বিএমডিএর আরো ২ প্রকৌশলী সাময়িক বরখাস্ত, ব্যাখ্যা তলব
Published: 29th, March 2025 GMT
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনায় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর আরো দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া, বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রকৌশলীরা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা ও সহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ।
গত ২৩ মার্চের ওই ঘটনার দুইদিন পর অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এই দুই প্রকৌশলীসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান, উপসহকারী প্রকৌশলী মো.
রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা আত্মগোপনে আছেন।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান। বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক ও মো. জাফরুল্লাহ, জেলা প্রশাসনের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে তাকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জ রিজিয়নের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু তিনি অনুমতি ছাড়া রাজশাহীতে চলে আসেন এবং অতিরিক্ত সচিবকে হেনস্তার ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইডি শফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে, রিলিজ অর্ডার না পাওয়ায় তিনি দপ্তর ছাড়তে পারেননি। ২৩ মার্চ দুপুরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে তার দপ্তরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক বের করে দেন। তখন একটি চিঠি প্রস্তুত করা হয়, যাতে লেখা ছিল- শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন এবং জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
শফিকুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেছেন, তাকে এই চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম কৃষি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন এবং ২৫ মার্চ রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, মন্ত্রণালয়ের রিলিজ স্লিপ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি বিএমডিএতে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার নির্দেশনা পেয়েছিলেন। প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানের নেতৃত্বে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন।
বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, “বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের পদটি প্রশাসন ক্যাডারের একজন অতিরিক্ত সচিবের জন্য সংরক্ষিত। শফিকুল ইসলাম বদলি হওয়ার পরও যদি তিনি দায়িত্বে থাকেন, সেটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তবে, একজন কর্মকর্তাকে জোরপূর্বক দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করা এবং চেয়ার দখল করা গুরুতর অপরাধ।”
তিনি আরো বলেন, “মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ হ ঙ গ র আলম খ ন ব ধ য কর ব এমড এ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানে কেএফসিতে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে মার্কিন ফাস্টফুড চেইন কেএফসির শাখাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কেএফসির একাধিক শাখায় ক্ষুব্ধ জনতার ১০ টিরও বেশি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ১৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর রয়টার্স ও বিবিসির
গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে কেএফসির অন্তত ২০টি শাখায় হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি দোকানে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এরপর পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একটি ভিডিওতে একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, ‘তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।’
কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে অন্তত ১১ টি ঘটনায় লাঠিসোটা হাতে বিক্ষোভকারীরা কেএফসির দোকানে ভাঙচুর চালায়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশ।
লাহোরে একটি দোকানে বন্দুকধারীদের গুলিতে এক কর্মচারী এ সপ্তাহে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, হামলার সময় সেখানে কোনও বিক্ষোভ চলছিল না। ঘটনাটি রাজনৈতিক ভাবাবেগ থেকে ঘটেছে কিনা বা অন্য কোনও কারণ ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখছেন তারা।
লাহোর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফয়সাল কামরান জানান, শহরজুড়ে ২৭টি কেএফসি আউটলেটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরটিতে দুইটি হামলা সংঘটিত হয়েছে এবং পাঁচটি হামলা পুলিশ ঠেকাতে পেরেছে।
টিএলপির মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছি, তবে কেএফসির সামনে প্রতিবাদের ডাক দেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ব্যক্তি দলীয় পরিচয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও, সেটি দলীয় নীতির অংশ নয়।’
পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই কেএফসি মার্কিন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে আসছে, যার কারণে মানুষের যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী ভাবাবেগের কারণে বহুবার তা বিক্ষোভ ও হামলার শিকার হয়েছে।
সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো বর্জন ও প্রতিবাদ চলছে।
রয়টার্স লিখেছে, কেএফসির মূল প্রতিষ্ঠান ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তাদের আরেক ব্র্যান্ড পিৎজা হাটও গাজা যুদ্ধের কারণে বর্জনের মুখে থাকায় ব্যবসায়িক ক্ষতিতে পড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।