নিরাপদ পরিবেশে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের জন্য এবং ঈদে বাসাবাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) যে ১৪টি নির্দেশনা জারি করেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি। তারা বাসাবাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানে পাহারা জোরদার ও সার্বক্ষণিক নজরদারির ওপর জোর দিয়েছে। 

আমরাও মনে করি, জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদেরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নাগরিকেরা কোথায় কী মালামাল রেখে যান, সেটা তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের জানার কথা নয়। কিন্তু ডিএমপি যখন নাগরিকদের এসব নির্দেশনা ও সদুপদেশ দিচ্ছে, তখনই ঢাকা শহরে র‍্যাবের নামে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বুধবার ভোরে র‍্যাবের নাম করে একদল ডাকাত ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কে একটি ছয়তলা ভবনে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি ঘটনার সময় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে ডাকাতেরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে আহত করে। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে ৯ মার্চ ও ১২ ডিসেম্বরও র‍্যাবের পরিচয়ে যথাক্রমে পুরান ঢাকা ও মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

আবাসিক এলাকায় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা কী বার্তা দেয়? র‍্যাব গঠিত হওয়ার পর থেকে এর কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে তীব্র সমালোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীর সাতজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই সমালোচনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই ‘উড়ে’ গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশন র‍্যাবের প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন পুরোপুরি বাতিলের কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাংলাদেশে কোনো বাহিনী বাতিল বা পরিত্যক্ত ঘোষণার উদাহরণ আছে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় রক্ষীয় বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের সদস্যদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করা হয়েছিল। 

ঈদে বাড়ি বা সড়কে মানুষ নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকবে। এর অর্থ এই নয় যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও বেশি তৎপর থাকবে না। সাম্প্রতিক কালে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে চলেছে। তদুপরি যে খবরটি আমাদের বিচলিত করে, সেটি হলো এসব অপরাধের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান কিংবা সাবেক সদস্যদের যুক্ত থাকা। যখন রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় নামে, তখন আর জনগণ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না।

ডিএমপি ঢাকার বাসিন্দাদের ঈদের সময় সজাগ থাকতে বলেছে। আশা করি, অন্যান্য বড় শহরেও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঈদের সময় কেবল বাসাবাড়ি বা পর্যটন এলাকা নয়, চলাচলের পথও নিরাপদ রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কপথে ছিনতাই–ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশকে এখানে আরও তৎপর হতে হবে। ঈদের সময় যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকে এবং কোনো কোনো সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অনেক সময় পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশও থাকে। জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিজেদের সজাগ রাখুক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন র সময় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্বের মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়।

এর আগে সকালেই জনসাধারণের জন্য মাঠে প্রবেশের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিটি মানুষকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। পুরো মাঠটি ছিল সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। ছিল ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোন। যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটিকে নজরদারিতে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন ছিল। এছাড়াও প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। 

এই জামাতে বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান ইতিমধ্যেই বড় ঈদের ময়দান ও জামাত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বড় জামাতে অংশগ্রহণ করে তাদের অনুভুতিও ছিল বেশ। ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। 

গাইবান্ধা থেকে আগত জাহিদ হাসান বলেন, এটাই গোর-এ শহীদ ময়দানে আমার প্রথম ঈদের নামাজ। অনুভুতিটা অনেক সুন্দর। এখানকার আয়োজনসহ সব বিষয় ভালো লেগেছে। আল্লাহর কাছে চাওয়া ছিল যে ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য চাওয়া ও দেশের জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল যে এখানে নামাজ আদায় করবো, এবারে তা করতে পেরেছি। 

গাজীপুর থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, এই মাঠে নামাজ পড়ার জন্য এসেছি। এত বড় জামাতের কথা শুনেছি, টিভিতে দেখেছি। এই প্রথম এখানে নামাজ আদায় করলাম। আমাকে খুব ভালো লাগছে। 

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে আসা তারেক রহমান বলেন, এখানে লাখো মুসল্লির সমাগম হয়। এটা জেনে আমি এখানে এসেছি। এবারে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং লোডশেডিং ছিল না। সেদিক দিয়ে রমজান এবং সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে পারলাম, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। 

জয়পুরহাটের জাহিদ হোসেন বলেন, দিনাজপুরে আমার দাদার বাড়ি। এখানে নামাজ করতে পেরেছি এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল না। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলে অনেকেই বিরক্ত হয়। এখানে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় হয়েছে। এখানে আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়া কামনা করেছি। 

দিনাজপুর শহরের লালবাগ এলাকার সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল, সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করিয়েছেন।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হুসাইন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দান। কথিত আছে, বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়। আমি সর্বপ্রথম এই জামাতে অংশগ্রহণ করেছি। আমি দেখেছি, দিনাজপুরবাসী ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষজন এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছেন। আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সুশৃঙ্খলভাবে এবং বেশি মুসল্লির উপস্থিতিতে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নামাজে আমাদের পুলিশ নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রেখেছিল। আমরা এক সপ্তাহ ধরে এই মাঠকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিলাম। কোনো ধরনের অঘটন ঘটতে পারেনি। 

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বসাধারণ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। তাদের জন্য একটা অনুকূল বা নামাজের উত্তম পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাই। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। 

২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
  • প্রাণহানি বেড়ে ১৭০০, উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে: জাতিসংঘ
  • চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাবে ব্যাহত ত্রাণ তৎপরতা: জাতিসংঘ
  • ময়মনসিংহে ঈদ ঘিরে দলগুলোর কার কী তৎপরতা
  • ভূমিকম্পের পরও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকার
  • মাধবপুরে ঈদ ঘিরে পুলিশের তৎপরতা
  • ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বেশি, তৎপরতা সীমিত 
  • ঈদে এনসিপির কোন নেতা ভোটকেন্দ্রিক কী জনসংযোগ করবেন