২২ রান তুলতে শেষ ৭ উইকেট, পাকিস্তানের নাটকীয় হার
Published: 29th, March 2025 GMT
‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তান আবারও সেই পরিচিত রূপে! জয়ের পথে থেকেও হঠাৎ পথ হারানোর ঘটনা তাদের ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ঘটল সেই চেনা কাহিনি। শেষ ২২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ৭৩ রানের ব্যবধানে হেরে গেল পাকিস্তান।
প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেট হারিয়ে তোলে ৩৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ। জবাবে পাকিস্তান মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েই ২৪৯ রান করে ফেলে। শেষ ৬৯ বলে ৭ উইকেট হাতে রেখে প্রয়োজন ছিল ৯৬ রান। তবে সেখান থেকেই ধসে পড়ে পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপ। নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৩৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয় ২৭১ রানে।
টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৫০ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট তুলে নেয় পাকিস্তান, কিন্তু সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। মার্ক চাপম্যান ও ড্যারিল মিচেল গড়েন ১৯৯ রানের রেকর্ড জুটি, যা পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ।
মিচেল ৮৪ বলে ৭৬ রান করে ফিরলেও চাপম্যান ছিলেন দুর্দান্ত। ১৩২ রানের ইনিংসে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান তিনি। শেষ দিকে অভিষিক্ত মুহাম্মদ আব্বাস মাত্র ২৬ বলে ৫২ রানের ক্যামিও খেললে ৩৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় কিউইরা।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে ইরফান খান ৩ উইকেট নিলেও ৫ ওভারে দেন ৫১ রান। দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন আকিফ জাভেদ ও হারিস রউফ। এদিন অতিরিক্ত থেকেই পাকিস্তান দেয় ৪৩ রান, যা আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
৩৪৫ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন উসমান খান ও আবদুল্লাহ শফিক। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮৩ রান। তবে ৮৮ রানের মধ্যেই দুজনই ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে দল। এরপর বাবর আজম ও অধিনায়ক রিজওয়ান মিলে গড়েন ৭৬ রানের জুটি। ১৬৪ রানে রিজওয়ান আউট হলেও পাকিস্তানের জয়ের পথে বড় ধাক্কা ছিল না। বাবরের সঙ্গে ৫৯ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন সালমান আলী আগা।
কিন্তু ২৪৯ রানে বাবর আউট হওয়ার পরই নামে পাকিস্তানের ইনিংসে ধস। শেষ ২২ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রানে অলআউট হয় তারা। শেষ ৬ ব্যাটারের মধ্যে তিনজন শূন্য এবং তিনজন মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
পাকিস্তান তাই জেতার মতো পরিস্থিতিতে থেকেও ম্যাচ হেরে গেল ৭৩ রানের ব্যবধানে। এই হারে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট হ র য় ৭ উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ‘নিজস্ব ঢংয়ের’ ব্যাটিং, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাই এই দশা
সিলেটের আবহাওয়ার নিজস্ব একটা ঢং আছে। কখন রোদ উঠবে, কখন বৃষ্টি নামবে বোঝা কঠিন। সেই সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলও দেখিয়েছে ব্যাটিংয়ের নিজস্ব ঢং। কখন যে কী হবে বোঝা কঠিন!
যখনই কেউ উইকেটে থিতু হয়েছেন, বড় ইনিংস খেলার আশা জাগিয়েছেন; তখনই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন! আর হঠাৎ ব্যাটিং ধস তো সেই কবে থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বাটিংয়ে চিরাচরিত সবকিছুই যখন এভাবে দাড়ি-কমাসহ মিলে যাবে, সেদিন বাংলাদেশের সংগ্রহ বড় না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। হয়েছে সেটাই। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৯১ রানে।
উপহার না দিলে এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আউট করা যে কঠিন, সে তো প্রথম দিনের শেষবেলায় জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। বেনেট ৩৭ বলে ৪০ রানে অপরাজিত, কারেন ৪৯ বলে ১৭ রানে। প্রথম দিনে খেলা হয়েছে ৭৫.১ ওভার, জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ১২৪ রানে।
বাংলাদেশি ঢংয়ের ব্যাটিংয়ের ‘নেতৃত্বে’ ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেনই। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালে নিজের ব্যাটিংয়ের কিছু ভুল তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩০-৪০ রানের ইনিংসগুলোকে কীভাবে বড় করা যায়, সেটি নিয়েই কাজ করেছেন বলেই জানান নাজমুল। এত কিছু বলে বছরের প্রথম টেস্টে সেই একই ভুল! ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কেন এমন শট খেলতে গেলেন, এই যুগে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বরং অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলটি কেন ফিল্ডারের হাতে গেল, সেই প্রশ্ন নিজেকে করতে পারেন নাজমুল। সঙ্গে আর কত দিন ভালো খেলতে খেলতে মনযোগ হারিয়ে এভাবে উইকেট দিয়ে আসবেন, সেটিও!
নাজমুলের বিদায়ে যিনি উইকেটে আসেন, সেই মুশফিকুর রহিম যেভাবে আউট হয়েছেন, তা আরও দৃষ্ট কটু। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার যে বলটিতে আউট হয়েছেন, সেটিতে চার মারার চেয়ে আউট হওয়া কঠিন। মুশফিক কঠিন কাজটাই করেছেন। নিরীহ শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ৪ রান করে।
ক্রিকেটে দিনটা নিজেদের হলে অবিশ্বাস্য কিছুই করেন ব্যাটসম্যানরা। অন্তত বিশ্বমানের ক্রিকেটে সেটাই হয়। তবে আজ মুমিনুল হকের বিষয়টি ছিল অন্যরকম। শূন্য রানে জীবন পেয়েছেন, এজ হয়ে চার পেয়েছেন কয়েকটি। এরপরও ৫৬ রানের বেশি করতে পারেননি। হয়তো বুঝতেই পারেননি, ভাগ্যবিধাতাও তাঁর কাছ থেকে একটা বড় ইনিংস চাইছেন! তাই শেষ পর্যন্ত মাসাকাদজার হাওয়ায় ভাসানো বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন।
কাছাকাছি সময়ে বাউন্সারে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন মুজারাবানি। এই পেসার গতির ঝড় তুলতে না পারলেও সিলেটের উইকেট আর নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বাউন্স ঠিকই আদায় করেছেন। ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলেছেন। তাঁর লাফিয়ে ওঠা বলে অনেকটা অসহায় আত্মসমর্পণ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
দলের ৪ জন মূল ব্যাটসম্যানের এমন হতশ্রী বিদায়ে ব্যাটিং ধস তো হবেই! এরপর তাইজুল ইসলামও যোগ দেন এই তালিকায়। এতে ২ উইকেটে ৯৮ রান করা বাংলাদেশ পরের ৫৬ রান করতে হারায় ৫ উইকেট। ১৪৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে জাকের আলী লড়াইটা না করলে সংগ্রহটা আরও ছোট হতে পারত। সেখান থেকে হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ৪১ রানের জুটি গড়েন জাকের।
সেই জুটি ১৮৭ রানে ভাঙার পর বাংলাদেশ দল আর টিকেছে ৯ বল। যোগ করতে পেরেছে ৪ রান। জাকের আউট হয়েছেন ২৮ রানে। ঘরের মাঠে টেস্টে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়া অনেকটা অভ্যাসে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সর্বশেষ ৮ ইনিংসে এ নিয়ে ছয়বার দুই শর নিচে অলআউট।
মুজারাবানি উইকেট নিয়েছেন ৩ টি। প্রথম দিনে নাহিদ রানার সঙ্গে লড়াইয়ে আপাতত এগিয়েই আছেন এই পেসার। বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজাও।
অথচ তাঁকে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন প্রথম বল দেন ম্যাচের ৩৮ তম ওভারে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে এত এত ‘উপহার’ দেবেন, আরভিনের অবশ্য তা জানার কথা নয়!