। তবে এখন আর জোর করার প্রয়োজন হয় না। উল্টো যদি বলি, ‘লাগবে না, সেদিনই না কিনলাম’ বাবা রাগ করেন, শোনেন না। এবারও বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বললেন, ‘কিছু কিনে নিও।’

পরপরই ফোনে মা আর বোনের হুমকি, ‘কিনে ছবি পাঠাবি। না কিনলে কিন্তু খবর আছে!’

বাড়ির একেবারে কাছেই বড় বটগাছটার নিচে বেশ কয়েকটা দোকান ছিল। একই পাড়ায় আমরা যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম, অনেকেই দলবেঁধে বটগাছের নিচে ক্রিকেট, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলতাম। সংগত কারণেই দোকানি কাকুরা আমাদের চিনতেন। পয়লা বৈশাখের দিন কোনো না কোনো দোকানে হালখাতা থাকতই। দোকানের সামনের দিকটা রঙিন কাগজ আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। নববর্ষের দিন সকালে দলবেঁধে দোকান সাজানোর কাজ করতাম। বিকেলে বন্ধুরা মিলে মেলায় যেতাম। নাগরদোলা, গানবাজনা, ম্যাজিক শো—কত–কী যে থাকত, গেলেই প্রাণ জুড়িয়ে যেত।

বন্ধুরা মিলে একবার ঠিক করলাম, মেলায় আমরাও দোকান দেব। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু দোকান দিতে হলে মেলার আয়োজকদের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিতে হবে, তা ছাড়া দোকান নিতে হলে নির্দিষ্ট টাকাও দিতে হবে। শুরুতেই নিজেদের টিফিনের জমানো টাকা থেকে একটা তহবিল তৈরি করা হলো। কিন্তু অনুমতি?

সেবার মেলার মাতব্বর ছিলেন আমাদের বান্ধবী মৌবনী ভদ্রের কাকা। মৌবনীর সঙ্গে পড়ালেখা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। জানতাম, সে আমাকে ঈর্ষা করে। তাই কথাটা তাকে বলব কি বলব না যখন ভাবছি, তখনই বন্ধুরা এসে নিয়ে গেল মৌবনীর কাছে। শুরুতে যদিও বলেছিল, ‘ছোট্ট পোলাপানের আবার দোকান কি রে!’

কিন্তু পরপরই হেসে বলেছিল, ‘চিন্তা করিস না, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে আমিও তোদের সঙ্গে থাকব। কাজ তেমন কিছু করতে পারব না। শুধু ভাগের টাকাটা দেব, পরে লাভ যা হবে, ভাগ দিবি।’

অগত্যা রাজি হতে হলো। ৫০ শতাংশ ছাড়ে মৌবনীর তরফে জায়গা বরাদ্দ পেলাম আমরা। দোকানের নাম রাখা হলো, ‘দুই দিনের দোকানি’।

আমার নিয়মিত বাজারে যাতায়াত ছিল। বাবার পরিচিত বড় দোকানও ছিল কয়েকটা। মেলার আগের দিন গিয়ে, বিক্রি না হলে ফেরত নেওয়ার শর্তে মালামাল নিয়ে এলাম। দোকানটাকে সবাই মিলে সাজালাম। ঝড়ের দিনে তালগাছ থেকে বাবুই পাখির বাসা নিচে পড়ত। সুমিতের সংগ্রহে ছিল। সুমিত নিয়ে এল। মৌবনী ভালো আঁকতে পারত। সুন্দর পাটির পরে ‘শুভ নববর্ষ/দুই দিনের দোকানির থেকে শুভেচ্ছা নিন’ লিখে দোকানের সামনে টানিয়ে দিল। মেলার ওই দুই দিন সেবার কি যে হইচই আর আনন্দে কেটেছিল, লিখে প্রকাশ করা কঠিন। আমাদের লাভও হয়েছিল। ৪২১ টাকা।

মৌবনী, সুমিত, রুদ্র সবাই কি খুশি! জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে। চোখ বুজে পেছনে ফিরে তাকালে সব স্পষ্ট ভেসে ওঠে। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার মতো প্রবল মায়ায় হৃদয় তখন সিক্ত হয়ে যায়।

আরও পড়ুনগামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠল১৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে