মনোনয়ন পেতে শো-ডাউন, বিভক্তির শঙ্কা
Published: 28th, March 2025 GMT
জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের শোডাউন চলছে। ইফতার আয়োজনকে কেন্দ্র করে যা ভালোভাবে দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীর মাঝে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
বিভিন্ন আসনের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আলাদা আলাদা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছেন। একইদিনে আলাদা আলাদা ইফতার আয়োজন করে যার যার বলয়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে কর্মসূচি করছেন তারা। এতে করে মাঠপর্যায়ে দলীয় বিভাজন বাড়ছে। কোনো কোনো উপজেলায় ইফতার আয়োজন নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। এর ফলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে, দলীয় বিরোধও চাঙা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা সদরে এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট। সম্প্রতি তা আরও বেশি দৃশ্যমান। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুলের পক্ষে নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলা সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের ইউনিয়নে ইউনিয়নে রমজানের শুরু থেকেই ইফতার পার্টির আয়োজন হচ্ছে। তাতে নুরুলের সমর্থক, নেতাকর্মী এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই অংশ নিচ্ছেন।
গত ১৯ মার্চ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ-৪ (সদর- বিশ্বম্ভরপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরুলের পক্ষে আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে বিএনপি, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। একইদিনে সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাত ও আট নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল হয়েছে। আয়োজকদের অন্যতম ছিলেন জেলা বিএনপির আবুল মুনসুর শওকত।
দু’পক্ষের ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে সহযোগিতাও চাওয়া হয়। একই দিনে বিএনপির দুই বলয়ের ইফতার আয়োজন বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, রমজানের শুরু থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা ইফতারের আয়োজন করছেন। যারা বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন সহ্য করেও দলের পতাকা আঁকড়ে রেখেছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের চলমান ইফতার মাহফিল তারা ঐক্যবদ্ধভাবে করছেন। সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাতে অংশ নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ সদর আসনের তৃণমূলে বিভক্তি নেই।
এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত বলেন, ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে দলের পক্ষে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুনামগঞ্জ সদর আসনে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি, বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন এবং সাবেক এমপি ও সাবেক হুইপ ফজলুল হক আছপিয়ার ছেলে জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবিদুর রহমানের পক্ষেও ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে। চলছে প্রচার কাজ। আবিদ তাঁর ষোলঘরের বাসভবনেও নিজ বলয়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছেন।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনের ইউনিয়নে ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল হচ্ছে বিএনপির। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কয়ছর এম আহমেদ এসব ইফতার মাহফিলে অংশ নিচ্ছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব ইফতার মাহফিলে শরিক হচ্ছেন। ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় আগামী জাতীয় নির্বাচনে নিজের জন্য সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছেন তিনি।
এদিকে এই আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি এমএ সাত্তারের পক্ষেও ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হয়। তিনিও এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর সমর্থক শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি ফরিদুর রহমান ফরিদ ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এইচএম নাছির জানিয়েছেন।
এই আসনে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনের পক্ষ থেকেও নানা আয়োজনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম তুলে ধরা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনেও পৃথক ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিভক্তি চাঙা হচ্ছে বিএনপির দুটি বলয়ে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলের পক্ষে হচ্ছে ইফতার মাহফিল। তিনি এরইমধ্যে এই আসনের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরীও আলাদা ইফতারের আয়োজন করেছেন। তাঁর পক্ষের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, তিনিও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরাও ইফতার পার্টিতে নিজ নেতার পক্ষে কথা বলছেন।
এ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক হেভিওয়েট নেতা সাবেক বিচারপতি মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী রুমি অবশ্য সব বলয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রচার চালাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনেও বিভক্তির সুর বইছে বিভিন্ন উপজেলায়।
ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব খান এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির পরিচিতি সভা ও ইফতার মাহফিলে নিজের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল গত ২৫ মার্চ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ইফতার মাহফিল আয়োজন করেন। সেখানে তিনি এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দেন।
জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক, এই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুল হকের পক্ষেও ইফতার চলছে তাহিরপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নে। আনিসুল হকের ভাই উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এর উদ্যোক্তা।
এছাড়া এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেনের সহধর্মিণীও মনোনয়ন চাইবেন এমন প্রচার আছে আসনের চারটি উপজেলাজুড়ে।
সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক- দোয়ারা) আসনে বিএনপির দুই হেভিওয়েটের মনোনয়নের লড়াই বহুদিনের। এই আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের পক্ষে ইফতার আয়োজন চলছে প্রতিটি ইউনিয়নে। তিনি এসব ইফতার পার্টিতে উপস্থিত থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন শক্তভাবে। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এই আসনে ১৯৮৮, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তিনি। এ নির্বাচনী এলাকার অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নে প্রার্থী হন। এবারও এ আসনে মনোনয়ন চান তিনি।
এদিকে ইফতারের উছিলায় দলীয় দায়িত্বশীলদের আলাদা আলাদা শোডাউনে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে না দাবি করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্বাক্ষর প্রদানকারী সদস্য (সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনকারী) আব্দুল হক বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে এবং মসজিদ ও হাটবাজারের আশপাশে ইফতারের আয়োজন করার জন্য দলের নির্দেশ রয়েছে। ইফতার আয়োজন কোনো ব্যক্তির নামে নয়। দলের নামে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, তারেক রহমান সাধারণ মানুষকে নিয়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়সহ সর্বস্তরে ইফতার আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন। একটি ইউনিট একদিনে বহু স্থানে ইফতারের আয়োজন করতে পারে। এটি কোনো গ্রুপিং বা বলয়কে শক্তিশালী করার জন্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, নেতারা স্বীকার না করলেও একেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর ইফতারে দলের একেক অংশের অংশগ্রহণে বিভাজনের চিত্র পরিষ্কার।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র স ব ক স স ন মগঞ জ সদর য় র ন ত কর ম র ন ত কর ম র দল র স ব ক ইফত র প র ব এনপ র ক র সমর থ ও ইফত র পর য য় র জন য উপজ ল এ আসন সহয গ বলয় র আসন র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি–জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৎপর, এনসিপির তোড়জোড় কমিটি গঠনে
সিলেটে আট মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা আকাশ–পাতাল বদলে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা যেখানে অনেকটা একতরফাভাবে ‘রাজনৈতিক মাঠ’ দখলে রেখেছেন, তাঁরা এখন লাপাত্তা। অন্যদিকে হামলা, মামলা ও নিপীড়নে ঠিকমতো কর্মসূচি পালন করতে না পারা বিএনপি–জামায়াতের নেতারা এখন ঘটা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ে কমিটি গঠন ও দল গোছাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর বাইরে ইসলামি দলগুলোর পাশাপাশি কিছু বাম দল জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় আছে। তবে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের মিত্র দলগুলো অনেকটাই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছে।
তৎপর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাবিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে দলের নেতা–কর্মীদের অনেকে হামলা ও মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অবস্থা বদলেছে। এখন দলটির নেতা–কর্মীরা মাঠপর্যায়ে চাঙা আছেন। জেলা পর্যায়ে দলীয় কার্যালয় না থাকলেও শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতার বাসায়ই তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা প্রতিদিন ভিড় করছেন। অথচ ৫ আগস্টের আগে এমন দৃশ্য খুব একটা ছিল না।
বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি আছে। এসব কমিটির নেতা–কর্মীরা সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজেদের সমর্থিত সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের পক্ষে তাঁরা এলাকায় সরব আছেন। পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটিয়ে তাঁরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রার্থীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় নানা আয়োজনে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলার ছয়টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির বেশ কিছু নেতার নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট–১ (নগর ও সদর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী আছেন। সিলেট–২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনার নাম আলোচনায় আছে।
সিলেট–৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল তৎপর আছেন।
সিলেট–৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরী ও হেলাল উদ্দিন এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমের নাম শোনা যাচ্ছে।
সিলেট–৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ও কানাইঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিনের নাম শোনা যায়। এ ছাড়া সিলেট–৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ও জেলা বিএনপির সদস্য ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের নাম আলোচনায় আছে।
আরও পড়ুনগাইবান্ধায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত বিএনপি–জামায়াত, সদস্য সংগ্রহে এনসিপি১৮ এপ্রিল ২০২৫এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন বড় আঙ্গিকে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বড় পরিসরে পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন, পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে ইফতার মাহফিল আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি দলকে নির্বাচনমুখীও করা হচ্ছে। দল সর্বাধিক যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করবে। যাঁরা মনোনয়ন পাবেন, তাঁদের পক্ষেই সবাই এককাট্টা থাকবেন।
উজ্জীবিত জামায়াতগণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের নেতা–কর্মীরা তৃণমূলে ব্যাপকভাবে সভা–সমাবেশ করছেন। খেলাধুলা, ধর্মীয় ও সামাজিক নানা আয়োজনে যোগ দিয়েও তাঁরা কুশল বিনিময় করছেন। এ ছাড়া জেলার ছয়টি আসনে সম্ভাব্য ছয় প্রার্থী তৎপরও আছেন।
সিলেট–১ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট–২ আসনে জেলার নায়েবে আমির আবদুল হান্নান, সিলেট–৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ, সিলেট–৪ আসনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট–৫ আসনে জেলার নায়েবে আমির আনোয়ার হোসেন খান ও সিলেট–৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা থেকে এমনটাই জানা গেছে।
আরও পড়ুনপঞ্চগড়ে বিএনপি–জামায়াতসহ সবার তৎপরতা নির্বাচনমুখী১২ এপ্রিল ২০২৫জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, আগে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থিত জামায়াতের কার্যালয় নিয়মিত খোলা যেত না। এ ছাড়া উপজেলা জামায়াতের কার্যালয়গুলো তখন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এখন জেলা ও উপজেলা কার্যালয়গুলো নিয়মিত খোলা হয়। নেতা–কর্মীরা কার্যালয়ে বসে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ গুছিয়ে এলাকার ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ ছাড়া কর্মী–সমর্থকেরাও সাংগঠনিক কাজ নিয়ে সক্রিয় আছেন। সবাই এখন উজ্জীবিত।
এনসিপির তোড়জোড় কমিটি গঠনেসিলেট জেলা ও ১৩টি উপজেলায় এনসিপির কোনো কমিটি গঠিত হয়নি। তবে গত ২২ মার্চ সিলেটে প্রচুর লোকসমাগম ঘটিয়ে দলটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে নিজেদের জানান দিয়েছে। এর বাইরে এখন দলটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনে তোড়জোড় শুরু করেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার ঢাকায় এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়। এতে সারা দেশে কমিটি গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা ও উপজেলাকেন্দ্রিক কার্যালয় স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে দলটির। সে অনুযায়ী সিলেট জেলা ও ১৩টি উপজেলায় দলের সংগঠকেরা কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুনখুলনায় কেন মুখোমুখি গণ অধিকার ও বৈষম্যবিরোধীরা২৭ মার্চ ২০২৫এনসিপির সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেন, কমিটি গঠনের ব্যাপারে এক ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা আহ্বায়কদের বয়স ৪০ বছরের ওপরে থাকতে হবে। সর্বনিম্ন ৩১ থেকে সর্বোচ্চ ৫১ জন নিয়ে জেলার আহ্বায়ক কমিটি এবং সর্বনিম্ন ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৪১ জন নিয়ে উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। আগামী ৬ মের ভেতরে কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সারা দেশের জেলাগুলোকে এনসিপি ১৯টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা আছে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, অনিক রায় ও এহতেশাম হক; যুগ্ম সদস্যসচিব প্রতীম দাশ ও সদস্য নুরুল হুদা জুনেদের নেতৃত্বে সিলেট বিভাগে দলটি সংগঠিত হচ্ছে।
এর মধ্যে নুরুল হুদা জুনেদ সিলেট–৩ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা নিশ্চিত করেছেন। নুরুলের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে। এ ছাড়া অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হকের মধ্যে যেকোনো একজন সিলেট–১ আসনে দলের প্রার্থী হতে পারেন বলে প্রচারণা আছে।
এ বিষয়ে নুরুল হুদা জুনেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে সিলেটে এনসিপির সরব ও শক্ত অবস্থান আছে। তবে তাঁরা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারণার চেয়ে সাংগঠনিক প্রচারণার ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন। এখন জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠনের জন্য কাজ চলছে। নির্বাচন নিয়ে আপাতত তাঁরা ভাবছেন না।
কেউ সরব, কেউ নীরবআওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে না। মুঠোফোনও বন্ধ। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল, ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টির কোনো কর্মসূচি সেই অর্থে দৃশ্যমান নয়।
তবে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যুতে সিলেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) তৎপরতা চোখে পড়ছে। এর বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদের (মার্ক্সবাদী) তৎপরতা আছে।
যোগাযোগ করলে বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেমন সক্রিয় ছিলাম, তেমনই এখনো আমরা সক্রিয় আছি। জাতীয় ও স্থানীয় নানা ইস্যুতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছি।’