দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে অন্তত ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৩২ জন। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে অন্তত ৯ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে আলজাজিরা। দেশটির রাজধানী ব্যাংককে একটি ৩০ তলা ভবন ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নির্মাণশ্রমিক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে দুই দেশে কয়েকশ ভবন ধসে পড়ে; ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি সেতু। সড়কে গভীর ফাটল দেখা দেয়। মিয়ানমারের ছয় এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্যাপক উদ্ধার অভিযান চলছিল। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল মান্দালয়ের সাগাইং শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। এলাকাটি রাজধানী নেপিদো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। ভূকম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল, প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, চীন, কম্বোডিয়ায়ও কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পরই ৬ দশমিক ৪ মাত্রার একটি প্রত্যাঘাত হয়।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রাজধানী নেপিদোতে। সেখানে কমপক্ষে ৯৬ জন নিহত হয়েছেন। সাগাইংয়ে ১৮ জন ও মান্দালয়ে ৩০ জন নিহত হন। এর মধ্যে জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদ ধসে পড়ে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে শতাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। এটি ধসে পড়লে অন্তত ৯০ জন নিখোঁজ আছেন। তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের সামরিক সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে। সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পের পর বলেন, ‘মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া যে কোনো দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করতে আমরা প্রস্তুত।’ সামরিক শাসনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মিয়ানমারের জন্য এটি একটি বিরল ঘোষণা। সেনা মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, ‘আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা দিক।’
ভয়াবহ এ ভূমিকম্পের পর জাতিসংঘ তাদের আঞ্চলিক সহায়তা কার্যক্রম সক্রিয় করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুবাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।
ভূমিকম্প-পরবর্তী সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল বারো নিশ্চিত করেছেন, সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করছে। তবে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশের সীমাবদ্ধতায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে দেখা যায়, ভূমিকম্প শুরুর পর ব্যাংককে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে। আশপাশের লোকজন আতঙ্কে পালাচ্ছেন; ধুলোয়-ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে আশপাশ। হোটেলে থাকা অনেকে গোসলের পোশাক ও সুইমিংয়ের পোশাক পরে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইয়ের বাসিন্দা ৭৬ বছরের সাই ভূমিকম্পের সময় একটি দোকানে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত অন্য গ্রাহকদের সঙ্গে দোকান থেকে বের হয়ে যাই। এটা আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।’
থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা এক্সে লেখেন, তিনি ভূমিকম্পের পর জরুরি বৈঠক করতে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ফুকেটে তাঁর নির্ধারিত সরকারি সফর স্থগিত করেছেন। বিকেলে ব্যাংকক থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, ভূমিকম্পের কারণে শহরটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন। কোনো মেট্রোরেল চলাচল করছে না। শহরজুড়ে যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
মিয়ানমারের অনেক স্থানে ভূপৃষ্ঠে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক সড়কে ফাটল ও মাটি দেবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ভবনের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা চলছে। মান্দালয় উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা কয়েকশ হতে পারে। উদ্ধার অভিযান চলছে।’ মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার জানিয়েছে, ছয়টি অঞ্চল– সাগাইং, মান্দালয়, ম্যাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য ও নেপিদো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
মিয়ানমার দমকল বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মিয়ানমারের ইয়াংঙ্গুনে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। আমার শহরের সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে। কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’
বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, ভূকম্পন মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রদেশ ইউনান ও সিচুয়ান প্রদেশেও অনুভূত হয়েছে। সেখানেও ভবন ধসে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে মিয়ানমারে এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আর হয়নি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির ‘রেড জোনে’ রয়েছে মিয়ানমার। সাগাইং ফল্ট লাইনের মধ্যে এর অবস্থান। এর আগে সাগাইং ফল্টেই ১৯৩০ ও ১৯৫৬ সালে শক্তিশালী ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মিয়ানমারে তিনজন নিহত হন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র ক সহ য ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের নামাজে মাইকের শব্দ নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ১২
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ঈদের নামাজ আদায়ের সময় মাইকের শব্দ বাড়ানো-কমানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দহকোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামে স্থানীয় মাতব্বর আবুল হোসেন কাবুল ও নওয়াব আলীর সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সকালে গ্রামের ঈদগাহে নামাজ আদায়ের সময় মাইকের শব্দ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরো পড়ুন:
বরিশালে প্রধান জামাতে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নামাজ আদায়
সাইপ্রাসে প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা যায়নি।
ঢাকা/সোহাগ/বকুল