Samakal:
2025-03-31@20:04:09 GMT

জামালের ভবিষ্যৎ কী?

Published: 29th, March 2025 GMT

জামালের ভবিষ্যৎ কী?

ম্যাচের আগের দিন ভারতের বিপক্ষে ছয় বছর আগে করা গোলের ভিডিও নিজের ভেরিফায়েড পেজে শেয়ার করেছিলেন। তাঁর নেওয়া ফ্রি কিক থেকে সাদ উদ্দিনের করা সেই গোলের ভিডিও এবং সুনীল ছেত্রির সঙ্গে লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এমনকি শিলংয়ের পাঁচতারকা হোটেলে ২৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে ভারতকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। 

কিন্তু ২৫ মার্চ জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে শুরুর একাদশে নেই ডেনমার্ক প্রবাসী এ ফুটবলার। সবাই আশায় ছিলেন হয়তো বদলি হিসেবে মাঠে দেখা যাবে তাঁকে। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পাঁচ বদলিতেও ছিলেন না জামাল ভূঁইয়া। ম্যাচ নিয়ে কথার ফুলঝুরি ফোটানো অধিনায়ক জামাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন না। খেলা শেষে বিষণ্ন মনে মাঠ ত্যাগ করা জামাল কারও সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর হৃদয় যে ভেঙেছে, সেটা অনুমেয়। ভারত ম্যাচে সুযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশ দলে জামালের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। লাল-সবুজের জার্সিতে কি সমাপ্তির পথে জামাল অধ্যায়?

২০১৩ সালে প্রথম প্রবাসী হিসেবে বাংলাদেশ দলে অভিষেক জামাল ভূঁইয়ার। সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম তারকা বনে যান এ মিডফিল্ডার। এক সময় তাঁর হাতে ওঠে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। কাগজে কলমে এখনও জাতীয় দলের কাপ্তান তিনি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জামালের পারফরম্যান্সে ভাটার টান। যে কারণে শেষ কয়েকটি ম্যাচে ৫০ কিংবা ৬০ মিনিট পর্যন্ত খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। গত বছর থেকে এই পর্যন্ত ফিফা প্রীতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ বাছাইসহ আটটি ম্যাচ খেলেছেন জামাল। যেখানে পাঁচ ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন না ৩৪ বছর বয়সী এ প্রবাসী। 

জাতীয় দলে এক যুগের ক্যারিয়ারে ৮৭টি ম্যাচ খেলেছেন জামাল। শুরু একাদশে ছিলেন ৭৮ বার। বদলি নেমেছেন চারবার এবং বাকি পাঁচ ম্যাচে ছিলেন বেঞ্চে। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশে তো দূরের কথা, কোচ তাঁকে দেননি প্লেয়িং টাইমও। সংবাদ সম্মেলন থেকে সব জায়গায় কথা বলা জামালকে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে স্প্যানিশ কোচের যুক্তি ছিল এমন, ‘ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলোয়াড়রা বেঞ্চে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার পরিক্রমায় ম্যাচটি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিল, তাতে দৈহিক শক্তি বিবেচনায় রানাকে ব্যবহার করা হয়েছে। জামাল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।’

ক্যাবরেরার অধীনে দেড় বছর ধরে জামাল হয় একাদশে অনিয়মিত কিংবা এক অর্ধ পরে উঠিয়ে নেওয়া হয়। জামাল মাঠে না থাকলে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ওঠে তপু বর্মণের হাতে। ভারত ম্যাচে তপু চোটে পড়ায় নেতৃত্বের ভার উঠেছিল রহমত মিয়ার কাঁধে। কাগজে কলমে অধিনায়ক জামাল যদি পুরো নব্বই মিনিট খেলতে না পারেন, তাহলে তাঁর হাতে আর্মব্যান্ড কেন? এই প্রশ্ন ওঠায় ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিমত এভাবে জামালকে নেতা হিসেবে রাখা উচিত নয়। আবার ভারতের বিপক্ষে জামালকে উপেক্ষিত করে চন্দন রয়ের মতো অনভিজ্ঞ মিডফিল্ডারকে বদলি হিসেবে নামানোয় সমালোচনা হয়েছে ক্যাবরেরার। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কাপ্তান যখন কোচের পরিকল্পনা নেই, তখনই প্রশ্ন উঠেছে, জামাল অধ্যায়ের কি সমাপ্তি?

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল ফ টবল র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো   

লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন  ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়। 

এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি। 

মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত  আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।   

শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই। 
 
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা  প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।  

সম্পর্কিত নিবন্ধ