ফতুল্লায় খালের ময়লা রাস্তায় ফেলে এবং বাঁশ দিয়ে প্রধান সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে এক বিএনপি নেতা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে লাখো মানুষ।

এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। রাস্তা বন্ধ হওয়ায় চলাচল করতে না পারায় তীর্যক মন্তব্য করছেন পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন চালকরাও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফতুল্লার সেহাচর তক্কারমাঠ এলাকা থেকে নিয়ে বুড়ির গ্যারেজ পর্যন্ত দীর্ঘ আরসিসি ঢালাইয়ের মূল সড়কের উপরে খাল থেকে উত্তোলন হওয়া ময়লা ও পঁচা কাঁদা মাটি রাস্তার মাঝে স্তুপ করে রেখেছে অলিউল্লাহ খোকন নামে এক বিএনপি নেতা। সে সেহাচর এলাকার বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানায়, ফতুল্লার সেহাচর তক্কার মাঠ এলাকা থেকে দক্ষিনে বুড়ির গেরেজের দিকে একটি খাল অবস্থিত। এই খালটি বিগত সময়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে খনন করা হয়েছিল। এছাড়াও বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও বিগত সময়ে তা পরিস্কার করা হয়েছিল।

এবার বর্ষার আগেই খাল খনন ও পরিস্কারের নামে এলাকার প্রায় প্রতিটি বসত বাড়ি থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন অলিউল্লাহ খোকন। কোনো কোনো বাড়ি থেকে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে খোকনের নেতৃত্বে।

চাপে পড়ে স্থানীয়রা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি বাড়ি থেকে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করে বেকু দিয়ে খাল খননের পর এলাকার প্রধান সড়কের উপর সেই কাঁদা মাটি ও আবর্জনার স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

নিয়মানুসারে ড্রাম ট্রাক দিয়ে কাদামাটি ও আবর্জনা অন্যত্র অপসারণ করার কথা থাকলেও রাস্তার উপর স্তুপ করে রেখে গোটা রাস্তা আবর্জনায় সয়লাব করে রেখেছে অলিউল্লাহ খোকন। এমনকি গত তিনদিন ধরে রাস্তার মাঝে বাশ দিয়ে সেই রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘রাস্তা বন্ধ হওয়ায় আমরা বিপাকে রয়েছি। চলাচল করতে পারছি না। প্রতিবাদ জানাতে গেলে উল্টো হুমকি স্বরুপ কথা বলে। চোখ রাঙায়। এই ভাবে এখন বিএনপির বদনাম করে যাচ্ছে অলিউল্লাহ খোকন।’

আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে রিকশা বা অন্যান্য গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। বিকল্প শাখা সড়ক দিয়ে দীর্ঘপথ ঘুড়ে যেতে হচ্ছে। ভাড়াও দিতে হচ্ছে দ্বিগুন। এসব কিছুই কর্নপাত বা আমলে নিচ্ছে না ওই বিএনপি নেতা।’

এই বিষয়ে জানতে অলিউল্লার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন র য়ণগঞ জ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’

দলা পাকানো চালের গুঁড়া চ্যাপটা করে ছোট ছোট বড়া বানানোর পর সেগুলো কড়াইয়ে দিচ্ছিলেন লাভলী বেগম (২৫)। চুলায় খড়ের আগুন কমে আসছিল বারবার। মাথা নিচু করে চুলার নিচ দিকে ফুঁ দিতে দিতে ধোঁয়ায় নাস্তানাবুদ অবস্থা। কুলায় যে পরিমাণ চালের গুঁড়া, তাতে ২০ থেকে ৩০টা বড়া হবে।

ঈদের আয়োজন বলতে কি শুধু এই কয়টি বড়া? লাভলী বলেন, ‘মাইয়ে (মা) কিছু গুড় আনছিলা। গুড়ের হান্দেশ (সন্দেশ) করছি। আর কিতা করমু। সকালে বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু। ইলাই আমরার ঈদ।’ কথা শেষের সঙ্গে সঙ্গে লাভলী বেগমের একটা দীর্ঘশ্বাস যেন হাওরের বাতাসে মিশে গেল। তাঁর পাশে তখন পাখির ছানার মতো বসা দুই সন্তান সাহানা (৫) ও আবির (৩)। তাদের চোখ কড়াইয়ে, তেলের ওপর ভাসতে থাকা বড়ার দিকে।

লাভলী বেগমের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে। গতকাল রোববার পড়ন্ত বিকেলে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় লাভলী ও তাঁর পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার সময় ওই গ্রামের যাওয়ার পর প্রথম দেখা হয়েছিল। বন্যা সব শেষ করে দিয়ে গেছে তাঁদের। হাওরের ঢেউয়ে তখন ঘরটি ভেঙে পড়ে।

লাভলী তিন সন্তান নিয়ে মা সবুরা বেগমের সংসারে আছেন। বাবা নেই; নেই মানে অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছেন বহু আগে। লাভলীরও একই অবস্থা, স্বামী আরেকটা বিয়ে করে আলাদা থাকেন। এখন সবুরার আটজনের সংসার। ছেলে জহুরুল ইসলামের (২০) স্ত্রী ও এক মেয়ে আছে। এই সংসার মূলত সবুরা বেগম ও ছেলে জহুরুল ইসলামের শ্রম-ঘামে চলে। সবুরা, জহুরুল দুজনই শ্রমিক। যখন যে কাজ পান, সেটাই করেন, কিন্তু অভাব যায় না।

ঘরের চুলায় তেলের বড়া ভাজছেন লাভলী বেগম। সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দিগাঁও গ্রাম থেকে গতকাল রোববার বিকেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ