রোজা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এখন চলছে ঈদ উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি। দেশে প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়লেও এবার ঢালাওভাবে সে রকম কিছু ঘটেনি। বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেকটাই স্বাভাবিক দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অধিকাংশ পণ্যের দামই রোজার আগের অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। তেমনি অনেক ক্রেতার মুখেও কিছুটা স্বস্তির ছাপ লক্ষ করা যায়। তাঁদের মতে, অনেক পণ্যের দামই কিছুটা আগের মতো আছে।

তবে ঈদকে কেন্দ্র করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। যেমন ব্রয়লার, সোনালি ও দেশি মুরগি। এ দুটির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি মসলার দামও খানিকটা বেড়েছে। এ নিয়ে কয়েকজন ক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়লেও তা নাগালের মধ্যেই আছে।

বরাবরের মতো সকালে বাজারে ক্রেতাসমাগম বেশি থাকে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে আসে। আজ শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল ও তেজগাঁও এলাকার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০-৩৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা ও সোনালি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়েছে। যেখানে দুই সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০–৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। আর প্রতি কেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৬৮০ টাকা, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬১০–৬৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

টাউন হল বাজারের মুরগি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে আমাদেরও পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে মুরগি কিনতে হচ্ছে। এক কেজি সোনালি মুরগি ৩১০ টাকায় বিক্রি করলে আমাদের ২০ টাকা লাভ হয়। কেউ কেউ আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন।’

বাজারে গরুর মাংসের দাম অনেকটাই আগের মতো। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু-এক জায়গায় অবশ্য ৮০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

ঈদ উপলক্ষে মসলার মধ্যে দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম বেড়েছে। টাউন হল বাজারের মসলা ব্যবসায়ী পলাশ পাল জানান, প্রতি কেজি দারুচিনির দাম ৪০ টাকা ও গোলমরিচের দাম ৮০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন এলাচি প্রকারভেদে ৪ হাজার ৬০০-৫ হাজার টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৩০০-১ হাজার ৩৫০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ১০০–১ হাজার ২০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৪০০-১ হাজার ৪৫০ টাকা, জিরা ৬০০-৮০০ টাকা, জায়ফল ১ হাজার ২০০-১ হাজার ৬০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০-৬০০ টাকা, জয়ত্রি ৩ হাজার ৪০০-৩ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া (খোলা) ৪৫০-৫০০ টাকা, শুকনা মরিচ ২৮০-৩০০ টাকা, হলুদের গুঁড়া (খোলা) ৩৫০-৩৬০ টাকা, ধনেগুঁড়া ৩৫০-৩৬০ টাকা, পাঁচফোড়ন ১৫০-১৬০ টাকা, দেশি রসুন ৭০-৮০ টাকা, বিদেশি রসুন ১৮০-২২০ টাকা, কাঁচা হলুদ ২৮০-৩২০ টাকা, দেশি আদা ২০০-২৩০ টাকা, বিদেশি আদা ১২০-১৩০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া প্রকার ও মানভেদে প্রতি কেজি কিশমিশ ৫৬০-৭০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৫০-৫০০ টাকা, কাঠবাদাম ১ হাজার-১ হাজার ১০০ টাকা, পেস্তাবাদাম ২ হাজার ৬০০-২ হাজার ৭০০ টাকা, কাজুবাদাম ১ হাজার ৫০০-১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের মসলা ব্যবসায়ী সোহান রহমান বলেন, মসলার দাম পাঁচ ছয় মাস আগে যা বেড়েছে, এখনো তা–ই রয়েছে। নতুন করে শুধু দারুচিনি ও গোলমরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে।

মাছের দাম সার্বিকভাবে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে; শুধু রুই-কাতলা ও পাঙাশের দাম কেজিতে ২০–৫০ টাকা বেড়েছে। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আজিজ বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় চিংড়ি, রুই ও আইড় মাছের দাম কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে।

ঈদ উপলক্ষে মাছের বাজারে ক্রেতার ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ে। এখন আকার ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙাশ আকারভেদে ২০০-২৫০ টাকা, কই মাছ ২৫০-৩০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০-১ হাজার ৪০০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার ৬০০-২ হাজার ৪০০ টাকা, রুই ৩৫০-৫০০ টাকা, কাতল ৩০০-৬০০ টাকা, মৃগেল ২৮০-৩৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০-২৫০ টাকা, বোয়াল ৪৫০-১ হাজার ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা ও রুপচাঁদা ৮০০-১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির বাজারে এখনো কিছুটা স্বস্তি মিলছে। শুধু লেবু ও শসার দাম রোজার শুরু থেকেই চড়া রয়েছে। এখনো প্রতি কেজি শসা ৮০-১০০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু প্রকারভেদে ৪০-১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে অন্যান্য সবজি আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে।

ঈদের খাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিত সেমাই ও পোলাওয়ের চাল অনেকটা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। যেমন খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত ২০০ গ্রামের লাচ্ছা সেমাই ৫০ টাকা ও সাধারণ লম্বা সেমাই ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সেমাইয়ের দাম আরও পাঁচ টাকা কমে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। পোলাওয়ের চাল ১০০-১৪০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চিনির কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক থাকায় প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১ হ জ র ২০০ ট ক হ জ র ৪০০ হ জ র ৬০০ ৫০০ ট ক গ লমর চ ব রয়ল র ৪০ ট ক র ম রগ ২০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে তারকারা কে কোথায়?

ঈদ আনন্দ পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ব্যস্ত শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে। তারকাদের কেউ কেউ বিদেশে উড়ে গিয়েছেন। চলুন জেনে নিই, কোন তারকা কোথায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। 

সাদিয়া ইসলাম মৌ
ঈদের ছুটিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন জনপ্রিয় মডেল-নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী সাদিয়া ইসলাম মৌ। বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকায় ঈদের সময়ে একটু অবসর পান। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। মৌ বলেন, “ঈদের ছুটিতে ঢাকায় আছি। এই ঈদে আমার অভিনীত দুটি নাটক প্রচার হওয়ার কথা। আশা করি, দর্শকরা ভালো কিছু দেখতে পাবেন। আমার মেয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে। ঈদের দিন ওকে মিস করছি।” 

জয়া আহসান
টানা শুটিং করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটির মুডে আছেন। ঢাকার বাসায়ই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন। জয়া আহসান বলেন, “বাসায় সবাই মিলে আমার অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘জিম্মি’ দেখব। ঈদে প্রতিটা বাড়িতে যা রান্না হয়, আমাদের বাসাতেও সেটা রান্না হয়। তবে ঈদের দিন আমার বাসার আশপাশের বাচ্চাদের মাংস-ভাত খাওয়াব। এটা আমি তাদের জন্য নিজে হাতে রান্না করি। ঈদের দিনটা ওরা খাবে না আমি খাব, এটা ভাবতেই পারি না।” 

আরো পড়ুন:

ঈদের আগে উড়াল দিলেন ফারিণ

হুইলচেয়ারে বসে কেন প্রিমিয়ারে মোশাররফ করিম?

আজমেরী হক বাঁধন
ঈদুল ফিতর ঢাকায় উদযাপন করছেন আজমেরী হক বাঁধন। এ অভিনেত্রী বলেন, “ঢাকায় মা-বাবা, মেয়ে ও পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছি। ছোটবেলায় ঈদের জন্য বড়সড় পরিকল্পনা করতাম। এখন মেয়ে পরিকল্পনা করে, এটা ভালো লাগে। ঈদে যারা গ্রামে গিয়েছেন, তাদের ঈদ বেশি আনন্দের হোক এটাই প্রত্যাশা করি।” 

জাকিয়া বারী মম
রাজধানী ঢাকায় কাটছে লাক্স তারকা অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমর ঈদুল ফিতর। তার মা, ভাই ও ভাবি হজে গিয়েছেন। ফলে, তাদেরকে মিস করছেন। মম বলেন, “মা-ভাই-ভাবি ফিরে এলেই মূলত আমার ঈদ শুরু হবে। তাই আপাতত বড় কোনো পরিকল্পনা করিনি।” 

পরীমণি
দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। তার ঈদের আনন্দ দুই সন্তানকে ঘিরেই। এই চিত্রনায়িকা বলেন, “আমার সব আনন্দের মূলে ওরা দুজন। ঈদের আনন্দও ওদের নিয়েই। ঈদের ছুটিতে ঢাকাতেই আছি। সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি। তবে নানাকে মিস করছি। আমার নানাভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।” 

তাসনিয়া ফারিণ
ঈদুল ফিতরের আগে যুক্তরাজ্যে উড়ে গিয়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। তার স্বামী শেখ রেজওয়ান যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে বসবাস করেন। স্বামীর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে দূরদেশে উড়ে গিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে যাওয়ার আগে স্বামীর জন্য লাগেজ ভর্তি জিনিসপত্র নিয়েছেন এই শিল্পী। 

তানজিম সাইয়ারা তটিনী
এ সময়ের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী তটিনী। অন্য তারকাদের মতো ঈদুল ফিতর ঢাকায় উদযাপন করছেন না। বরং নিজ বাড়ি বরিশালে গিয়েছেন; যেখানে তার শৈশব কেটেছে। এই অভিনেত্রী বলেন, “বরিশালে আমার অনেক স্মৃতি। ব্যস্ততার কারণে কয়েকবছর যাওয়া হয়নি। এবার আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম ঈদের ছুটিতে বরিশাল যাব, কয়েকটি দিন কাটাব। বরিশাল আমার প্রিয় শহর। এখানে আমার নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ