গতবারের ভূমিকম্পটি বাংলাদেশ কিংবা ঢাকা থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে হয়েছে। ওই স্থানে ১৮৫৮ সালেও ৭ দশমিক ৯৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এটি ছিল সাগাইং ফল্ট অঞ্চলে। ১৭০ বছর আগের ওই ভূমিকম্পে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়। যদিও সেখানে জনসংখ্যা অনেক কম। সেখানে ১৯৩০ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে সাগাইং ফল্ট অঞ্চলে ৭ মাত্রার বা তার বেশি ছয়টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী বাগানে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তবে আমাদের জন্য এ ভূমিকম্প একটা বড় সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশের আশপাশে যে ভূমিকম্পগুলো হয়েছিল তার মধ্যে পাঁচটি ভূমিকম্প আছে, যেগুলো ৭ থেকে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার। পাঁচটি ভূমিকম্প আছে যেগুলো ১৮৭৯, ১৮৮৫, ১৯১৮, ১৯৩০ সালে সংঘটিত হয়। সেগুলো ১৫০ থেকে ২০০ বছরের মধ্যে আবার ফেরার আশঙ্কা আছে। এগুলো এখন ঝুঁকির মুখে। কারণ, মাস দুয়েক থেকে ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে। নেপাল ও মিয়ানমারেও বারবার ভূমিকম্প হচ্ছে। এগুলো মিলিয়ে আমাদের এখানে ১৫০ থেকে ২০০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৫ কিংবা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার কথা, তা যে কোনো মুহূর্তে সংঘটিত হতে পারে।
এবারের ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, থাইল্যান্ডের মাটি খুব নরম। আমাদের আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে ব্যাক টু ব্যাক ৭ দশমিক ৫ ও ৬ মাত্রার দুটি ভূমিকম্পে তুরস্কের শহরে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ মারা যান। সিরিয়ায়ও ওই ভূমিকম্পে ১০ হাজার মানুষ মারা যান। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জনসংখ্যা থাইল্যান্ড ও তুরস্কের চেয়ে ১০-১৫ গুণ বেশি। এখানে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হবে।
ফলে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বিশেষ করে আমাদের বিল্ডিং কোড মেনে নতুন ভবন তৈরি করতে হবে। পুরোনো ভবনগুলোকে মজবুত করতে হবে। কালার কোড অনুযায়ী ভবনগুলোকে চার ভাগে ভাগ করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের এক্ষুনি উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের ভূ-অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হতে পারে– এমন পাঁচটি ফল্ট লাইন বা টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল আছে। এর একটি ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে মধুপুরের ওপর দিয়ে গেছে। ওই ফল্ট লাইনে যদি ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্পও হয়, তাতেও ঢাকার ৩০ শতাংশ ভবন মাঝারি থেকে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হতে পারে।
ফল্ট লাইন হলো দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল। যেখানে সাধারণত ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। অন্য চারটি ফল্ট লাইন হলো– কক্সবাজার-ফেনী প্লেট বাউন্ডারি ১, ফেনী-শ্রীমঙ্গল প্লেট বাউন্ডারি ২, শ্রীমঙ্গল-ভারত প্লেট বাউন্ডারি ৪ এবং ডাউকি ফল্ট লাইন। টেকটোনিক প্লেটগুলো সব সময়ই ধীরগতিতে ভ্রাম্যমাণ থাকে। ফলে এ ফল্ট লাইনগুলো থেকে সব সময়ই শক্তি নিঃসরিত হয় এবং যে কোনো সময় এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা আছে। মধুপুর ফল্ট লাইনে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় ১৮৮৫ সালে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ১। ডাউকি ফল্ট লাইনে ১৮৯৭ সালে ৮ মাত্রার কম্পন হয়। আর সর্বশেষ ১৯১৮ সালে ফেনী-শ্রীমঙ্গল প্লেট বাউন্ডারি-২তে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশ বা এর আশপাশের অঞ্চলে প্রতি ১৫০ বছরে সাত বা তার চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই হিসাবে বড় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে গত এক মাসে পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ ধরনের মৃদু ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ত্রুটিপূর্ণ ভবনগুলো ঠিক করার এখনই সময়। গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, ভূমিকম্প প্রতিকার ও প্রতিরোধে প্রস্তুতি হতে হবে তিনটি স্তরে। প্রথমটি হলো, সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি। এর মধ্যে রয়েছে তিনি যে ভবনটিতে থাকেন, সেটি ভূমিকম্প সহনীয় কিনা। যদি ভূমিকম্প সহনীয় না হয়, তাহলে সেটিকে ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা। নতুন ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি করা। এ ছাড়া ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি, ভূমিকম্পের সময় করণীয় এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে করণীয়গুলো জেনে রাখা। মোট কথা, এ বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন থাকা। দ্বিতীয় স্তরে সচেতনতার বিষয়টি হলো, জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সব শেষে সরকারের সমন্বয়।
লেখক : অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ম ত র র ভ ম কম প ভ ম কম প র ৭ দশম ক ৫ প রস ত ত ম কম প হ আম দ র ত রস ক ধরন র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিং এ তিতাসের অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ, ক্ষোভ
সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ড আটি হাউজিং এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে ৩০ থেকে ৩৫টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে এলাকাবাসীর কাছে এ অভিযানটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাড়িয়েছে।
তারা বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ হাস্যকর একটি অভিযান পরিচালিত করেছেন। হাউজিং এলাকায় তিন শতাধিকের উপরে বহুতল ভবন রয়েছে। তারা ৩০ থেকে ৩৫টি অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দায়সারা ও প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান করেছে।
এছাড়াও অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেককেই বলতে দেখা গেছে যারা বছরের পর বছর অবৈধভাবে তাদের বহুতল ভবনে অগনিত চুলা ব্যবহার করলেও রহস্যজনকভাবে ওইসব ভবনগুলো অভিযান চালায় না তিতাসের কর্মকর্তারা।
কেউ কেউ বলছেন এসব বাড়ির মালিকরা তিতাসের অসাধু লোকদের ম্যানেজ করে এসব অবৈধ সংযোগ নিয়ে বছরের পর বছর গ্যাস ব্যবহার করছে। এছাড়া যেেেকানো অভিযানের পূর্বে অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের কাছে সংবাদ পৌছে দেয় অসাধু কর্মকর্তারা। এরফলে অভিযানের আগেই তারা অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীরা সতর্ক হয়ে যায়।
তবে আভিযানিক কর্মকর্তারা বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা তেমন একটা অভিযান করতে পারিনি। ৩০ থেকে ৩৫টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ ভাবে যেসব গ্রাহকেরা অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করেছে তাদেরকেও আমরা জরিমানার আওতায় নিয়ে আসব।
রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাসের ম্যানেজার মোস্তাক মাসুদ ইমরান, ফতুল্লার ম্যানেজার মশিউর রহমান ও নুরুল আফসার উদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে হাউজিং ৫ নং রোডের বাড়ী নং-৬৪ শহিদুল ইসলামের জমাদ্দার ৬ তলা ভবন, একই এলাকায় কফিল উদ্দিনের ১ তলা ভবন, আব্দুল মান্নানের ৬ তলা মান্নান ভিলা, ৪ নং রোডের আব্দুল হাই মেম্বারের ৬ তলা ভবন, ২ নং রোডের পুলিশ কর্মকর্তা শাহীন মিয়ার ৬ তলা ভবন ও ৩ নং রোডের আজিজের ৬ তলা ভবন, ৮ নং রোডের মাথায় আমান উল্লাহ আমানের ৬ তলা ভবনসহ ২৫ থেকে ৩০ টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
কয়েকজন বাড়ির মালিক বলেন, আমরা কয়েকটি অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করার অপরাধে আমার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অথচ আমার পাশের বহুতল ভবন গুলোতে ১৫ থেকে ১৬ টি অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারকারীর গ্যাস সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেনি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
তারা আরো বলেন, ৭নং রোডে শফিক স্বর্ণকারের ৬ তালা ভবন, উকিলের ২ তলা ভবন, ২ নং রোডে সেলিমের সাড়ে পাঁচ তালা ভবন, ৯ নং রোডের সোহেল, আরব আলী, ২ নং রোডে রিয়াজের ৬ তলা ভবন, ২ নং রোডে কাজী সোলেয়মানের সাড়ে ছয় তালা ভবন,৩ নং রোডের অবসরপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তা আয়াত আলির ৬ তলা ভবন, ফরিদ মাস্টারের ৬ তালা ভবন, ৬ নং রোডের মজিবুরের ৬ তলা ভবন ও ৭ এবং ৮ নং রোডের ভবনগুলোর অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ।
উক্ত ব্যক্তিদের ভবন গুলোর অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী। আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তাহলে রহস্যজনক কারণে উক্ত ভবনগুলোর অবৈধ সংযোগ কেন ছিন্ন করলো না তিতাস কর্তৃপক্ষ। উক্ত বাড়ি গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন বৈধ গ্যাস সংযোগকারীরা।
এবিষয়ে তিতাস গ্যাসের ফতুল্লার ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে আমরা তেমন একটা অভিযান করতে পারিনি। ৩০ থেকে ৩৫টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ ভাবে যেসব গ্রাহকেরা অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার করেছে তাদেরকে আমরা জরিমানার আওতায় নিয়ে আসব।
তারা যদি ছয় মাসের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে, তাহলে গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা হবে এবং হাউজিং এলাকায় কয়েকদিনের মধ্যে আবারও জোরালো অভিযান পরিচালনা করা হবে ও অবৈধ সংযোগকারী এবং অতিরিক্ত চুলা ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জিডি করা হবে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে মুঠোফোনে বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীরা জানালে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।