ইউনিসেফের ইয়ং লিডারস প্রোগ্রাম, স্নাতক পাস হলেই করুন আবেদন
Published: 29th, March 2025 GMT
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ শিশুদের নিয়ে নানা ধরনের কাজ করে। ভবিষ্যৎ নেতা গঠন-বিষয়ক এক প্রোগ্রাম শুরু করেছে ইউনিসেফ। এ প্রোগ্রামে নাম ইউনিসেপ লিডারশিপ প্রোগ্রোম (তরুণ নেতৃত্ব কর্মসূচি)। বাংলাদেশের তরুণ নেতৃত্বের জন্য এ কর্মসূচিতে গত ৫ মার্চ থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি শুরু হবে আগামী ৪ মে, চলবে ১০ মে পর্যন্ত (ভ্রমণের দিনসহ)।
আবদনের যোগ্যতা—*বাংলাদেশের স্বীকৃত কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি পাস।
*আবেদনকারীদের ইংরেজিতে সাবলীল হতে হবে।
*আবেদনকারীর বয়স ৩০ বছরের কম হতে হবে।
*পেশাদার, জনসাধারণ অথবা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে নেতৃত্বের রেকর্ড থাকতে হবে।
আর্থিক সহায়তা—এ প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ জন অংশগ্রহণকারীকে নির্বাচিত করা হবে। প্রোগ্রামের জন্য নির্বাচিতরা আর্থিক সহায়তা পাবেন। এ আর্থিক সহায়তায় প্রোগ্রামের খরচ, বাসস্থান, খাবার ও প্রোগ্রাম ভেন্যু গাজীপুরে যাওয়া এবং সেখান থেকে সংলগ্ন অন্য যেকোনো স্থানে যাতায়াত করা যাবে।
আবেদনপত্র অনলাইনে জমা দিতে হবে। আবেদনের সঙ্গে যা যা জমা দিতে হবে
*একটি স্টেটম্যান্ট অব পারপাস (সর্বোচ্চ তিন পৃষ্ঠা) লিখতে হবে।
*এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আপনি কী অবদান রাখতে চান এবং কী অর্জন করতে চান তা জানাতে হবে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস স্কলারশিপে আবেদন শুরু, আইএলটিএসে ৬.৫ অথবা টোয়েফলে ৮৪ হলে আবেদন ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
*নেতৃত্বের ভূমিকা ও উদ্ভাবনের সুনির্দিষ্ট উদাহরণ উল্লেখ করতে হবে।
*আপনার সম্প্রদায় বা সমাজে আপনি কী পরিবর্তন আনতে চান।
*নেতৃত্ব কর্মসূচি আপনাকে আপনার লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সাহায্য করবে।
*জীবনবৃত্তান্ত (সর্বোচ্চ দুই পৃষ্ঠা। লিঙ্কডইন প্রোফাইল, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল/সোশ্যাল মিডিয়া লিংক যোগ করতে হবে)।
*পাসপোর্ট সাইজের ছবি (Jpg ফাইল)।
*দুটি রেকমেন্ডেশন (সুপারিশপত্র) লাগবে। সুপারিশে স্বাক্ষর এবং লেটারহেড থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঅ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স ও অ্যাকচুয়ারিয়াল ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স, সরকারের টাকায় বিদেশে পড়াশোনা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫*শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি।
*ইংরেজিতে আত্মপরিচয়মূলক ভিডিও (সর্বোচ্চ ২ মিনিটের)।
*শিক্ষাগত সনদের কপি।
*ইংরেজিতে নিজের একটি আত্মপরিচয়মূলক ভিডিও (সর্বোচ্চ ২ মিনিট)।
আবেদনপত্রের পুরো প্যাকেজটি [email protected] ঠিকানায় পাঠাতে হবে। ‘ইয়ং লিডারস ২০২৫’-এর বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
https://www.unicef.org/bangladesh/en/call-applications?fbclid=IwY2xjawI5-4ZleHRuA2FlbQIxMAABHTg2NQxbuEiOIwr93Rd8qDwEYcYK6jqw9FwxARNiu9mJEYYb25glO35h6w_aem_bSbzc_oz9vQMQDZJCra7Xw
আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ—
আবেদন শুরু: ৫ মার্চ ২০২৫
আবেদন শেষ: ৩০ মার্চ ২০২৫
আরও পড়ুনবাংলাদেশিদের জন্য ভারতের আইসিসিআর দিচ্ছে ৫০০ বৃত্তি, জেনে নিন বিস্তারিত০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ান পেলেন ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলোশিপ’
ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি এ লিডারশিপ ফেলোশিপ প্রদান করে, যা বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এবছর বিশ্বের ৪ হাজার ২০০ জনের অধিক মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে থেকে নেতৃত্ব প্রদানকারী ১৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি “ইয়েল বিশ্ব ফেলো” হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি, ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৩ জন অলাভজনক সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন।
রেজোয়ান ছাড়াও ২০২৫ সালের ফেলোদের মধ্যে রয়েছেন সুইডেনের পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রবক্তা ম্যাথিয়াস উইকস্ট্রম, জর্জিয়ার সাবেক সংসদ ভাইস-স্পিকার ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ তামার চুগোশভিলি, নাইজেরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী বুকোলা এলেমিদে (আসা), মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়াম এল মারাকেশি, এবং প্যারাগুয়ের শীর্ষস্থানীয় বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিত্ব ভিভিয়ান নুনেজ।
“ইয়েল বিশ্ব ফেলো” প্রোগ্রাম হলো চার মাসের একটি পূর্ণকালীন রেসিডেনসিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার থেকে পরিচালিত এবং জ্যাকসন স্কুল অব গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এ অবস্থিত।
ইয়েল ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের ডিরেক্টর এমা স্কাই বলেন, ভাসমান স্কুল শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন সারা বিশ্বের আশা। কেননা রেজোয়ানের উদ্ভাবিত ভাসমান শিক্ষার টেকসই মডেল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গত দুই দশকে তার নেতৃত্বে পরিচালিত উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, জলবায়ু অভিযোজনে স্থানীয় উদ্ভাবন কেবল একটি দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থপতি রেজোয়ান চলনবিলের এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বন্যার কারণে প্রতিবছর স্কুল বন্ধ হয়ে যেত, মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হতো, আর সেইসঙ্গে মৌলিক সেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হতো। কিন্তু তিনি এই সমস্যাকে কেবল সংকট হিসেবে দেখেননি, বরং এরই মাঝে একটি নতুন সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকায় পরিচালিত এসব স্কুল বন্যার মধ্যেও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে।
শুধু শিক্ষা নয়, রেজোয়ান এর উদ্যোগ সম্প্রসারিত হয়েছে ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্লে গ্রাউন্ড ও ভাসমান কৃষি খামারের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকার তার উদ্ভাবন (ভাসমান স্কুল)-কে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার উদ্ভাবনী মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে সফলভাবে অনুসরণ করা হয়েছে।
বিশ্ব ফেলো হিসেবে রেজোয়ান ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টার (আগস্ট-ডিসেম্বর) এ লেকচার ও পরামর্শ দেবেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন, গবেষণামূলক কাজ করবেন, এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন।
রেজোয়ান বলেন, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রেরণার কারণেই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে, নতুন সমাধান বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই আসতে পারে। আশা করি, ইয়েল ইউনিভার্সিটির এই স্বীকৃতি জলবায়ু অভিযোজন ও শিক্ষার উন্নয়নের সিধুলাই ভাসমান স্কুল মডেলকে বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো ব্যাপক আকারে বিস্তারের সুযোগ করে দিবে।
২০০২ সাল থেকে শুরু হওয়া মরিস আর. গ্রিনবার্গ বিশ্ব ফেলো প্রোগ্রাম ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত, যা ভবিষ্যতের প্রভাবশালী নেতাদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। এই ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে পরবর্তীতে হয়ে উঠেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব—যেমন, রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সেই নাভালনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান, আর্জেন্টিনার সাবেক অর্থ ও উৎপাদন মন্ত্রী মার্টিন লুস্তু এবং লিচেনস্টাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটরিন এগেনবার্গার।
রেজোয়ানের “ভাসমান স্কুল” ধারণাকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা (ইউনিসেফ, ইউএনইপি, ও ইউএনডিপি) উদ্ভাবন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১৯ সালে, ব্রিটিশ বই ‘আর্থ হিরোস’ তাকে বিশ্বের ২০ জন “আর্থ হিরো”-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। রেজোয়ান ও তার ভাসমান স্কুল এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং তাইওয়ানসহ বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।