প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঐতিহাসিক চীন সফরে দেশটির সরকার ও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের প্রায় ৩০টি কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এটা প্রধান উপদেষ্টা বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানোর পর এসেছে।

চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ সফর।’

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এই সফর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় অধ্যাপক ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বাংলাদেশে চীনের বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়ার অনুরোধ জানান।

আশিক চৌধুরী জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট নিশ্চিত করেছেন, চীনের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন কেন্দ্র বৈচিত্র্যময় করতে চাইলে বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য তিনি উৎসাহিত করবেন। তিনি বলেন, ‘এই সফর চীনের অনেক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার।’

আজ শুক্রবার অধ্যাপক ইউনূস ও আশিক চৌধুরী বেইজিংয়ে কিছু বৃহৎ চীনা কোম্পানিসহ ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন খাতে বিশেষ করে উন্নত টেক্সটাইল, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুনঢাকা-বেইজিং এক চুক্তি ৮ সমঝোতা স্মারক সই৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনশান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনের জোরালো ভূমিকা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা৮ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হওয়া এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্বের মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করা হয়।

এর আগে সকালেই জনসাধারণের জন্য মাঠে প্রবেশের গেটগুলো খুলে দেওয়া হয়। এ সময় প্রতিটি মানুষকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। পুরো মাঠটি ছিল সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। ছিল ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোন। যার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটিকে নজরদারিতে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাঠে র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন ছিল। এছাড়াও প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল। 

এই জামাতে বিভিন্ন জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করতে পেরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান ইতিমধ্যেই বড় ঈদের ময়দান ও জামাত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বড় জামাতে অংশগ্রহণ করে তাদের অনুভুতিও ছিল বেশ। ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে মাঠে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। 

গাইবান্ধা থেকে আগত জাহিদ হাসান বলেন, এটাই গোর-এ শহীদ ময়দানে আমার প্রথম ঈদের নামাজ। অনুভুতিটা অনেক সুন্দর। এখানকার আয়োজনসহ সব বিষয় ভালো লেগেছে। আল্লাহর কাছে চাওয়া ছিল যে ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য চাওয়া ও দেশের জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল যে এখানে নামাজ আদায় করবো, এবারে তা করতে পেরেছি। 

গাজীপুর থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, এই মাঠে নামাজ পড়ার জন্য এসেছি। এত বড় জামাতের কথা শুনেছি, টিভিতে দেখেছি। এই প্রথম এখানে নামাজ আদায় করলাম। আমাকে খুব ভালো লাগছে। 

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা থেকে আসা তারেক রহমান বলেন, এখানে লাখো মুসল্লির সমাগম হয়। এটা জেনে আমি এখানে এসেছি। এবারে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং লোডশেডিং ছিল না। সেদিক দিয়ে রমজান এবং সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে পারলাম, সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ। 

জয়পুরহাটের জাহিদ হোসেন বলেন, দিনাজপুরে আমার দাদার বাড়ি। এখানে নামাজ করতে পেরেছি এবং এখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল না। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকলে অনেকেই বিরক্ত হয়। এখানে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় হয়েছে। এখানে আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়া কামনা করেছি। 

দিনাজপুর শহরের লালবাগ এলাকার সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ছিল, সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করিয়েছেন।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হুসাইন বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ গোর-এ শহীদ ঈদগাহ ময়দান। কথিত আছে, বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ জামাত এখানে অনুষ্ঠিত হয়। আমি সর্বপ্রথম এই জামাতে অংশগ্রহণ করেছি। আমি দেখেছি, দিনাজপুরবাসী ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও মানুষজন এখানে নামাজ আদায় করতে এসেছেন। আনন্দ, উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নামাজ আদায় হয়েছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সুশৃঙ্খলভাবে এবং বেশি মুসল্লির উপস্থিতিতে এই নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নামাজে আমাদের পুলিশ নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রেখেছিল। আমরা এক সপ্তাহ ধরে এই মাঠকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিলাম। কোনো ধরনের অঘটন ঘটতে পারেনি। 

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, সর্বসাধারণ জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, যেন সবাই সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসেন। তাদের জন্য একটা অনুকূল বা নামাজের উত্তম পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাই। 

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। 

২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ