জীবন যেভাবে শেখায়, পৃথিবীর তাবৎ পাঠশালা তা পারবে না। বিপদে শিরদাঁড়া যে সোজা রাখে, সফলতা তার মুঠোয় আসে! জিনাত রেহানা লুনা তেমনি এক নারী; জীবনের সব ‘লু হাওয়া’ সরিয়ে লক্ষ্যে আছেন অবিচল। অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন হাজারো নারীর।
রাজধানীর ধানমন্ডি ড্রিমস পার্লার অ্যান্ড ফিটনেস ক্লাবের সিইও লুনা ভালোবাসেন উপস্থাপনা। বাংলাদেশ বেতারে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে কাজটি করছেন পরম মমতায়। গুণী নাট্যশিল্পী, অভিনয়েও পটু। ১৯৯২ সাল থেকে লুনা বিটিভির তালিকাভুক্ত নাট্যশিল্পী।

২০২০ সালে করোনাভাইরাস কেড়ে নেয় লুনার স্বামী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে। এর পর মুদ্রার উল্টো পিঠ পরখ করেন। তাতে ভেঙে পড়েননি লুনা। পেছনের দিনগুলো থেকে প্রেরণা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। লুনার ভাষ্য, ২০২০ সালের করোনা মহামারি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সব বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করা হাত দুটি হারিয়ে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর মনে হচ্ছিল, আমার জীবন একেবারে থেমে গেছে! কিন্তু নিজের জীবনের পেছনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই– সাইফুলই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মোটিভেটর। এর পর নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পাই। মাত্র চার বছরে আজকের এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছি।

জীবন সংগ্রামের বর্ণনায় লুনা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আগ মুহূর্তে তাঁকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। ছোট্ট পরিবার থেকে ওঠেন মোহাম্মদপুরের একান্নবর্তী সংসারে। স্বামীরা ১০ ভাইবোন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ সদস্য ২৫। ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় লুনার স্বামী সাইফুল। শুরুতে অস্বস্তিতে পড়লেও দ্রুত মানিয়ে নেন। এর পর আবিষ্কার করেন– তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, দুই সন্তান লালন-পালন, চাকরিসহ সব কাজ সামলাতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না এ পরিবারের কারণে। বিয়ের পরপর স্বামী কুয়েতে গেলেও লুনা শ্বশুরবাড়িতে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট শেষে চাকরি শুরু করেন।
বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি ভিসা প্রসেসিং সেন্টারেও কাজ করেছেন লুনা। কর্মদক্ষতায় সফল হলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁকে টেনে ঠেকানোর চেষ্টা করেছে বলে জানান। কিন্তু তিনি দমে না গিয়ে এসবকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতেন। ঘাম ঝরানো অর্থে ফ্ল্যাট, গাড়ি সবই করেছেন লুনা। তবে তিনি এখনও মনে করেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে একদিন মেয়েকে স্কুলে দিয়ে অফিসের গাড়ির কাছে পৌঁছাতে এক মিনিট দেরি হওয়ায় তাঁকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন সহকর্মীরা। ওই ঘটনার পর নিজেকে নতুন উদ্যমে তৈরি করেন লুনা– নিজেকেই সব করতে হবে। কারও পানে চেয়ে থাকলে চলবে না। মেয়ে সাদিয়া জাহিন সাজিন ও সাবরিনা জাহিন সুজানার দিকে তাকিয়ে প্রতিবার ঠিক ফিনিক্স পাখির মতো দাঁড়িয়েছেন লুনা। বর্তমানে ড্রিমস পার্লারে ২০ নারী কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত সেবা নিতে আসা নারীদের সঙ্গে কথোপকথনে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে লুনার। নারীদের জন্য তাঁর পরামর্শ, নারীর জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজন ধৈর্য। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন র জ বন জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

পড়েন এক কলেজে, অন্য কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন মুরাদ হোসেন ওরফে রাব্বি। তিনি কলেজটিরই ছাত্র নন। মুরাদ হোসেন নোয়াখালী সরকারি কলেজে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন।

গত ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই কলেজ শাখার কমিটি ঘোষণা করে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। ওই কলেজের ছাত্র না হওয়ার পরও মুরাদ হোসেনকে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করায় নেতা–কর্মীদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে কলেজটির ছাত্র না হলেও এইচএসসিতে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে পড়েছেন মুরাদ হোসেন। ২০২০ সালে তিনি কলেজটি থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষে নোয়াখালী সরকারি কলেজের বিবিএস (স্নাতক) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। তাঁর রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ শাখা ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ শাখার কমিটিতে পদ পেতে হলে ওই কলেজের শিক্ষার্থী হতে হবে, এটি অনেকটা অলিখিত সাংগঠনিক নিয়ম ও ঐতিহ্য হিসেবে পালন হয়ে আসছে। কিন্তু ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এই কলেজের শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে অন্য কলেজের শিক্ষার্থীকে সাধারণ সম্পাদক করা দুঃখজনক।

জানতে চাইলে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করে আসছেন। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ কমিটিতে আমার নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু কমিটির অনুমোদন হতে দেরি হয়েছে।’

বর্তমানে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কোনো কমিটি নেই। তবে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান মো. নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক কলেজের ছাত্র আরেক কলেজ কমিটির নেতা হতে পারবেন না, এমন কথা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই। তা ছাড়া মুরাদ হোসেন এর আগে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি বিষয়টি দেখছেন, পরে এ বিষয়ে জানাবেন।’ তবে পরে আর তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের চর্চা অতীতে হয়নি। তবে ভুলক্রমে যদি এটি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটিকে বিতর্ক তৈরির সুযোগ না দিয়ে শুদ্ধ করা উচিত। তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ওই ছাত্রনেতা এরই মধ্যে নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে তাঁর ছাত্রত্ব স্থানান্তরের আবেদন করেছেন। কিন্তু দাপ্তরিক কারণে সেটি বিলম্ব হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি মঙ্গলবার
  • তথ্য গোপন করে পদ নেওয়া নোয়াখালীর সেই ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি
  • পড়েন এক কলেজে, অন্য কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক