ঈদের আগে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বেড়ে ২৫ বিলিয়ন, তথা ২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

চলতি মার্চ মাসে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এই রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সুখবর দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম মুনশি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে মোট রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ডলারে উঠেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ মান অনুযায়ী, দেশে রিজার্ভের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ২৯ কোটি ডলার।

জানা গেছে, ৯ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের আমদানি বিল বাবদ ১৭৫ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ কমে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। রিজার্ভ কমে হয় ১ হাজার ৯৭৫ কোটি ডলার। তবে ২০ দিনের মধ্যে আবার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হয়। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী ও পণ্য রপ্তানির আয়। চলতি মার্চ মাসের প্রথম ২৬ দিনে দেশে এসেছে ২৯৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে কোনো একক মাসে দেশে এত বেশি প্রবাসী আয় আসেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী ঈদ আরাকানে, আশা রোহিঙ্গাদের

দেশব্যাপী ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে আজ। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব উদযাপন করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুদের আনন্দ চোখে পড়লেও, বড়রা কাটিয়েছেন বিষাদে। তারা আশা করছেন, আগামী ঈদ আরাকানে কাটাবেন।

আজ সোমবার সকালে ৮টার পর উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের রাখাইনে মিয়ানমার সেনাদের চালানো নির্যাতনের বিভীষিকা আর অভাবের দাপটে এই উৎসবের রঙ সেখানে অনেকটাই বিবর্ণ।

রোহিঙ্গা শিবিরে ঈদের নামাজ আদায়ের পর কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন ইমাম ও মুসল্লিরা। মোনাজাতে অংশ নেওয়া মুসলিমরা নির্যাতনের বিচার চেয়ে ও বাংলাদেশে সরকার-জনগণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। 

এদিকে সম্প্রতি ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া গতকাল সকালে নিজের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা জানান ইউনূস। 

এ বিষয়ে টেকনাফের লেদা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে তেমন আনন্দ নেই। কেননা নিজ দেশে ঈদ উদযাপন আর ভিনদেশে ঈদ পালন করা অনেক ভিন্ন। সেদেশে (মিয়ানমারের) আমাদের বাপ-দাদার কবর রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সেখানে থাকা অবস্থায় ঈদের নামাজ শেষ করে তাদের কবর জিয়ারত করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না। এর চেয়ে কষ্ট কি আর হতে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা যেন আগামী ঈদ নিজেদের মাতৃভূমিতে উদযাপন করতে পারে-এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, সেটা শুনে আমাদের মাঝে নিজ দেশে ফেরার স্বপ্ন আলোর মুখ দেখছে বলে আশা করছি। বিশেষ করে ঈদের নামাজে দোয়া চেয়েছি; এ ঈদ যেন শেষ ঈদ হয় এ দেশে (বাংলাদেশ)। আগামীতে যেন আমাদের ঈদ আরাকানে হয়; এমন প্রত্যাশা আমাদের।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছিল। পুরানোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

শরণার্থী জীবনে ‘টাকা-পয়সা নাই, চলাফেরার সুযোগ নাই’, মন্তব্য করে মংডু থেকে আসা টেকনাফের জাদিমুড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী রশিদ আহমেদ (৭২) বলেন, ‘আমরা দেশে যেভাবে ঈদ করতাম, এখানে সেভাবে ঈদ করতে পারিনি। কারণ, সবকিছুর পরও এটা আমাদের দেশ না। এই জন্য আমাদের কোনো আনন্দ নেই। কোথাও বের হতে ভয় লাগে। বিশেষ করে; সেদেশে (মিয়ানামারে) আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি রয়েছে। সেখানে আছে বাপ-দাদাসহ স্বজনদের কবর।’ 

আজ ঈদের দিন উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবির ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই সেজেগুজে শিশুরা, নতুন জামা-কাপড় পরে ক্যাম্পের রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দে মেতে উঠেছে তারা।

শিশুদের জন্য টেকনাফের লেদা-জাদিমুড়াসহ কয়েকটি জায়গায় নাগরদোলা, চড়কিসহ মিনি মেলা বসেছে। এর আয়োজক নুর কামাল বলেন, এই মেলা কমপক্ষে তিন দিন থাকবে। এখানে শিশুরা এসে খুব আনন্দ উপভোগ করছে।

টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ নুর বলেন, অনেক আনন্দের ঈদ ছিল মিয়ানমারে। কিন্তু বাংলাদেশে সে খুশির ঈদ হয় না। এখানে মেহমান হিসেবে আছি। দেশে (মিয়ানমারে) ঈদ করে মা বাবার কবর জিয়ারত করতে পারতাম, নিজ মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারতাম। সেটি এখানে সম্ভব হচ্ছে না। নিজ দেশে চলাচল করতে ভয় ছিল না। 

তিনি বলেন, ‘১৪ মার্চ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইফতার মাহফিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী ঈদ নিজ দেশে উদযাপন করতে পারবে; তাদের এমন কথা শুনে আমাদের মন কেঁদে উঠে আরাকানের জন্য। আশা করছি ,তাদের এমন আশ্বাস আমাদের সাহস জোগায়। কেননা আমাদের খাদ্যসহায়তা সংকট নিয়ে বড় সমস্যা ছিল। কিন্তু তারা (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস) যাওয়ার পর পরই সমাধান হয়েছে। তাই দেশে ফেরা নিয়ে তাদের কথা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি খুব।’ 

রোহিঙ্গাদের মতে, কক্সবাজারের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১৩৫০টি মসজিদ ও ৯৫০টি নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মত্তব) রয়েছে। এসব মসজিদ ও নূরানি শিক্ষাপ্রতিষ্টানে (আজ) ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরণার্থী রোহিঙ্গারা।

জানতে চাইলে ১৬- এপিবিএনের অতিরিক্ত ডিআইজি কাউসার সিকদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা ঈদ উদযাপনে মেতে উঠেছেন। তবে কেউ যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে না যায়, সেজন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেখানে নজরদারি রাখা হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ