চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী সোম কিংবা মঙ্গলবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে। ঈদের আনন্দ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছেন অনেকেই। যারা ঢাকা থেকে নৌপথে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান, তাদের বেশিরভাগের প্রথম গন্তব্য সদরঘাট নৌ টার্মিনাল। এখান থেকেই লঞ্চে করে যাত্রা করেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের উদ্দেশে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা গেছে সেই চেনা দৃশ্য—যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চে প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।
ঈদযাত্রা নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই বাতিল করা হবে লঞ্চের লাইসেন্স।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাবে। দুপুরের মধ্যে বেশকিছু লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে।
টার্মিনালে দেখা গেছে, পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। যাত্রীদের চাপও অনেক। লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছেন। কেবিনের টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে যাচ্ছে।
এমভি সুরভী-৭ লঞ্চের সামনে কথা হয় রাজ্জাক হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করব। রাস্তায় যানজট হতে পারে, তাই আগেভাগেই বাসা থেকে চলে এলাম। চাহিদা বেশি থাকলেও কেবিন কম। আমাদের কেবিন বুকিং করা ছিল। লঞ্চের যাত্রায় কোনো কষ্ট নেই। তাই, বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে প্রতিবছরই লঞ্চে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে যাই। যারা এখন আসছেন, তারা ডেকে বসে যাবেন।”
বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চে কথা হয় আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, চার বছর আগে ঈদের সময় লঞ্চে জায়গা পাওয়া যেত না। অনেক সময় ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যেতে হতো। আজ আগের মতো ভিড় না থাকলে যাত্রীর চাপ আছে মোটামুটি। লঞ্চ বলা হলেও এটা বিরাট একটা জাহাজ। হাজার হাজার লোক উঠলেও বোঝা যায় না। ডেকে শুয়ে-বসে যাওয়া যায়। বাসে ভ্রমণ করলে আমার পা ব্যথা করে। এ কারণে বাসে আমি যাই না।”
এমভি জামাল-৮ লঞ্চের যাত্রী আলেয়া বেগম বলেন, “আমি পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় যাব। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়। রাস্তায় জ্যাম হতে পারে, তাই আগেভাগে বাসা থেকে বের হয়ে চলে এসেছি। লঞ্চের যাত্রা আরামদায়ক। এবার আরামে বাড়ি যেতে পারব।”
এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার কালাম হোসেন বলেন, “আমাদের লঞ্চে ৮০টি কেবিন আছে। ইতোমধ্যে সব বুকিং হয়ে গেছে। যাত্রীর চাপ ভালোই আছে।”
অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও এমভি অভিযান লঞ্চের মালিক হামজা লাল শেখ বলেন, আজ যাত্রীর চাপ আছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সুরভি শিপিং লাইনস কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ঢাকা সদরঘাট থেকে বরিশালে বিশেষ সার্ভিস শুরু হয়েছে। যাত্রী পরিবহনে বরিশাল-ঢাকা রুটে সরাসরি চলাচল করছে ২৬টি লঞ্চ। ২৫ মার্চ শুরু হয়েছে ঈদের বিশেষ সার্ভিস। ২৬টি লঞ্চ তিন ভাগে ভাগ হয়ে ঈদে বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছে। বরিশাল ও ঢাকার কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা আছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন বলেছেন, নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা–কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি বরদাশত করা হবে না। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সদস য সদরঘ ট বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নৌপথে ঘরমুখো যাত্রীর ভিড়
ঈদুল ফিতরে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালু ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ নানা কারণে নৌপথে যাত্রীখরার শঙ্কায় থাকা লঞ্চ মালিকরাও যাত্রীসেবা বাড়ানোর দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছেন। ফলে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে।
এবারের ঈদের ছুটি বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় আগেভাগে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন যাত্রীরা। এই অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস। ফিরতি যাত্রীদের জন্য এই সার্ভিস চালানো হবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাভাবিক সময়ে যে সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করে থাকে, তার অতিরিক্ত সংখ্যক লঞ্চ দিয়েই এই বিশেষ সার্ভিস চালানো হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে অতিরিক্ত লঞ্চের সংখ্যা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক সমিতির কর্মকর্তারা।
সরেজমিন রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর আনাগোনা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। কোনো কোনো নৌরুটের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী পারাবত-২ লঞ্চের ম্যানেজার সুমন সমকালকে বলেন, মঙ্গলবার বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হলেও প্রথম দুইদিন তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এরপর ঈদের ছুটি শুরুর দিন বৃহস্পতিবার থেকেই মূলত যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। শনিবার এই ভিড় ছিল অনেক বেশি।
এদিকে ঘরমুখী মানুষের সর্বাত্মক সুবিধা নিশ্চিতে সতর্ক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। আগে থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নৌপুলিশ ও আনসারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও বেড়েছে। ফলে সদরঘাট ঘুরে যাত্রীদের জন্য পরিচ্ছন্ন ঘাট, ওয়াশরুম, ব্রেস্টফিডিং কর্নার এবং বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা দেখা গেল। বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চগুলোকে যথা সময়ে ছাড়তে ঘাটকর্মীদেরও তৎপর হতে দেখা গেছে।
এর আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দু'দফা বৈঠক করে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে নানা সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- অতিরিক্ত যাত্রী ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা, রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যাওয়ার রাস্তায় যানজট নিরসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঘাটে যাত্রী হয়রানি বন্ধ ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, টার্মিনাল ও লঞ্চগুলো হকারমুক্ত রাখা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন, বিআইডব্লিউটিএ'র কন্ট্রোলরুম চালু, যথাসময়ে লঞ্চ আসা-যাওয়া নিশ্চিত করা, নৌদুর্ঘটনা রোধে ঈদের আগের ও পরের পাঁচদিন সার্বক্ষণিক বাল্কহেড (বালুবাহী জাহাজ) চলাচল বন্ধ রাখা প্রভৃতি। গত ১৮ মার্চ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন নৌপথে ঈদযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে সদরঘাটসহ নৌরুটের বিভিন্ন স্পটে আকস্মিক পরিদর্শনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন।
এরই মধ্যে ঈদে নৌপথের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চের সময়সূচি চূড়ান্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটি'র ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দশনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সদরঘাটে সকল অংশীদারের সাথে মিটিং করেছি আমরা। নৌপথের বিদ্যমান ৩৮টি রুটেই লঞ্চ চালানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেছি। আমরা ঈদযাত্রাকে ঘিরে ১৭৫টি লঞ্চের সময়সীমা ঠিক করেছি।
তিনি বলেন, যাত্রী বাড়লে প্রয়োজনে লঞ্চ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। যাত্রীসেবা দিতে অন্য উদ্যোগগুলোও চলমান থাকবে। যাত্রীদের সচেতনতা ও দিকনির্দেশনা দিতে বন্দরকর্মীরা সার্বক্ষণিক সহায়তা দেবেন।
যাত্রী টানতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন লঞ্চ মালিকরাও। ঈদযাত্রাকে ঘিরে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে লঞ্চে যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, মাঝপথে যাত্রী উঠা-নামা না করানো, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়ার রাখাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিশ্চিতে সতর্কভাবে কাজ করছেন তারা। যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি যেন না হয় সেটি নিয়েও বেশ তৎপর লঞ্চ মালিকরা।
এর আগে কোনো কোনো লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি মানালী অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। ঈদের আগে-পরের উভয় সময়ের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হচ্ছে। ১৫ রমজান থেকেই অগ্রিম টিকিট ছেড়েছে তারা। অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা নেই অন্য লঞ্চগুলোতে।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় আমরা বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারব বলে আশাবাদী। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতে আমরা নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে।