যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা বর্বর হামলা অব্যাহত
Published: 29th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় নারী-শিশুসহ ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পশ্চিম তীরেই প্রাণ গেছে ২২ জনের। বরাবরের মতোই দখলদার বাহিনী বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতি সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে দখলদাররা উপেক্ষা করেছে।
একজন হামাস নেতাকে হত্যা করতে প্রয়োজনে তারা ১০০ সাধারণ মানুষকে হত্যা করবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহুর সংসদ বিচারক নিয়োগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে আইনও পাস করেছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলের নাগরিকরা।
ইসরায়েলি হামলায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ২০৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে অন্তত ১ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ জন। ইসরায়েলের বর্বর আচরণ বন্ধ করে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
আলজাজিরা জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হন। এতে করে গত এক দিনে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় নিহতের সংখ্যা ৪০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে বলেছে, গাজায় হাজার হাজার মানুষ তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টির মুখোমুখি। টানা তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কোনো মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি। মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য খাদ্য মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না এলে গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
এদিকে মিসরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। আকস্মিক এই হামলায় নিহত হয় সাত শতাধিক মানুষ।
একদিকে হামলা অন্যদিকে জোর করে বসতি স্থাপন চালিয়ে যাচ্ছে দখলদাররা। পবিত্র রমজানে বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। প্রায়ই তারা দখলদার ইসরায়েলিদের হামলার শিকার হয়েছে। বাড়িঘর থেকে উৎখাত করা হয়েছে। এমনকি ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর জোর করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছে জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তারা বলছে, সহায়তা তহবিল কমানো হলে গাজায় মানুষের জীবন খাদ্যাভাবে বিপন্ন হবে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবার সহায়তা তহবিল ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা ইসরায়েলের সামরিক মতবাদের অংশ। হামলার ভয়ে সাহায্য সংস্থা ও কর্মীরা ফিলিস্তিনি ছিটমহল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এদিকে লেবানন থেকে গতকাল শুক্রবার সকালে ইসরায়েলে আঘাত হানে দুটি রকেট। এতে ইসরায়েল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈরুতে বিমান হামলার হুমকি দেন এবং একটু পরই বিমান হামলা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল লেবাননে জোর করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। গত নভেম্বরে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো হামলা করা হলো।
ইয়েমেনে হুতিদের ৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সানাসহ ইয়েমেনজুড়ে হুতিদের এসব ঘাঁটি বিদ্যমান। হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, বৈরুতে ইসরায়েলি হামলা অগ্রহণযোগ্য। এটা যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন। লেবাননের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, বৈরুতে হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল দখলদ র ল ব নন
এছাড়াও পড়ুন:
কাজলা নদীর বুকে ফসলের ঢেউ
মেহেরপুরের কাজলা নদীটি নাব্য হারিয়েছে।
পানিপ্রবাহের বদলে নদীর বুকে ঢেউ খেলছে ফসলের। নদী দখল করে ধান চাষ করেছে ভূমিদস্যুরা। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।
মেহেরপুরবাসীর দাবি, নাব্য হারানোয় দখলদাররা নদীতে ধান চাষ করার সুযোগ পেয়েছে। নদীটি পুনর্খনন করে মৎস্যজীবীদের ইজারা দিলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেতে পারে। সেই সঙ্গে রক্ষা হবে পরিবেশের ভারসাম্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের তথ্যমতে, জেলায় কাজলা নদীর দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। ছোট নদী-খাল পুনর্খনন প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালে কাজলার ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। এই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তিনটি জায়গায় খনন করা হলেও তা ভূমিদস্যুরা ভরাট করে ধান চাষ করছে। বাকি ৪৪ কিলোমিটার প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদে খনন করার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এলাকাবাসীর দাবি, নদীর পুরো অংশ খনন না করলে খননের সুফল পাওয়া যাবে না।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান বলেন, দখলদাররা নদী দখল করে ধান চাষ করছে। ফলে হারিয়ে গেছে দেশীয় মাছ। এই নদী থেকে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত, তারা এখন পেশা বদল করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জাহির হোসেন চঞ্চল বলেন, গবাদি পশুর গা ধোয়ানো থেকে ফসলের মাঠে সেচ দেওয়া– সবই কাজলার পানি দিয়েই হতো। নদীকে ঘিরে যেসব পাখির আনাগোনা ছিল, তারাও আর আসে না। ফলে নষ্ট হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য।
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক একরামুল হক কাজলা নদীতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, নদীর ধারে তাদের জমি আছে। তাদের জমির স্থান বরাবর তারা ধান চাষ করেন। তাদের জমি তারা দখলে না রাখলে অন্য কেউ দখলে নিয়ে চাষ করবে। সরকার নদী খনন করলে আর তারা চাষ করবেন না বলে জানান তিনি।
আমঝুপি গ্রামের কৃষক ফকির মহাম্মদের ভাষ্য– কাজলা শুকিয়ে গেছে, ফাঁকা জমি পড়ে আছে। তাই তারা ধান চাষ করে খাদ্য উৎপাদন করছেন। কাজলা খনন করলে মাছ পাবেন, গবাদি পশুর গা ধোয়াতে পারবেন, ফসলের জমিতে সেচ দিতে পারবেন। তারাও চান কাজলায় খনন করা হোক।
ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা বলেন, কাজলার মতো একটি প্রবহমান নদী এখন দখলদারদের দখলে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নদীটি দ্রুত খনন করার দাবি জানান তিনি।
মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, প্রমত্তা কাজলা ক্রমেই পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীর বুকজুড়ে চলছে চাষাবাদ। যে নদীর পানি দিয়ে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়া হতো, সেই কাজলার বুকেই শ্যালো মেশিন বসিয়ে ধানে পানি দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ বাঁচাতে শিগগির কাজলা নদী খনন করে এর নাব্য ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মত দেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, কাজলার খনন করা ১০ কিলোমিটার বাদে বাকি ৪৪ কিলোমিটার খননের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো
হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সভা হলে নদীটির পুরো খনন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। নির্দেশনা পেলে পুরোটাই খনন করার প্রস্তাব পাঠানো হবে। নদীটি খনন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকবে।