নানা জটিলতায় টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার বেতন পেয়েছেন যশোরের বীর প্রতীক ঈসা হক কলেজের একজন শিক্ষক। ঈদ বোনাসও দেওয়া হয়েছে। তবে টাকা তুলবে পারবেন কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার ব্যাংক খোলা রাখায় এ দিন সকালে এসে লাইনে দাঁড়ান। কোনো ঝামেলা ছাড়াই টাকা তুলতে পেরে যেন সত্যিকারের ঈদের চাঁদ হাতে পান। সারা দেশে তার মতো ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী আটকে থাকা বেতন পেয়েছেন।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন তোলার সুবিধার্থে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের শাখা খোলা রাখা হয়। এ দিন সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। যেসব শাখায় বেতন হয় সেখানে ভিড় করেন শিক্ষকরা। অন্য অনেক গ্রাহকও এদিন এসেছেন টাকা উঠাতে বা জমা দিতে। মূলত রাষ্ট্রীয় মালিকানার এই চার ব্যাংকের মাধ্যমেই সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন হয়।

জানা গেছে, প্রত্যেক বিভাগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন দেওয়ার জন্য প্রধানত একটি করে ব্যাংক নির্ধারিত আছে। অবশ্য শিক্ষক প্রতিষ্ঠান এলাকায় ওই ব্যাংক না থাকলে সেখানে যে সরকারি ব্যাংক রয়েছে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়। 

খুলনা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক রূপালী। ব্যাংকটির যশোর কর্পরেট শাখা থেকে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি শিক্ষকের বেতন হয়। শুক্রবার এই শাখা থেকে এক হাজার চেকের বিপরীতে পরিশোধ হয়েছে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি। বিভিন্ন গ্রাহক এদিন জমা দিয়েছেন ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

রূপালী ব্যাংকের যশোর কর্পরেট শাখার ব্যবস্থাপক (এজিএম) শহীদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, টাকা তোলার জন্য সকাল ৯টা থেকে শাখার সামনে লাইন ধরেন শিক্ষকরা। সুশৃঙ্খলভাবে তারা প্রত্যেককে টাকা দিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, 'বৃহস্পতিবার প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। ছুটির দিনেও যেন সব কর্মী উপস্থিত হন সে ব্যবস্থা করা হয়। আবার এটিএম বুথেও পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়। যে কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুশৃংখলভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।'

জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (ইএফটিএন) পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। তবে এ ব্যবস্থা চালু করতে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। কারও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিজিট ভুল,  কারও আবার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নামের অসঙ্গতিসহ বিভিন্ন ভুলের কারণে গত ডিসেম্বর থেকে অনেকের বেতন-ভাতা আটকে ছিল। জটিলতা নিরসন করে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার অনেকের অ্যাকাউন্টে শেষ সময়ে বেতন দেওয়া হয়। যে কারণে তারা টাকা তুলতে পারেননি। শুক্রবার থেকে টানা ৯দিন ছুটি। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় সরকারি চার ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দেয়। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক রব র ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাঙামাটি কারাগারে কারাবন্দিদের ঈদ উদযাপন

ঈদের দিন পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনের সুযোগ সবার থাকে না; বিশেষ করে কারাগারে বন্দিদের। বিষয়টি ভেবে বন্দিদের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছে রাঙামাটি কারা কর্তৃপক্ষ। কারাবন্দিরা যেন ঈদে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন সেজন্য ঈদের বিশেষ নামাজ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা রেখেছেন কারা কর্তৃপক্ষ।  

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, সকাল সাড়ে আটটায় কারাবন্দিরা কারাগারের মধ্যেই আদায় করছেন ঈদের নামাজ। এরপর সবাই একসঙ্গে বসে ঈদের সেমাই খেয়েছেন। বন্দিদের জন্য  দুপুর ও রাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন। 

ঈদের এই বিশেষ দিনে বন্দিরা যাতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারে এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষ স্বজনদের সুযোগ দিয়েছেন। যারা দেখা করতে এসেছেন তাদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। এমন আয়োজনে খুশি স্বজনরাও।

কারাবন্দির সাথে দেখা করতে আসা স্বজন নূর মোহাম্মদ জানান, খুব সুন্দর আয়োজন করেছে এবার জেল কর্তৃপক্ষ। গত বছরও আমি এসেছিলাম আত্মীয়র সাথে দেখা করতে, কিন্তু এবারের আয়োজন ভিন্ন মনে হয়েছে। তারা আমাদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে বরণ করেছে। আমি আত্মীয়র সাথে কথা বলেছি, তিনি জানিয়েছেন জেলের পরিবেশ ভালো, সবাই মিলে ঈদের নামাজ শেষে সেমাই খেয়েছেন। দুপুর ও রাতে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারাগারে এ ধরনের পরিবেশ সত্যি খুব  ভালো লাগছে।

রাঙামাটি কারাগারের জেল সুপার দিদারুল আলম বলেন, ‘‘স্বজনহীন কারাবন্দিদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে কারা কর্তৃপক্ষ এমন আয়োজন করেছে। আমরা চাই জেলের বিষয়ে মানুষের গতানুগতিক যে ধারণা, সেটা পরিবর্তন হোক।’’

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারাবন্দি ও স্বজনদের নিয়ে ভিন্ন কিছু আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেই এমন আয়োজন সম্ভব হয়েছে বলে জানান দিদারুল আলম। 

শংকর//

সম্পর্কিত নিবন্ধ