Samakal:
2025-04-21@02:50:06 GMT

বেতনেরই খবর নেই বোনাস বহুদূর

Published: 28th, March 2025 GMT

বেতনেরই খবর নেই বোনাস বহুদূর

‘সারা মাস শিশুদের পাঠদান করে অপেক্ষায় থাকি বেতনের। ঈদে বোনাসের টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য কেনাকাটা করব, আনন্দে ঈদ করব।’ একদমে কথাগুলো বলে গেলেন মো. আবুল হাসান বক্তিয়ার। এদিকে তিনি যে ঈদ বোনাস পাবেন না, তা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছেন। আগের তিন মাসের বেতনই তো আটকে আছে। 
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক বক্তিয়ার। সহজে কোরআন শিক্ষা দেওয়া তাঁর মতো উপজেলার ৮৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী তিন মাস ধরে বেতন পান না। ফুল্লশ্রী ফকিরবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম বক্তিয়ারের সংসারে সাতজন সদস্য। পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে চারজনই পড়ছে মাদ্রাসায়। আসন্ন ঈদুল ফিতর বক্তিয়ারের পরিবারে আসছে যন্ত্রণা হয়ে। সন্তানদের নতুন কাপড় দেবেন কি, বাজার খরচ নিয়ে তাঁর দুর্ভাবনা। 
মসজিদের ইমামতি করে বক্তিয়ার মাসে ৭ হাজার টাকা পান। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক হিসেবে পান পাঁচ হাজার টাকা। ১২ হাজার টাকায় সংসার চালাতে নাভিশ্বাস ওঠে তাঁর। এর ওপর গত জানুয়ারি থেকে ইফা বেতন দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘বেতন-বোনাস না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে এবার কোনো রকমে ঈদ করব।’ 
বক্তিয়ারের মতোই চিত্র মোসা.

বদরুন্নেছা পরির সংসারে। স্বামী মশিউর রহমান কীটনাশকের ব্যবসা করেন। ছেলে পড়ছে অনার্সে, মেয়ে এইচএসসিতে। বদরুন্নেছা উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের উত্তর চাদত্রিশিরা তালুকদারবাড়ি বাংলোঘর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘মাসজুড়ে শিশুদের লেখাপড়া শিখিয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে পরিবারে সবাইকে নিয়ে আনন্দে ঈদ করব বলে আশা ছিল। অথচ এবার বেতন-বোনাস কিছুই পাইনি।’
মসজিদভিত্তিক সহজ কোরআন শিক্ষার (মক্তব) ৪৬টি কেন্দ্র রয়েছে উপজেলায়। অপরদিকে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিকের ৩৮টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে আছেন একজন করে শিক্ষক। সে হিসেবে শিক্ষক আছেন ৮৪ জন। এ ছাড়া ইফা আগৈলঝাড়া কার্যালয়ে একজন সুপারভাইজার, একজন মডেল কেয়ারটেকার ও তিনজন সাধারণ কেয়ারটেকার কর্মরত।
সূত্র জানায়, ৩২ বছরে এই প্রকল্প ৭ বার অনুমোদন পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়। চলতি বছর অষ্টম দফায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়– এই তিন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে প্রকল্পটিতে। এবার অর্থ মন্ত্রণালয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ প্রকল্পকে আউটসোর্সিং প্রকল্প হিসেবে চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কারণে ২০২৫ সালের তিন মাসের বেতন পাননি এই প্রকল্পের আওতায় আগৈলঝাড়ায় কর্মরত শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা। তাদের হাতে পৌঁছেনি ঈদুল ফিতরের বোনাসও। তাদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হতো। তৃতীয় থেকে সপ্তম পর্যায়ের জনবল রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়নি। যে কারণে পর্যায়ক্রমে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
এসব বৈষম্যের অবসান চেয়ে প্রকল্পে কর্মরত ব্যক্তিরা ২০ মার্চ সারাদেশে মানববন্ধন করেন। পরে নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের আশ্বাসে স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে ২৪ মার্চ কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা। আন্দোলনকারীরা আউটসোর্সিং বাদ দিয়ে তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি তোলেন। 
২৩ বছর ধরে এ প্রকল্পে কর্মরত মো. ফকরুল আলম। তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মডেল কেয়ারটেকার। ফকরুল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ সময় ধরে চাকরি করে আসছি। সারা মাস রোজা রেখে ঈদের সময় স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের কাউকে টাকার অভাবে নতুন জামা কাপড় দিতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই নেই।’
ছেলেমেয়ে, মা-স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার ফকরুল আলমের। জমিজিরাতও নেই তাঁর। আয়ের বিকল্প কোনো পথও নেই। ইফা থেকে পাওয়া সাড়ে ৭ হাজার টাকায় টেনেটুনে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। তিন মাস ধরে সেই টাকা বন্ধ হওয়ায় ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। ফকরুল বলেন, ‘এখন যদি আউটসোর্সিং চালু হয়, তাহলে এই বয়সে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হবে।’
ইফার উপজেলা সুপারভাইজার মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, ‘এই প্রকল্পের সপ্তম পর্যায় শেষ হয়েছে। এর পরে অনেক প্রতিষ্ঠান সরকারি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাদের বহুবার কথা দিয়েও কথা রাখেননি। এখন শুনছি, আউটসোর্সিংয়ের নামে দাসপ্রথা চালু করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ, যেদিন কাজ, সেদিন বেতন। একই প্রকল্পে ২ নিয়ম বৈষম্যমূলক।’ 
এ বিষয়ে বরিশাল জেলার ১০ উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফিল্ড অফিসার মোহাম্মদ ফোরকান হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের কারও ঈদের আগে বেতন-বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্ততপক্ষে আরও দুই মাস পর পেতে পারেন। আগেও এমন হয়েছে, কর্মীরা একসঙ্গে সব পেয়েছেন।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মসজ দ এই প রকল প র আউটস র স বক ত য় র উপজ ল র পর ব র পর য য় মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদে পাকিস্তানজুড়ে মার্কিন ফাস্টফুড চেইন কেএফসির শাখাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেএফসির এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কেএফসির একাধিক শাখায় ক্ষুব্ধ জনতার ১০ টিরও বেশি হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তত ১৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর রয়টার্স ও বিবিসির 

গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে কেএফসির অন্তত ২০টি শাখায় হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার রড হাতে জনতা কেএফসি দোকানে ঢুকে পড়ছে এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এরপর পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে। করাচিতে দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

একটি ভিডিওতে একজন লোক চিৎকার করে বলছেন, ‘তোমরা যেটা থেকে টাকা কামাচ্ছো, ওরা সেই টাকা দিয়ে গুলি কিনছে।’

কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, করাচি, লাহোর ও ইসলামাবাদসহ পাকিস্তানের প্রধান প্রধান শহরে অন্তত ১১ টি ঘটনায় লাঠিসোটা হাতে বিক্ষোভকারীরা কেএফসির দোকানে ভাঙচুর চালায়। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বিক্ষোভকারীদের আটক করে পুলিশ।

লাহোরে একটি দোকানে বন্দুকধারীদের গুলিতে এক কর্মচারী এ সপ্তাহে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, হামলার সময় সেখানে কোনও বিক্ষোভ চলছিল না। ঘটনাটি রাজনৈতিক ভাবাবেগ থেকে ঘটেছে কিনা বা অন্য কোনও কারণ ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখছেন তারা।

লাহোর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফয়সাল কামরান জানান, শহরজুড়ে ২৭টি কেএফসি আউটলেটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরটিতে দুইটি হামলা সংঘটিত হয়েছে এবং পাঁচটি হামলা পুলিশ ঠেকাতে পেরেছে।

টিএলপির মুখপাত্র রেহান মহসিন খান বলেন, ‘আমরা মুসলিমদের ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছি, তবে কেএফসির সামনে প্রতিবাদের ডাক দেইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনও ব্যক্তি দলীয় পরিচয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও, সেটি দলীয় নীতির অংশ নয়।’

পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই কেএফসি মার্কিন সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়ে আসছে, যার কারণে মানুষের যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী ভাবাবেগের কারণে বহুবার তা বিক্ষোভ ও হামলার শিকার হয়েছে।

সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো বর্জন ও প্রতিবাদ চলছে।

রয়টার্স লিখেছে, কেএফসির মূল প্রতিষ্ঠান ইয়াম ব্র্যান্ডস এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে তাদের আরেক ব্র্যান্ড পিৎজা হাটও গাজা যুদ্ধের কারণে বর্জনের মুখে থাকায় ব্যবসায়িক ক্ষতিতে পড়েছে বলে জানায় সংস্থাটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ইনজেকশন পুশ করেন আয়া
  • নোয়াখালীতে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি 
  • নাটোরের শিশুর লাশ উদ্ধারের মামলায় পাঁচ কিশোর আটক
  • কৃষি পরিবারের বউ হয়ে এসেছিলেন, হয়েছেন দেশসেরা কৃষক
  • বীথি: পর্ব ১৭
  • কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালালেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
  • পাকিস্তানে কেএফসিতে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
  • পাকিস্তানে কেএফসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮
  • আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি দপ্তরে জনবল নিয়োগ অমানবিক-অন্যায্য