সকালবেলা ব্যাংকের দরজা খোলার আগেই কলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে অন্তত ১০০টি চেক ভেতরে ঢুকে গেছে। সাড়ে নয়টার দিকে গেট খোলার পরে আর চেক নেওয়া হচ্ছিল না। এ নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষকেরা। বন্ধের দিনে দুই ঘণ্টার জন্য ব্যাংক খুলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের (স্কুল ও কলেজের) বেতন দেওয়ার ঘোষণায় রাজশাহীতে সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখার সামনে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

আজ সকাল পৌনে নয়টার দিকে ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কলাপসিবল গেট তখনো লাগানো আছে। সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকেরা ভেতরের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা ভেতর থেকে বলছেন, চেক নেওয়া হবে না। বাইরে তখনই শ খানেক শিক্ষক এসে পড়েছেন। নিচ থেকে আরও শিক্ষক আসছিলেন। তাঁরা কী করবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না।

সকাল সোয়া নয়টার দিকে এসেছিলেন রাজশাহী নগরের রানীবাজার গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষক আরামুল হক। তিনি বলেন, এত সকালে এসেও তিনি চেক জমা দিতে পারেননি। একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিরিনা পারভীনও চেক জমা দিতে পারেননি। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘২৭ রমজানের রাত গেল, মানুষ রাত জেগেছে। তারপর সাতসকালে উঠেই দৌড় দিয়েছেন ব্যাংকে। এটা একটা কাজ! আবার বলছে, টাকা নেই, সাড়ে ১০টায় টাকা আসবে, তারপরে বেতন দেওয়া হবে।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জের একজন ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে কোনো কথাই বলতে চান না। অন্যদিকে তাকিয়ে বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে নাটক করা হচ্ছে। এখন কথা বলেই আর কী করব?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরে অবশ্য বাইরের শিক্ষকদের চেক নেওয়া শুরু হয়। রাজশাহীর সোনালী ব্যাংকের সব শাখাতেই একই অবস্থা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের চারঘাট শাখায় এসেছিলেন উপজেলার ভাটপাড়া হাইস্কুলের শিক্ষক এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেতনের এসএমএস পেয়েছি গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে। সকালে এসে ব্যাংকে এই ভিড়। আপনারা এসে দেখে যান বেতন নিয়ে শিক্ষকদের শেষ পর্যন্ত কী অবস্থা হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।

সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।

বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’

তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।

প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’

এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ