দিনাজপুর সদরের ঘুঘুডাঙ্গা এলাকার কৃষক মোসাদ্দেক আলী। সড়কে দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে আলু সংরক্ষণ করতে হয়েছে তাঁর। এরপরও যে পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন, তা রাখতে পারেননি। একই এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, চার দিন সিরিয়াল দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পেরেছেন। মাঠ থেকে তুলে নিয়ে আসেন। ম্যানেজার বলছেন, আর জায়গা নেই। 
সব কৃষক আলু রাখতে আসছেন। তাদের অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে।
জেলায় এবার আলুর ভালো ফলন হলেও বাজারে দাম কম। লোকসান কমাতে হিমাগারে সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকছেন মোসাদ্দেক ও রফিকুলের মতো কৃষক। দীর্ঘ লাইন দিয়ে সংরক্ষণ করতে তাদের দিনরাত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় এবার যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হবে, তার মাত্র ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ সংরক্ষণ করা যাবে। বাকি ৮৮ শতাংশের বেশি বাইরে থাকবে।
দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে প্রায় ১৫ দিন ধরে ভ্যান, ট্রাক্টরসহ আলু বোঝাই বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। হিমাগারে রাখার জন্য কৃষক জমি থেকেই এসব নিয়ে এসেছেন। জেলা কৃষি বিপণন কার্যালয়ের তথ্যমতে, দিনাজপুরে হিমাগার রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে ১৪টি পুরোনো এবং নতুন করে স্থাপিত হয়েছে দুটি। পুরোনোগুলোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ২৭ হাজার ৪০০ টন। নতুন দুটিতে ২০ থেকে ২২ হাজার টন সংরক্ষণ করা যাবে। 
১৬টি হিমাগারে ১ লাখ ৫০ হাজার টন রাখা যাবে। এবার জেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২ টন। যে পরিমাণ আবাদ হয়েছে, মাত্র ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ ধারণক্ষমতা রয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টন সংরক্ষণ করা যাবে না। ফলে যে পরিমাণ সংরক্ষণের পরিকল্পনা ছিল স্থানীয় কৃষকের, তার অর্ধেকও রাখতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
বিরল উপজেলার মাঝাডাঙ্গা এলাকার কৃষক গোলাম মোস্তফা আগেভাগে হিমাগারে আলু রাখার জন্য স্লিপ নেন। অনেক কষ্টে তিনজন মিলে ৮০ বস্তার স্লিপ পান। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাখার উদ্দেশ্য হলো, এখন তো আলুর দাম নেই। এগুলো বীজ হিসেবে আমরা জমিতে বপন করব। কৃষকের জন্য তো সংরক্ষণের ব্যবস্থা বা জায়গা থাকা দরকার। আমি যে পরিমাণ জমিতে আবাদ করি, তাতে করে আমার ৫০ বস্তা রাখা দরকার। রাখতে পারলাম ৩০ বস্তা।’ 
হিমাগারে কৃষকের ফসল সংরক্ষণে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সদর উপজেলার বোলতৈড় এলাকার কৃষক সেলিম রেজা। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী হিমাগারে আলু রাখতে পারলেও কৃষক পারছেন না। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন, আর কৃষক জমিতে বপন করবেন। তাহলে কার রাখতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত? হিমাগারে তো অনেক জায়গা নেই। এটি কীভাবে সমাধান করা যায়, যারা দায়িত্বে আছেন তারা অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এমন পরিস্থিতিতে বিপদে পড়তে হয়েছে হিমাগারসংশ্লিষ্টদেরও। যানজট নিরসনে শ্রমিকদের অধিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আবার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত আলু এনেছেন কৃষক। সবাই একসঙ্গে নিয়ে আসায় জটিলতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাহানারা কোল্ড স্টোরেজের কর্মচারী আনিসুর রহমানের ভাষ্য, এবার আবাদ বেশি হওয়ায় কৃষকের চাপ বেশি ছিল। সবাই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে চান।
এবারে কৃষক অনেক বেশি আলুর আবাদ করেছেন বলে জানান অফিস সহায়ক মোয়াজ্জেম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল ঠিকই ছিল। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের চাপ ছিল। সবার মধ্যে চিন্তা ছিল যে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে কিনা। আমাদের যে ধারণক্ষমতা, তা নিয়েছি। এরপরও অনেকে সংরক্ষণের জন্য এসেছিলেন।’ 
পূর্ণভবা কোল্ড স্টোরেজের কর্মচারী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রচুর আবাদ এবং ফলন ভালো হওয়ায় দ্রুত জায়গা পূরণ হয়েছে। এখন ভেতরে ঠিকভাবে রাখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্টোর কিপার শ্যামল চন্দ্র দাসের ভাষ্য, কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না। কারণ এত জায়গা নেই। 
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, জেলায় গত অর্থবছর পর্যন্ত ১৪টি হিমাগার থাকলেও এবার নতুন দুটি স্থাপন করা হয়েছে। ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার টন। নতুন দুটি হিমাগার স্থাপিত হলেও তা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। এ জন্য এবারের ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৫০ হাজার টন হতে পারে। এ বছর অতিরিক্ত ১০ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়েছে। প্রতিবছর জেলায় ৪৮ থেকে ৫০ হাজার হেক্টরে আবাদ হয়। এতে ১০ থেকে ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন করেন কৃষক।
এবার আলুর বেশি আবাদ হওয়ায় সব 
হিমাগারে চাপ রয়েছে বলে জানান, জাহানারা কোল্ড স্টোরেজের হিসাবরক্ষক নুর উল্লাহ। তিনি বলেন, আগে কখনও এমন চাপ হতো না। দাম কমে যাওয়ায় শুরু থেকে কৃষকের চাপ রয়েছে। গত বছর দাম বেশি থাকায় এবার সবাই আবাদ করেছেন। অনেকের বাড়িতে এখনও আলু আছে, অনেকে জমি থেকে তুলছেন। পূর্ণভবা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মো.

সোহানের কথায়, এবার আবাদ বেশি হওয়ায় কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। যে পরিমাণ আলু রাখা যাবে, তা নেওয়া হয়েছে। 
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত এবং পর্যাপ্ত হিমাগার স্থাপনের বিকল্প নেই বলে জানান জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হাসান। তিনি বলেন, যে পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়, তার স্বল্প পরিমাণ সংরক্ষণ করা যায়। এ জন্য কৃষক ঠিক দাম পাচ্ছেন না। আরও সংরক্ষণাগার স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে সনাতন পদ্ধতিতেও সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ধ রণক ষমত হ জ র টন র জন য ব যবস ব পণন উৎপ দ হওয় য়

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে ধানক্ষেত থেকে অটোরিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার

শেরপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর কান্দিপাড়া এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে এক অটোরিকশাচালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুল লতিফ (৪৪)। তিনি বাজিতখিলা ইউনিয়নের কুমরী কাটাজান এলাকার মৃত আ. মালেকের ছেলে এবং পেশায় অটোরিকশাচালক চালক।

পুলিশ জানায়, সকালে স্থানীয়রা ধানক্ষেতে এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। নিহতের গলায় রশি পেঁচানো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

কবরের ওপর পড়ে ছিল গৃহবধূর হাত-পা বাঁধা মরদেহ

রাজবাড়ীতে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করা হবে।’’

ঢাকা/তারিকুল/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ