শরীয়তপুরে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ: ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের নামে মামলা
Published: 29th, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের ডামুড্যা থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল সরদারের ভাই স্বাধীন সরদার বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় মামলাটি করেছেন। মামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ সাতজনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সাতজনের নাম উল্লেখ ও একজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদারকে (২৪) অপহরণের পর নিয়ে যাওয়ার সময় চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন জনতা। তাঁদের মধ্যে তিন পুলিশ সদস্য আছেন। এ ছাড়া এক পুলিশ সদস্যসহ চারজন পালিয়ে যান।
ওই মামলায় কৌশিক আহমেদ, কাউসার তালুকদার, রুবায়েত মীর ও জয় পোদ্দার নামে পুলিশের চার কনস্টেবলকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কৌশিক ও জয় পোদ্দার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, কাউসার তালুকদার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রুবায়েত মীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত আছেন।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ডামুড্যা থানার পুলিশ জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার মোহাম্মদ জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুই ব্যবসায়ী বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন লোক ওই দুই ব্যবসায়ীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা ওই দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চান। তাঁরা কোনো টাকা দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাঁদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। ওই ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পারে যান অপহরণকারীরা। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণ চক্রকে ওই ব্যবসায়ীরা চার লাখ টাকা দেন। বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে ওই চক্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন গাড়িটি আটকে চারজনকে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।
এ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দিবাগত রাত ১২টা ৫২ মিনিটের সময় ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মাইক্রোবাস থামানোর চেষ্টা করছেন কয়েক ব্যক্তি। তখন ওই মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন অপহরণকারীরা। এ সময় আরও কিছু মানুষ সড়কের মধ্যে মাইক্রোবাসটি আটকে দেন। তখন ভেতর থেকে কয়েক ব্যক্তি বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন তখন চারজনকে মারধর করেন।
অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, ‘আমরা কাপড় ব্যবসায়ী। রাতে নামাজ পড়ার জন্য দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন ব্যাপারীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের গতি রোধ করে। ওই গাড়ি থেকে চারজন নেমে আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে ফেলেন। পরে হাতে পুলিশের হাতকড়া পরিয়ে দেন। টাকা চান। জানে বাঁচতে চাইলে ২০ লাখ টাকা দিতে বলেন। পরে আমরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। তবু আমাদের লোহার রড দিয়ে পেটান, কিল–ঘুষি মারেন।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য জড়িত, এমন অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনজন আটক হয়েছেন, একজন পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত। অন্যরা বাহিনীতে আছেন। তাঁরা কীভাবে এখানে এলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই ব যবস য় ক প ল শ সদস য র ব যবস য় ন অপহরণ ল সরদ র
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ৬০ ঘণ্টা পর চারজনকে জীবিত উদ্ধার
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার তাঁদের সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। সেখানে মৃত অবস্থায় একজনকে পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এতে দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ হাজারো মানুষ। ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডেও। দুই দেশেই উদ্ধার কাজ চলছে।
আরও পড়ুনপ্রাণহানি বেড়ে ১৭০০, উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি৩ ঘণ্টা আগেমিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২০ কিলোমিটার দূরের দেশ থাইল্যান্ডে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভূমিকম্পে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩৩ তলা ভবন ধসে পড়ার পর এখনো ৭৬ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারে বিদেশি সহায়তা পৌঁছাতে শুরু করেছে। তবে সেগুলো ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা খালি হাতেই উদ্ধারকাজে নেমেছেন।
আরও পড়ুনভারী যন্ত্রের অভাবে মিয়ানমারে খালি হাতে উদ্ধার অভিযান৭ ঘণ্টা আগেএর আগে গত শনিবার রাতে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো থেকে এক বৃদ্ধাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তিনি একটি হাসপাতালের ধ্বংসস্তূপের নিচে ৩৬ ঘণ্টা আটকা ছিলেন। এ ছাড়া মান্দালয়ের একটি আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে ২৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে রোববার থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী অনুতিন চারনভিরাকুল বলেছেন, ব্যাংককে ধসে পড়া নির্মাণাধীন ভবনটির ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়া কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁদের অবস্থা খুবই নাজুক।
থাইল্যান্ডে ধ্বংসস্তূপের নিচে যাঁরা চাপা পড়েছেন, তাঁদের নিয়ে বড় শঙ্কায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। দেশটিতে এক নারীর স্বামী একটি ভবনের নিচে চাপা পড়ে আছেন। ওই নারী বিবিসিকে বলেন, যতক্ষণ লাগে, তিনি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন।