কর ছাড়ের সুবিধা শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চায় এ খাতের আমদানিকারক পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ১৮ এবং খোলা সয়াবিন লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিক্রেতাদের মধ্যে তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অন্যদিকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। 

ছোট ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েন বিপদে। কারণ তেল না থাকলে অন্য পণ্য বিক্রি কমে যায়। 

রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেলে কর ছাড়ের সুবিধার মেয়াদ শেষ হবে আগামী সোমবার। এর পরদিন ১ এপ্রিল থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়িয়ে ১৯৩ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩৫ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল লিটারে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন তারা। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে শুল্ককর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েল বাজারজাত করতে হবে। 

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাব নিয়ে নিত্যপণ্যের বাজারে বেশ আলোচনা চলছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ তেল সংগ্রহ ও মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে খোলা তেলের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা দেখা গেছে। তবে বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ দুই-তিন মাস ধরেই কম। 
তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো.

হেলাল সমকালকে বলেন, কয়েক মাস ধরেই কোম্পানি বোতলজাত তেল খুব কম দিচ্ছে। দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে সরবরাহ আরও কমিয়ে দিবে তারা। 
কারওয়ান বাজারের আব্দুর রব স্টোরের বিক্রয়কর্মী রায়হান মিয়া বলেন, তেল না থাকলে ক্রেতা অন্য পণ্য কিনতে চান না। দাম বাড়ানোর আগে কোম্পানি তেল ছাড়ে না বাজারে। এ জন্য হয়তো কেউ কেউ মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করে। 

তবে দাম বাড়ানোর এমন প্রস্তাবে বেশ উদ্বিগ্ন ক্রেতা। গতকাল কারওয়ান বাজারে বিল্লাল হোসেন নামের এক ক্রেতা সমকালকে বলেন, এবার রমজানে জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম ছিল। এখন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর বাহানা করছে। এক লাফে লিটারে ১৮ টাকা বাড়লে গরিব মানুষের কষ্ট হবে। 

রোজার আগে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভোজ্যতেলের শুল্ককরে যে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ। এই অব্যাহতির মেয়াদ বাড়বে কিনা, এখনও সেই ঘোষণা দেয়নি সরকার। এর আগেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের দাবি, ভ্যাট অব্যাহতির এই সুবিধা উঠে গেলে আমদানির খরচ বাড়বে। ফলে তখন তাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। 

সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর পাঁচ লিটারের দর ৮৫২ এবং খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের লিটার ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও রোজার শুরুতে বাজারে এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হয়েছিল ভোজ্যতেল। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ভ জ যত ল

এছাড়াও পড়ুন:

৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ নামে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ মাঝপথে ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন ঠিকাদার। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ৫ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যানদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এতে বিপদে পড়েছেন জনপ্রতিনিধিরাও। এলাকার পানিতে প্রচুর আয়রন আছে জানিয়ে দুপচাঁচিয়ার আলতাফনগর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পানি পান করে অনেকে নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আয়রনমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা পাবেন বলে আশা ছিল তাদের। কিন্তু ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে তারা হতাশ। কাজটি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।
প্রকল্পটির আওতায় দুপচাঁচিয়ার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুপচাঁচিয়া সদর, গুনাহার ও গোবিন্দপুরকে বেছে নেওয়া হয়। এ তিন ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮টি ট্যাঙ্ক স্থাপন করে দুই হাজার পরিবারকে পানি সরবরাহ করা হবে। সে জন্য ৬২ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। আদমদীঘির ছয়টি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার এ সুবিধা পাবেন। সে জন্য ব্যয় ধরা হয় ৭৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি সরবরাহ ইউনিট স্থাপন কাজের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই উপজেলার জন্য ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ১৮ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শুরুর সময় ঠিক হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করে। 
জানা গেছে, দুপচাঁচিয়ার ১৬টি ইউনিটের মধ্যে দেবড়াশন, আলতাফনগর, চৌমুহনী বাজার, আমষট্ট, শেরপুর, কেউৎ ও বাজারদীঘির আটটি ইউনিটে বোরিংসহ কয়েকটির অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪০ শতাংশ কাজ করে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা (বিল) তুলে নিয়েছে তারা। এর পর দেড় বছর ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার।
প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষ খুশি হয়েছিলেন বলে জানান দুপচাঁচিয়ার গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ আবু তাহের। তাঁর ভাষ্য, মাঝপথে কাজ বন্ধ করায় এলাকার মানুষ বলছে, প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যানরা মেরে খেয়েছে। এ কারণে কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষকে এলাকায় গিয়ে মানুষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন কাজ হচ্ছে না।
দুপচাঁচিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া 
দিচ্ছেন না। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় চেয়ারম্যানরা কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভার সিদ্ধান্তে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। এ সিদ্ধান্তও ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
একই অবস্থা আদমদীঘিতেও। এ উপজেলায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক টাকা তুলে নিয়েছে। এখানে ২৬টি ইউনিটের মাধ্যমে তিন হাজার মানুষকে সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু ছয়টি ইউনিয়নে ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে ১২টি। আদমদীঘি সদর, নসরৎপুর, চাপাপুর, দুর্গাপুর, কুন্দ্রগ্রাম ও ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নে এসব স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ মাঝপথে আটকে থাকায় এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের চোর অপবাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নসরৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা। তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকায় যেতে পারছি না। দোষ করছে একজন, নাম হচ্ছে আরেকজনের।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আমাদের কটু কথা শোনান এ প্রকল্প নিয়ে। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’ অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্সের কর্ণধার আমান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন বন্ধ রেখেছেন।
বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঠিকাদারকে বারবার প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি যোগাযোগ করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ না করলে কার্যাদেশ বাতিল করে বিকল্প উপায়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বে ডেভেলপমেন্টস ও আনোয়ার গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
  • অ্যাপল পিছিয়ে পড়ল
  • ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের দায় শোধ করতে পারবে ব্যাংক
  • ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা
  • ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ
  • কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি 
  • ভোক্তাস্বার্থ সুরক্ষা জরুরি
  • বাঘাইছড়িতে অক্সিজেন না পেয়ে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
  • দিনাজপুরে চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় ৩১৬ মিলের নিবন্ধন বাতিল
  • বাঘাইছড়িতে অক্সিজেন না পেয়ে শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পরিবারের