নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমূল সংস্কার দরকার: আখতার হোসেন
Published: 28th, March 2025 GMT
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বস্তরে আমূল সংস্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, “গণহত্যার বিচার এ সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিচার বিলম্বিত হলে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করবে। তাই দেশ থেকে গণহত্যার সংস্কৃতি নির্মূল করতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুর জেলা পরিষদ হলরুমে এনসিপির উদ্যোগে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিবিদ, ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, “উত্তরাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। সেই বঞ্চনা দূর করতে বিপ্লব পরবর্তী জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন বন্দোবস্ত নিয়ে হাজির হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে বিচারিক কার্যক্রম সহজ করতে রংপুরে হাইকোর্টের আঞ্চলিক সেবা চালু করা এবং শ্রমঘন শিল্পায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এনসিপি।”
এ সময় আখতার হোসেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দলের নেতাকর্মীদের নতুন পরিকল্পনার বার্তা সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা/আমিরুল/রাজীব
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আখত র হ স ন নত ন ব
এছাড়াও পড়ুন:
জায়নবাদ যেভাবে ইসরায়েলকে দুই ভাগ করে ফেলছে
এ মাসের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন ওয়াশিংটন সফর থেকে ফিরলেন, তখন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ ইরানে আক্রমণ চালানোর জন্য প্রচারণা শুরু করেন।
বেনি গ্যান্টজের এই প্রচারণা এমন এক সময়ে এল, যখন প্রলম্বিত গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলে সামাজিক অস্তিরতা বেড়েই চলেছে।
যদিও সংসদীয় বিরোধী দল নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখেছে। যুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়ের’ দাবি যে বিভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়, সেটা তাঁরা স্বীকার করছেন না। এরপরও ইসরায়েল যদি ইরানে আক্রমণ চালিয়ে বসে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ডুবে যাবে। একই সঙ্গে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান ইসরায়েলের কৌশলগত বিভ্রমকে আরও গভীর করেছে। ইসরায়েলকে আরেকটি কানাগলির মধ্যে আটকে দিচ্ছে।
এই আগ্রাসী পদক্ষেপ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে সামনে আনছে। দৃশ্যমান বাস্তবতার আড়ালে ইসরায়েলি সমাজে গভীর দ্বন্দ্ব চলছে। আর সেটা হচ্ছে, ‘তেল আবিবকেন্দ্রিক রাষ্ট্র’ এবং ‘তথাকথিত জুডিয়া ও সামারিয়াকেন্দ্রিক রাষ্ট্র’–এর (অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েল এ নামে ডাকে) মধ্যকার পরিচয়গত সংঘাত।
ইসরায়েলি সমাজের ভেতরকার এই বিভাজন ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। সম্প্রতি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নজিরবিহীনভাবে সরকারের শ্রেণিবদ্ধ তথ্য তিনি একজন মন্ত্রী ও সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করেছিলেন।
এর চেয়ে গুরুতর ঘটনা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এ সপ্তাহে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। এর কারণ হলো, সেই সভায় শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
একই সঙ্গে আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিরাপত্তা–সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস এবং পুলিশের মধ্য কাহানিস্ট (ইসরায়েলের একজন রাব্বির প্রচারিত রাজনৈতিক মতাদর্শ) কর্মকাণ্ডের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে শিন বেত।
ডানপন্থীদের মধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মিত্র, যেমন মোসে ইয়ালন, ডান মেরিডার ও ডান হ্যালুটজ (তাঁরা সবাই তাঁদের কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত) সবাই নিজেদের অবস্থান পাল্টাছেন। নিষ্ক্রিয় বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতো নন তাঁরা। তাঁরা বলছেন যে হুমকি কেবল যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, নেতানিয়াহু সমাজকে বড় যে রূপান্তরের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, সেটাও একটা বড় হুমকি।ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে বিভাজন স্পস্ট। পুলিশ এখন একজন ডানপন্থী ত্রাতাবাদী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রীর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি পশ্চিম তীরে সেটলারদের সহিংসতায় লাগাম টানতে রাজি নন।
এর বিপরীতে শিন বেত রাষ্ট্রযন্ত্র ও নেতানিয়াহুর বিরোধী পক্ষের সঙ্গে যুক্ত। আর এই বিভাজন সংবাদমাধ্যমেও জগতেও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
চূড়ান্ত বিচারে আজ জায়নবাদ পরস্পরবিরোধী নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দুটি রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এখন সেটা রাষ্ট্রের মধ্যেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে।
ডানপন্থীদের মধ্যেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রাক্তন মিত্র, যেমন মোসে ইয়ালন, ডান মেরিডার ও ডান হ্যালুটজ (তাঁরা সবাই তাঁদের কট্টর দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত) সবাই নিজেদের অবস্থান পাল্টাছেন। নিষ্ক্রিয় বিরোধী সংসদ সদস্যদের মতো নন তাঁরা। তাঁরা বলছেন যে হুমকি কেবল যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, নেতানিয়াহু সমাজকে বড় যে রূপান্তরের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, সেটাও একটা বড় হুমকি।
আরও পড়ুনহয় ফ্যাসিবাদ নয়তো জায়নবাদকে বেছে নিতে হবে০৫ নভেম্বর ২০২৪মোসে ইয়ালন সেনাপ্রধান থাকাকালে অধিকৃত পশ্চিম তীরে মারাত্মক অভিযান চালিয়েছিলেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার তিনি তাঁর অনুসারীদের হতাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারে ইয়ালন বলেছেন, তিনি আশা করেন যে ইসরায়েল গাজায় ‘শিশু হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনী যেন না পাঠায়’। তিনি স্বীকার করেন যে উত্তর গাজায় ইসরায়েল জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে।
সাবেক বিচারপতি মেরিডর রাজনীতিতে বর্ণবাদের উত্থান নিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে বর্ণবাদী রাজনৈতিক মঞ্চের কারণে একবার রাব্বি মেইর কাহানের দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি পশ্চিম তীরে সেটলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দাবি জানান। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে জনমিতিক যে বাস্তবতা, তার কারণে গাজা ও পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করা অসম্ভব।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর সাবেক কমান্ডার হ্যালুটজও প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সতর্ক করেন যে এই যুদ্ধ কেবল ঘৃণাকেই গভীর করবে এবং শত্রুকে শক্তিশালী করবে।
হারেৎজে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে হ্যালুটজ উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে ভয়ে তাঁর সন্তান ও নাতি–নাতনিদের সবাই ইসরায়েল ছেড়ে চলে যেতে পারেন। তিনি বলেন যে নেতানিয়াহুর সামাজিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্প তেল আবিবের দখলদারত্ব ও উদার জীবনের মধ্যে যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য, সেটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
এই বক্তব্যগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে ইসরায়েলি সমাজের বামপন্থীরা তো বটেই, জায়নবাদী ডানপন্থীরাও যুদ্ধ অব্যাহত করতে চাইছে না। এই অংশ এখন সাংস্কৃতিকভাবে আধিপত্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডানপন্থীরা যখন প্রকৃত বিকল্প প্রস্তাব করতে পারছে না, তখন মেসায়নিক ডানপন্থীরা দীর্ঘস্থায়ী মতাদর্শিক লড়াইয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছে, যেটা একসময় ইসরায়েলের পরিচয়কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েল যদি কোনো কিছুতে সফলতা পায় সেটা হলো, গণহত্যামূলক সহিংসতা চালানোর পরও তাদের সমাজের মধ্যে একটা ‘স্বাভাবিকতা’ বজায় রাখা।
ফিলিস্তিন ও লেবাননে তারা হাজার হাজার মানুষকে তারা হত্যা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি জনজীবনে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
আরও পড়ুনইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা: অপরাধের শত বছর, অন্যায়ের ৮০, পাপের ৬৯ ১০ অক্টোবর ২০২৩হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগ, দেশে দেশে প্রতিবাদ ও অর্থনৈতিক বর্জনের পরও ইসরায়েলি সমাজ নির্লিপ্ত।
‘আমরা কিছু জানি না’, এই দাবি আর বেশি দিন টিকে থাকবে না। হাজার হাজার সেনা যুদ্ধে তাঁদের ভূমিকার ভিডিও চিত্র ধারণ করেছেন এবং সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। সেটা তারা জানেন। সবাই সেটা জানছেন। ভয়টা আসে অজ্ঞনতা থেকে নয়, ভয়টা আসে নির্লিপ্ততা থেকে। একটি সমাজের সত্যিকারের বিপদ নিহিত থাকে প্রতিদিনকার স্বচ্ছন্দ্য বজায় রেখে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা এবং শিশু হত্যার ন্যায্যতা উৎপাদন এবং প্রশ্ন না করার মধ্যে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখলকৃত পশ্চিম তীরের বিশৃঙ্খলা ইসরায়েলি নাগরিক জীবনকে প্রভাবিত করছে। সাংস্কৃতিক উত্তেজনা বাড়ছে। জাতীয় পরিচয়কে নতুনভাবে বিন্যস্ত করছে।
নেতানিয়াহুর প্রাক্তন মিত্রদের সবাই যে উদ্বেগটি জানিয়েছেন সেটা হলো, তেল আবিবের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ইসরায়েল ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সেটা ঘটলে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে যেমন বিপর্যয় নেমে আসবে আবার বাইরের দেশে লিবারেল ভাবমূর্তিও নষ্ট্ হবে।
আবেদ আবু শাহদেহ জাফার একজন রাজনৈতিক কর্মী
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত