ভারত, পাকিস্তানের তুলনায় দেশে স্মার্টফোনের দাম বেশি কেন
Published: 29th, March 2025 GMT
সুপরিচিত একটি স্মার্টফোনের ব্র্যান্ডের একটি মডেলের দাম বাংলাদেশে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ভারতে একই ফোনের দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে ফোনটির দাম ৭৩ হাজার টাকা বেশি।
পাকিস্তানে ফোনটির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে ফোনটি কিনতে ৭৯ হাজার টাকা বেশি দাম দিতে হয়। যদিও বাংলাদেশে অবৈধভাবে আনা একই ফোনের দাম এক লাখ টাকার আশপাশে।
শুধু এই একটি মডেল বা একটি ব্র্যান্ড নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের দাম মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই বেশি। দামের এত পার্থক্যের কারণে একদিকে বিপুলসংখ্যক স্মার্টফোন শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হচ্ছে, অন্যদিকে চড়া দামের কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারে পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশে।
দেশীয় উৎপাদনকারীরা বলছেন, স্মার্টফোনের দাম বেশি হওয়ার কারণ যন্ত্রাংশ আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ ও খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ক–কর। অন্যদিকে আমদানিকারকেরা বলছেন, বিদেশ থেকে একটি স্মার্টফোন আমদানি করতে প্রায় ৫৯ শতাংশ শুল্ক–কর দিতে হয়। উচ্চহারে শুল্ক–করের সুরক্ষা পেয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলো চড়া দাম রাখার সুযোগ পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে পারলে অর্থনীতি ও সুশাসনের ক্ষেত্রে তা নানাভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সরকারের উচিত আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে স্মার্টফোন সাশ্রয়ী করার দিকে নজর দেওয়া। দেশীয় উৎপাদনকারীরা কতটুকু সুরক্ষা পাবে, দেশে উৎপাদিত স্মার্টফোনে কতটা কর থাকবে, এসব নিয়ে পর্যালোচনা হওয়া উচিত। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দামের পার্থক্য কমে এলে অবৈধভাবে মুঠোফোন আনার হার কমবে। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
# স্মার্টফোন আমদানিতে ১০০ টাকায় ৫৯ টাকা কর। # অবৈধ ফোনের বাজার রমরমা। # স্মার্টফোন ব্যবহারে ভারত, পাকিস্তান, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও সেনেগালের পেছনে বাংলাদেশরাজস্ব খাতসংশ্লিষ্ট একটি সরকারি সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে উৎপাদন উৎসাহিত করার জন্য স্মার্টফোন আমদানিতে উচ্চহারে শুল্ক–কর আরোপ করে রাখা হয়েছে। ফলে বৈধ পথে কেউ আমদানি করতে চায় না। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে হবে। তবে সেটা কতকাল, কতটা হারে দেওয়া হবে, তা পর্যালোচনা করা দরকার।
‘অফিশিয়াল’ বনাম ‘আন-অফিশিয়াল’রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোয় সুপরিচিত স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে যে দামে ফোন বিক্রি হয়, তার চেয়ে অনেকটা কম দামে একই ফোন পাওয়া যায় ওই বিক্রয়কেন্দ্রের আশপাশের দোকানেই। ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে যেসব ফোন পাওয়া যায়, সেগুলো ‘অফিশিয়াল’নামে পরিচিত। অন্যদিকে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে বিক্রি হওয়া একই স্মার্টফোন ‘আন-অফিশিয়াল’ নামে পরিচিত।
যেমন জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোনের একটি মাঝারি দামের মডেলের ‘অফিশিয়াল’ ফোনের দাম ৫৭ হাজার টাকা। একই ফোন একই বিপণিবিতানে ‘আন-অফিশিয়াল’ হিসেবে বিক্রি হয় ৩২ হাজার টাকা দামে। ব্যবসায়ীরা জানান, ‘আন-অফিশিয়াল’ ফোন মূলত কর ফাঁকি দিয়ে আনা। এগুলো ‘লাগেজ পার্টি’র ফোন নামেও পরিচিত।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স থেকে সম্প্রতি একটি মাঝারি দামের স্মার্টফোন কিনেছেন ওয়াহিদুজ্জামান নামের এক গ্রাহক। তিনি জানান, ব্র্যান্ডের নিজস্ব দোকানে গিয়ে ফোনটি কেমন, তা তিনি দেখেছেন। পরে কিনেছেন ‘আন-অফিশিয়াল’ ফোন। তিনি বলেন, বিপণিবিতানের একই তলায় একই ফোনের দামের এত পার্থক্য হলে কেন মানুষ ‘অফিশিয়াল’ ফোন কিনবে! ‘অফিশিয়াল’ফোনে যে ‘গ্যারান্টি’ (নিশ্চয়তা), ‘আন-অফিশিয়াল’ ফোনেও সেই একই নিশ্চয়তা দেন বিক্রেতা।
ব্র্যান্ডের নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রে যেসব ফোন পাওয়া যায়, সেগুলো ‘অফিশিয়াল’নামে পরিচিত। অন্যদিকে নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে বিক্রি হওয়া একই স্মার্টফোন ‘আন-অফিশিয়াল’ নামে পরিচিত।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে একটি স্মার্টফোন আমদানিতে করভার প্রায় ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট (মূলসংযোজন কর বা মূসক), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) রয়েছে।
দেশে এখন ১৭টির মতো প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোন উৎপাদন ও সংযোজন করে। তাদের সুরক্ষা দিতেই উচ্চহারে শুল্ক–কর আরোপ করে রাখা হয়েছে। তবে অবৈধ আমদানি কমছে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে অবৈধ পথে আমদানি করা স্মার্টফোন, অর্থাৎ ‘গ্রে মার্কেটের’ আকার মোট বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, গত জানুয়ারিতে বৈধভাবে আমদানি হয়েছে মাত্র ৮৫০টি স্মার্টফোন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ আমদানি ও উৎপাদন বিক্রির ক্ষেত্রে কর কমাতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিতে কর কমিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দামের পার্থক্য কমাতে হবে। নইলে অবৈধ আমদানি কমবে না।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বাজারে একটি স্মার্টফোনের জন্য সরকারকে ৩০ শতাংশের বেশি কর দিতে হয়। উৎপাদিত হয়ে পরিবেশক পর্যন্ত ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কর দিতে হয়। পরবর্তীকালে খুচরা বিক্রেতা থেকে গ্রাহকের হাতে যাওয়া পর্যন্ত ধাপে ধাপে ভ্যাট যুক্ত হয়ে দাম আরও বেড়ে যায়। ভারতে এটা ১৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২৫ শতাংশের বেশি।
রেজওয়ানুল হক বলেন, কর কমালে ফোনের দাম কমবে। সরকারকে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরে কাজ করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, দেশে একটি স্মার্টফোন আমদানিতে করভার প্রায় ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট (মূলসংযোজন কর বা মূসক), ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি), ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এটি) রয়েছে।ব্যবহারে পিছিয়েবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ৭০ শতাংশ পরিবার। যদিও ব্যক্তিপর্যায়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার এখনো অনেক কম।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) গত বছরের অক্টোবরে ‘দ্য স্টেট অব মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। যেখানে ভারতের শহরে ৫২ শতাংশ ও গ্রামের ৪০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের শহরের ৪৬ শতাংশ ও গ্রামের ৩৬ শতাংশ মানুষের স্মার্টফোনের মালিকানা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বের ৪টি অঞ্চলের ১২টি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তথ্য নেওয়া হয়। দেখা যায়, এর মধ্যে স্মার্টফোনের মালিকানায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ৯টি দেশ—মিসর, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, গুয়াতেমালা ও মেক্সিকো। ইথিওপিয়া ও উগান্ডা শুধু বাংলাদেশের পেছনে আছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার কম হওয়ার বড় কারণ, এর দাম। তিনি মনে করেন, ব্যক্তিপর্যায়ে স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়াতে এ ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররা যেন কিস্তিতে ফোন দিতে পারে, সে সুবিধাও চালু করা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক কর শ আমদ ন একই ফ ন পর চ ত উৎপ দ সরক র বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঢেকে রাখা সেই মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরালে শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন ভেঙে ফেলা হলো
লালমনিরহাট শহরের শিশুপার্ক সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিমঞ্চে স্থাপিত ম্যুরালের কিছু অংশ ভেঙে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। ২৬ মার্চ জেলা প্রশাসন ওই ম্যুরালটি কাপড় দিয়ে ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কাপড় দিয়ে ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার না হতেই রোববার জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্বের স্মৃতিচিহ্ন ম্যুরাল ভাঙার কাজে হাত দেয়।
এর আগে শনিবার দুপুুরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মঞ্চে দু’টি পক্ষ একই সময়ে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দুপুর সাড়ে ১১টায় ওই এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করলেও জাতীয় নাগরিক পার্টি করতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ব স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লালমনিরহাট শাখার প্রধান সমন্বয়ক হামিদুর রহমান ম্যুরাল অপসারণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরাতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ‘এই ম্যুরালটি স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বহন করে না। বাকশাল প্রতিষ্ঠাকারী স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরঞ্জিত উপস্থাপন ও ইতিহাস বিকৃতি করায় এর আগেও ১৬ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ম্যুরালটি ঢেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫২, ৭১ এর সকল সত্য ইতিহাস অক্ষুণ্ণ রেখে অতিরঞ্জিত অংশ ও স্বৈরাচারের চিহ্ন ঢেকে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পুরো দেয়াল ঢেকে দেয়, যা অনাকাঙ্খিত। কিছু স্বৈরাচারের দোসর তাদের ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থ উদ্ধার ও বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে জেলা প্রশাসনের কার্যক্রমকে ভুলভাবে প্রচার করতে থাকে এবং বিদ্বেষবশত মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ম্যুরাল ঢেকে দেওয়ার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবগত ছিল না, তাঁরা এমন কোনো দাবিও করে নাই। স্বৈরাচারের সকল চিহ্ন ও ম্যুরাল অপসারণ ছাত্রজনতার দাবি ও গণআকাঙ্খা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিসৌধ এলাকায় যান। সেখানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, ম্যুরালের মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানে যেমন অবদান রয়েছে তেমনি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানেরও অবদান রয়েছে। অথচ ম্যুরালে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। এটা বৈষম্য। এই ম্যুরাল রাখা ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) রাসেল আহমেদ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গেলে তোপের মুখে পড়েন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই ম্যুরালে ৫২ ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, ৭১ এর গণহত্যা, বিজয় উল্লাসে মুক্তিযোদ্ধা, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন ঢেকে দিয়ে চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন জেলা প্রশাসন। পরে তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর দায় চাপিয়েছেন। ৭১ ও ২৪কে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জাতিকে বিভাজিত করে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র চলছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭১ এর অস্তিত্ব ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে অন্যগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো মতানৈক্য নেই।
২৬ মার্চ বুধবার সকালে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দিতে গেলে কাপড় দিয়ে মুরাল ঢেকে রাখার বিষয়টি চোখে পড়ে। সনাক সদস্যরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ফিরে যান। পরে লালমনিরহাট রেলওয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্বাঞ্জলি দেন তাঁরা। গত ১৬ ডিসেম্বরও একই রকম ঘটনা ঘটায় জেলা প্রশাসন। ১৪০ ফুট দীর্ঘ ওই ম্যুরালে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, মুজিবনগর সরকার গঠন, চরমপত্র পাঠ, উদিত সূর্য, ৭১ এর গণহত্যা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানি, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দারের বক্তব্য জানতে তাঁর ফোনে মেসেজ এবং ফোন দিলে কোনো সাড়া মেলেনি।