সৌদি আরবে তাহলে কি রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হচ্ছে
Published: 28th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজান মাস শেষ হয়ে আসছে। এরপরই চাঁদ দেখা সাপেক্ষে মুসলিম বিশ্ব উদ্যাপন করবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে চাঁদ দেখা নিয়ে এবারও কি বিতর্ক দেখা দিতে পারে—এই প্রশ্ন সামনে আসছে। কারণ, অতীতে মাঝেমধ্যে চাঁদ দেখা নিয়ে নানা সময়ে বিতর্ক দেখা গেছে।
এবার বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রান্ত থেকে আগামীকাল শনিবার ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা যাবে না। অনেকে আবার প্রত্যাশা করছেন, আগামীকাল চাঁদ দেখা যেতে পারে।
তবে অনেকে মনে করছেন, চাঁদ দেখা না গেলেও সৌদি আরব আগামী রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দিতে পারে।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে অনেকবার সৌদি রাজতন্ত্র চাঁদ না দেখা সত্ত্বেও ‘ভুয়া’ চাঁদ দেখার কথা বলে ঈদ উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যখন বলেছেন, চাঁদ দেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তখনই এ ধরনের কাজ করেছে সৌদি সরকার। সৌদি সরকার কখনো এসব সমালোচনার জবাব দেয়নি।
তাহলে বিতর্কের পেছনে কী আছে
ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী, ধর্মীয় নানা আচার–অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায় চান্দ্রমাস অনুসরণ করে থাকে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান পুরোপুরি চান্দ্রমাসের ওপর নির্ভর করে ২৯ বা ৩০ রোজা হয়ে থাকে।
পবিত্র রমজান মাসের শেষে চাঁদ দেখার ওপর ঈদুল ফিতর নির্ভর করে। কিছু কিছু দেশ স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ঈদের দিন ঘোষণা করে। আবার অনেক দেশ চাঁদ দেখার বিষয়টি সৌদি আরবের ওপর নির্ভর করে।
এবার বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বেশির ভাগ প্রান্ত থেকে আগামীকাল শনিবার ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা যাবে না। অনেকে আবার প্রত্যাশা করছেন, আগামীকাল চাঁদ দেখা যেতে পারে।যুক্তরাজ্যের মতো যেসব দেশে চাঁদ দেখার সরকারি কোনো কমিটি নেই, সেসব দেশের মুসলিমরা সৌদি আরবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে থাকেন। অবশ্য সৌদি আরবের কিছু কিছু ধর্মীয় পণ্ডিত এভাবে সৌদির ওপর নির্ভর না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
সৌদি আরবের বাৎসরিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শাওয়াল মাসের প্রথম দিন; অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন হচ্ছে ৩০ মার্চ। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, টেলিস্কোপ বা অন্যান্য যেসব উপায়ে চাঁদ দেখা যায়, সেসব উপায়ে আগামীকাল শনিবার চাঁদ দেখা সম্ভব হবে না।
অনেক মুসলিম দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে একই দিন পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের প্রত্যাশা করছে। আবার অনেক দেশ আগামী রোববার চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সোমবার ঈদ উদ্যাপনের ঘোষণা দিতে পারে।
অতীতে চাঁদ দেখা নিয়ে যত বিতর্ক
‘আমি যে কাউকে চাঁদের ছবি তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি’।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সৌদি সরকার যখন পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দেয়, তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে ওই দিন চাঁদ দেখা অসম্ভব।
ওই বছরের ২০ এপ্রিল সৌদি আরবে চাঁদ দেখা কমিটি চাঁদ দেখার ঘোষণা দিয়ে ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দিয়েছিল। ওই ঘোষণার পর কুয়েতের প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আদেল আল–সাদৌন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘এই সন্ধ্যায় আরব উপদ্বীপে চাঁদ দেখা অসম্ভব।’
আদেল বলেন, ‘আমি প্রমাণ হিসেবে চাঁদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য যে কারও প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’ কিন্তু আদেল চ্যালেঞ্জ জানানোর পরও ওই দিন সৌদি আরব সরকারিভাবে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছিল।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সৌদি সরকার যখন পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঘোষণা দেয়, তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, বৈজ্ঞানিকভাবে ওই দিন চাঁদ দেখা অসম্ভব।অনেক পর্যবেক্ষক সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে চাঁদের একটি ছবি উপস্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো ছবি সরবরাহ করা হয়নি। অবশ্য সৌদি জ্যোতর্বিজ্ঞানী মুলহাম আল–হিন্দি চাঁদের অনুজ্জ্বল একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, চার্জ–কাপলড ডিভাইস (সিসিডি) ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে ওই ছবি তোলা হয়েছে।
২০২৪ সালে সৌদি আরব ৬ জুন ঈদুল আজহার ঘোষণা দিয়েছিল। সাধারণত ঈদুল ফিতরের ২ মাস ১০ দিন পর ঈদুল আজহার চাঁদ দেখা যায়।
তখনো জ্যোতির্বিজ্ঞানী কমিটি বলেছিল, ওই দিন নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব নয়। তারপরও তখন সৌদি সরকার ঈদের ঘোষণা দিয়েছিল।
২৯ মার্চ চাঁদ দেখা সম্ভব নয়
কাতার সরকারের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চলতি বছর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, ২৯ মার্চ শনিবার সূর্যের সঙ্গে চাঁদের সংযোগ ঘটবে।
যুক্তরাজ্যের হিজ ম্যাজেস্টি’স নটিক্যাল আলমানাক অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব বা বাহরাইনে ওই দিন চাঁদ দেখা যাবে না।
জ্যোতির্বিদ্যা–সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান বলেছে, পরদিন আগামী রোববার নতুন চাঁদ ‘সহজে দেখা’ যাবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যাকেন্দ্র (আইএসি) একই রকম ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, আগামীকাল শনিবার নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেও নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব নয়।
সৌদি আরব উম্ম আল-কুরা নামে বাৎসরিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। এই ক্যালেন্ডার গণনাভিত্তিক এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো আগাম চিহ্নিত করা হয়। এই উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শাওয়াল মাসের প্রথম দিন; অর্থাৎ ঈদুল ফিতর হবে ৩০ মার্চ রোববার।আইএসির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব দেশে সঠিকভাবে চাঁদ দেখা দরকার, সেসব দেশে পবিত্র রমজান ৩০ দিন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোমবার ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হবে।
সৌদি আরব উম্ম আল–কুরা নামে বাৎসরিক ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে থাকে। এই ক্যালেন্ডার গণনাভিত্তিক এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ তারিখগুলো আগাম চিহ্নিত করা হয়।
এই উম্ম আল-কুরা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শাওয়াল মাসের প্রথম দিন; অর্থাৎ ঈদুল ফিতর হবে ৩০ মার্চ রোববার।
এ কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ ঈদুল ফিতর আগামী রোববার হবে বলে ঘোষণা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে তারা শনিবার চাঁদ দেখা গেল কি গেল না, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ল ন ড র অন য য় ওই দ ন সব দ শ করছ ন সরক র আরব র
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড়
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতে।
গতকাল (সোমবার) ঈদের দিন খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে জেলার বাইরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল বেশি। আশা করা যাচ্ছে, আজ থেকে জেলার বাইরের পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।
ঈদের দিন খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। আলুটিলা, রহস্যময় গুহা, জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কসহ সব জায়গায় পর্যটকের ভিড় ছিল।
জেলায় অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ থাকে আলুটিলা ও আলুটিলার ব্যতিক্রমী ব্রিজ। এ ছাড়াও রহস্যময় গুহা ও রিছাং ঝরনায় প্রাণ জুড়ান পর্যটকরা।
শহরের অদূরে পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, ঝুলন্ত সেতু, নয়াভিরাম লেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়াও খাগড়াছড়িতে দেখার মতো রয়েছে মায়াবিনী লেক, হাতি মাথা পাহাড়, দেবতা পুকরু, তৈদু ছড়া ঝরনা, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও পানছড়ির অরণ্য কুঠির।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা জেসমিন আক্তার ও মো. ফিরোজ জানান তারা পাহাড়ের অপরূপ সৈন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার নিয়ে খাগড়াছড়ি এসেছেন। পাহাড় এবং প্রকৃতির অপরূপ সৈন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ!
খাগড়াছড়ির হর্টিকালচার পার্কের ব্যবসায়ী টিটু চাকমা জানান দীর্ঘ একমাস রোজাতে পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসা হয়নি। ঈদের দিন প্রচুর পর্যটক এসেছেন। বিক্রি বেড়েছে। আগামীতে বিক্রি আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
হর্টিকালচার পার্কের দায়ত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের দিন প্রায় দুই হাজার পর্যটক এসেছেন পার্কে। আগামীতে আরো আসবেন।
একই আশাবাদ জানালেন, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের কোকোনাথ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘‘আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের দিন প্রায় দুই হাজার পাঁচশ পর্যটক এসেছেন। পর্যটকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’’
খাগড়াছড়ি ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশাত রায় বলেন, ‘‘পর্যটকেরা যাতে নিরাপদে ঘুরতে পারেন সে ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ।’’
রূপায়ন//