মোগল বাদশাহদের প্রিয় ‘শির খোরমা’র প্রচলন পুরান ঢাকায় এখনো আছে। ভিন্ন রকমের সে খাবার নিয়ে যদি আগ্রহ না–ও থাকে, তবে ঈদের দিন রসনাবিলাসের বাসনা সবার থাকে। কালিজিরা চালের পোলাও, দেশি মুরগির ঝোল, কয়েক টুকরা বেগুনভাজা আর মিষ্টান্ন হলেও হতো, কিন্তু মানুষের সামর্থ্য, প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন খাবার। তবে নাগরিক জটিলতায় মানুষের সময় ও শ্রমের সংকটও বাড়ছে।
গরম চুলা থেকে কষানো মাংসের ঘ্রাণ ছুটে আসতেই হবে, সেই মাথা কুটে মরা রসনাবিলাস আর সেঁটে নেই ঈদের আয়োজনে। সেই প্রভাবই দেখা যাচ্ছে এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনলাইনের বিভিন্ন খাবারের পেজে। তৈরি খাবার বিক্রি করা উদ্যোক্তারা ঈদের জন্য দিচ্ছেন বিভিন্ন রকমের অফার। রয়েছে ঈদ প্যাকেজ, কম্বো প্যাকেজ, স্পেশাল অফার, উপহার বাক্স অথবা বিশেষায়িত (কাস্টমাইজড) অর্ডার।
হাতে তৈরি খাবারের জন্য সুনাম কুড়ানো বিক্রেতাদের অধিকাংশ নারী, ক্রেতাদেরও অধিকাংশ নারী। ঈদের দিনের জন্য অনলাইনে খাবার কেনার সুযোগ যে কতখানি প্রয়োজন, তার উদাহরণ ধানমন্ডি ১৪ নম্বরের বাসিন্দা আবদুল লতিফ খানের জীবন বাস্তবতা। স্ত্রী প্রয়াত, একমাত্র সন্তান বিদেশে। আবদুল লতিফ খান ঈদের দিনের জন্য খাবারের অর্ডার করেছেন একটি নির্ভরযোগ্য খাবারের পেজে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘এই ব্যবস্থাটা খুবই জরুরি। আমার কথাই ধরুন, একার জন্য এত কিছু ম্যানেজ করা যেত? কয়েকজনের খাবার অর্ডার করে রেখেছি। ঈদের সকালে পৌঁছে যাবে দরজায়।’
খাবার ঈদের সকালে পৌঁছালেও খাবারের অর্ডার দেওয়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঘরে তৈরি খাবারের বিক্রেতারা। তাঁদের প্রস্তুতির ব্যাপার আছে। সম্প্রতি লালমাটিয়ায় শুরু হওয়া ‘বিস্ট্রো অন দ্য গো’ এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার প্রধান শাহানা হুদা রঞ্জনা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছিলাম সেমাই, কাবাব থেকে শুরু করে গরুর মাংসের মতো সব বৈঠকি খাবার ঈদে করে দিতে পারব। এর পর থেকে অর্ডার আসছে। একই খাবার নিজেরাও খাই বলে মানের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন চলে না।’ এখানকার খাবারের জন্য অর্ডার দিয়ে রেখেছেন দিল্লি থেকে দেশে ঈদ করতে আসা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা। খাবার যাবে ঢাকার বাইরে সিঙ্গাপুরেও। তবে বিস্ট্রো অন দ্য গো তাদের সব খাবার ডেলিভারি শেষ করবে ৩০ তারিখের মধ্যে।
অনলাইনে খাবার বিক্রির প্রথম দিকের একটি এনস কিচেনে অর্ডার নেওয়া শেষ হয়েছে ২৮ মার্চ রাতেই। এখান থেকে সর্বনিম্ন দুজনের জন্য খাবার অর্ডার করতে হবে। তারা এনেছে কয়েক রকমের ঈদ প্যাকেজ। ধানমন্ডির আবদুল লতিফ খান এনস কিচেন থেকে ঈদের জন্য সব রকম আইটেমের খাবার নিচ্ছেন।
দুই বছর বয়সী ‘মজার খাবার’–এর প্রধান রাজিয়া আফরিন জানান, তাঁর এখানে চাঁদরাত পর্যন্ত খাবার অর্ডার করা যাবে। আর ‘খাবারবিলাস’–এর আফরোজা আক্তার জানান, গত বছর তিনি মাত্র চারজন নিয়ে ১০০ জনের বেশি মানুষের খাবার পাঠিয়েছেন ঈদে। এবার আরও বাড়বে সংখ্যা।
অনলাইনে ঈদের খাবারের ক্রেতা মগবাজারের বাসিন্দা গৃহিণী ফাহমিন আহমেদ। তিনি এনস কিচেনে অর্ডার করেছেন নবাবি সেমাইসহ কয়েকটি আইটেম। এই ভোক্তা বলেন, সবকিছু একা করে ওঠা সম্ভব হয় না; কিন্তু খেতে সবাই পছন্দ করেন। মূল খাবারের পাশাপাশি এমন কিছু খাবার বাইরে থেকে আনলে বাসার মুরব্বিরাও পছন্দ করেন। নগরের সময় ও শ্রমের এই চেনা-অচেনা সংকটের পাশাপাশি আছে মানবিক দিকও।
শান্তিবাগ মসজিদের পাশের গলিতে থাকেন আফজাল হোসেন নামের এক প্রবীণ দম্পতি। তাঁদের সিডনিপ্রবাসী একমাত্র মেয়ে চেয়েছেন ঈদের দিনে মা-বাবার জন্য বিশেষ কিছু করতে। এই খাবারগুলো ঈদের সকালে পৌঁছে যাবে তাঁর মা-বাবার কাছে। বিশেষ দিনটিতে সেই খাবারের বাক্সে সন্তানের হাতের স্পর্শ না পেলেও হৃদয়ের উত্তাপের কমতি পাবেন না একা হয়ে যাওয়া মা-বাবা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিশেষ বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ
বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চলতি বছর দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালসমূহ সুষ্ঠু ও যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে
এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে নূরজাহান বেগম মন্তব্য করেন, ‘দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি অত্যন্ত প্রকট। তবে আশা করছি, বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০টি হাসপাতাল যৌথভাবে পরিচালনার জন্য রেলপথ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আজ সমঝোতা স্মারক সই হলেও হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। বর্তমানে শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।