নতুন বিশ্বব্যবস্থা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং বিমসটেক
Published: 28th, March 2025 GMT
চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থা ও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে বিমসটেকের আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা অপরিহার্য।
নতুন বিশ্বব্যবস্থার ধারণাটি বিকশিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতাকে নির্দেশ করে, যেখানে ক্ষমতা কাঠামো, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও আন্তঃসংযুক্ততার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তির মধ্যে রয়েছে বহু-মেরু বৈশ্বিক কাঠামোর আবির্ভাব, গ্লোবাল সাউথের অর্থনৈতিক উত্থান এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), জৈবপ্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামোর মতো প্রযুক্তিগত বিপ্লব। এই প্রেক্ষাপটে বিমসটেককে কার্যকরভাবে এগিয়ে যেতে হলে অভিযোজনমূলক আঞ্চলিক সহযোগিতার কৌশল গ্রহণ করতে হবে, যা বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য ব্যবস্থায় অনিশ্চয়তার ক্রমবর্ধমানতা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা হিসেবে আবির্ভূত। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য কাঠামোর অবনতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অস্থির ও অনিশ্চিত পরিবেশ তৈরি করছে। উপরন্তু মার্কিন-চীন ও মার্কিন-কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধসহ ভূরাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পারস্পরিক শুল্ক নীতিগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল গতিশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। এসব পরিবর্তনের ফলে বাণিজ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও আঞ্চলিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, যার অন্যতম উদাহরণ ‘চীন+১’ কৌশল, যেখানে উৎপাদনশীল বিনিয়োগকে বিকল্প বাজারে স্থানান্তরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
শুল্ক, অ-শুল্ক বাধা এবং বাণিজ্য বিধিনিষেধ ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠছে, যা বাণিজ্য প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করছে। পাশাপাশি অটোমেশন, এআই এবং নীতিগত সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রাধান্য বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করছে। অন্যদিকে গ্লোবাল সাউথের উত্থান গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত পরিবর্তন নির্দেশ করছে, যেখানে ভারত, আসিয়ান এবং আফ্রিকা বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে, যা ভবিষ্যতের বাণিজ্য কাঠামোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।
ডিজিটাল বাণিজ্য অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ই-কমার্স, ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং এআই-চালিত সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যে প্রযুক্তির ভূমিকা আরও সুসংহত হচ্ছে, যা ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে দক্ষতর ও গতিশীল করে তুলছে। একই সঙ্গে জলবায়ুবান্ধব বিনিয়োগ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব আরোপের মাধ্যমে সবুজ বাণিজ্য এজেন্ডা জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় স্থায়িত্ব ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতার প্রতি বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করছে।
অগ্রগতি সত্ত্বেও অনেক অঞ্চলে দারিদ্র্য এখনও রয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জন কেবল বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্যই নয়, আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্যও অপরিহার্য। উপরন্তু বেশ কয়েকটি বিমসটেক দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্মুখীন, যা দারিদ্র্য হ্রাসের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে এবং সামগ্রিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই প্রেক্ষাপটে বিমসটেককে প্রযুক্তিসক্ষম বাণিজ্য, টেকসই উন্নয়ন ও আর্থিক স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগী হতে হবে, যাতে এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়।
বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় অবস্থিত সাতটি দেশ (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড) নিয়ে গঠিত বিমসটেক, অর্থপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি বহন করে। এর ভৌগোলিক সান্নিধ্য এবং ঐতিহাসিক সংযোগ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করে।
তবে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি এবং ২৭ বছরের অস্তিত্ব সত্ত্বেও, গভীর আঞ্চলিক একীকরণের দিকে বিমসটেকের অগ্রগতি সীমিত। বিমসটেকের অগ্রগতিতে বাধাগুলো কী?
বিমসটেকের অগ্রগতি সীমিত হওয়ার একটি প্রধান কারণ সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অভাব। বৃহত্তর দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেনি; ছোট দেশগুলো নীতিগত অগ্রাধিকারের শীর্ষে রাখেনি। বিমসটেকের আনুষ্ঠানিক সনদ তৈরিতেই ২৫ বছর লেগে গেছে।
একটি সমন্বিত নিরাপত্তা কাঠামো গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত সাইবার আক্রমণ ও জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনের মতো অপ্রচলিত নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলায়। বিমসটেকের উচিত বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ, যেখানে নাগরিক সমাজ, শিক্ষাবিদ এবং বেসরকারি খাত সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকবে। পাশাপাশি লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতকরণ এবং যুব সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি, শুল্ক-বহির্ভূত বাধা হ্রাস এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণ বিমসটেক অঞ্চলে অর্থনৈতিক একীকরণ জোরদার করতে পারে। ভৌত সংযোগ ও বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও, আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের হার এখনও তুলনামূলক কম (প্রায় ৭%)। যদিও এটি সার্কের তুলনায় বেশি, আসিয়ানের (প্রায় ২৫%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে। অবকাঠামোগত বিনিয়োগের ঘাটতি (প্রতি বছর প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলার) এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
২০০৪ সালে কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বিমসটেক এখনও বিস্তৃত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) চূড়ান্ত করতে পারেনি। সদস্য দেশগুলো একাধিক দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ায় বাণিজ্য ব্যবস্থা খণ্ডিত। তদুপরি, বৃহত্তর দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ক্রমবর্ধমান সন্দেহ বিমসটেক এফটিএর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মতো দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা বিমসটেকের কার্যকারিতাকে আরও দুর্বল করছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার অনেক ক্ষেত্রে বিমসটেকের চেয়ে আসিয়ানকে বেশি গুরুত্ব দেয়, যেহেতু আসিয়ানের একীকরণ কাঠামো আরও শক্তিশালী।
বিমসটেক সচিবালয় সীমিত আর্থিক সম্পদ ও জনবল নিয়ে পরিচালিত, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন, অনুষ্ঠান আয়োজন ও সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতাকে ব্যাহত করে। পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে সচিবালয় অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণে হিমশিম খায়।
বিমসটেকের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ সমস্যা সমাধানে যুবসমাজকে বিমসটেকের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন, আন্তঃসীমান্ত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং ডিজিটাল সংযোগ সহজতর করার মতো পদক্ষেপ কার্যকর হতে পারে। বোঝাপড়া ও বিশ্বাস বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করা সম্ভব।
পরিশেষে, আঞ্চলিক সংস্থারূপে বিমসটেক নতুন বিশ্বব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সহযোগিতা জোরদার, স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার
মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক অবদান
রাখতে পারে এটি। তবে এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি, বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের ওপর।
সেলিম রায়হান: অর্থনীতির অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নির্বাহী পরিচালক, সানেম
selim.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক টন ত ব ণ জ য ব যবস থ ক সহয গ ত র ব মসট ক র র জন য ত করছ ক করণ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের বিভাজন নীতি
যুক্তরাষ্ট্র কি চীন-রাশিয়া বিভক্তির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছে? ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর ডানপন্থি পণ্ডিত টাকার কার্লসনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র না বুঝে চীন ও রাশিয়াকে জোট বাঁধার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুটি শক্তিকে বিভক্ত করাকে তাঁর প্রশাসন অগ্রাধিকার দেবে।
হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি আশা করছেন, দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটবে। ইউরোপীয় সংঘাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, এমনকি যদি এর অর্থ ইউক্রেনকে নিজের সুবিধার জন্য বিপদেও ঠেলে দেওয়া হয়, তবে এটি চীনা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ স্থানান্তরের প্রেক্ষাপটে দেখা যেতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক ফোনালাপের পর ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেছেন, ‘ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে আমি দেখেছি, আপনি প্রথমেই যা শিখবেন তা হলো, আপনি রাশিয়া ও চীন একত্র হোক– তা চাইবেন না।’
ট্রাম্প যে ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন তা হলো, নিক্সন যুগের কৌশল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে চীনের সঙ্গে জোট বাঁধতে চেয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় দুটি কমিউনিস্ট সত্তার মধ্যে বিভাজনকে প্ররোচিত করা হয়েছিল। যদি মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যে ফাটল তৈরি করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য হয়; আমার বিশ্বাস, ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নির্বোধ ও অদূরদর্শী।
আজকের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে আলাদা, যেখানে চীন-সোভিয়েত বিভক্তি ঘটেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের প্রধান কৌশলগত লক্ষ্যগুলো অভিন্ন করে নিয়েছে, যার মধ্যে প্রধান হলো মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা উদারপন্থি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও রাশিয়া উভয়েই সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমানভাবে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। যেমন দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ান ঘিরে চীন, ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে ঘিরে রাশিয়া। এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা সরকারগুলোর গঠিত ঐক্যবদ্ধ অবস্থান শুধু দুটি দেশকে একে অপরের কাছাকাছি ঠেলে দিয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক তখন পুতিন ও শি জিনপিং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নিদর্শন হিসেবে ‘সীমাহীন বন্ধুত্ব’ ঘোষণা করেন। তখন থেকে চীন রাশিয়ার জন্য একটি অপরিহার্য অংশীদার হয়ে উঠেছে। আমদানি ও রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই দেশটি শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার।
২০২৪ সালে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জন করেছে। রাশিয়া নিজেদের তেল ও গ্যাসের প্রধান ক্রেতা হিসেবে এখন চীনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা চীনকে রাশিয়ার ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে এবং মস্কোকে বেইজিং থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো মার্কিন প্রচেষ্টা অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব করে তোলে।
এর অর্থ এই নয়, রাশিয়া-চীন সম্পর্ক নষ্ট হবে না। মতবিরোধ ও ভিন্ন নীতির ক্ষেত্রগুলোও রয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ফাটল তৈরিতে সফল হতে ট্রাম্প কাজে লাগাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা এবং বেইজিংয়ের যে কোনো সম্প্রসারণবাদী প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করা রাশিয়ার স্বার্থে কাজ করতে পারে। যেমন ভারতের সঙ্গে মস্কোর কৌশলগত সম্পর্ক, যা চীন কিছুটা উদ্বেগের সঙ্গে দেখে। বিশেষ করে যেহেতু চীন-রাশিয়া সীমান্তে এখনও বিতর্কিত অঞ্চল রয়েছে।
ট্রাম্পের লেনদেনমূলক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী পররাষ্ট্রনীতি ইউরোপে ডানপন্থি দলগুলোকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ইইউ মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। আর তা মার্কিন প্রশাসনের দেওয়া নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির ওপর অন্যদের আস্থা দুর্বল করে দিতে পারে। অন্যদিকে বেইজিং এটিকে মার্কিন প্রভাব হ্রাসের লক্ষণ হিসেবে দেখতে পারে, যা চীনকে কৌশল অবলম্বনের জন্য আরও সুযোগ করে দেবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষত তাইওয়ানের কথা বলা যায়।
লিংগং কং: যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি প্রার্থী; দ্য কনভারসেশন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম