জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এখন পর্যন্ত মোট ৯৬ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। ৬ হাজার ৩৪১ ব্যক্তি-পরিবার এই সহায়তা পেয়েছে।

আজ শুক্রবার জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, গত বছরে ১০ সেপ্টেম্বর ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত ৭৪৫ জন শহীদ পরিবারকে ৩৭ দশমিক ২৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ হাজার ৫৯৬ জনকে ৫৯ দশমিক ৪১ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আইনি জটিলতার কারণে ১০০ শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তিনি বলেন, ‘আহত যোদ্ধাদের পাশে বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি কর্মসূচির গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সারা দেশে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসনসহ যাবতীয় সহায়তার কাজ করা হবে।

শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে ফাউন্ডেশন কাজ করছে বলে জানান মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাঁরা যতটুকু জানতে পেরেছেন, সেই অধিদপ্তরটির নাম ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’। এ অধিদপ্তরটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রত্যেক শহীদের পরিবারের কাছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শুভেচ্ছাসহ উপহার পাঠানো হয়েছে বলে জানান মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।

ফাউন্ডেশনের অর্থ সম্পাদক মোহা.

আহসান হাবীব চৌধুরী বলেন, তাঁরা আহত ব্যক্তি ও শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরির ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া আহতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমাজের কর্মক্ষম মানুষের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

আহসান হাবীব চৌধুরী বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিদের অনেকে দীর্ঘ সময় একটা মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এটা থেকে উত্তরণের জন্য তাঁরা মানসিক উন্নতি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা, বৈঠক করেছেন। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে ফাউন্ডেশনের।

আহসান হাবীব চৌধুরী আরও বলেন, সরকার ফাউন্ডেশনে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। অন্যান্য সংস্থা থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো পাওয়া গিয়েছিল। এই অর্থের বেশির ভাগ ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গেছে। তাঁরা ঈদের পর ফাউন্ডেশনের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুদানের আবেদন জানাবেন।

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, প্রতিদিনই ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে অনেকে ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আসেন আহত সেজে। প্রতিদিনই এ রকম ভুয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে প্রকৃত যাঁরা আহত, তাঁদের নিয়ে কাজ করতে বিলম্ব হচ্ছে। এই ভুয়া ইস্যু এখন ফাউন্ডেশনের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁরা যে টাকাটা দিচ্ছেন অনুদান হিসেবে, তা মানুষের আমানতের টাকা। তাঁরা কোনোভাবেই চান না এই টাকা কোনো প্রতারকের হাতে যাক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত, অংশ নেন প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ঈদুল ফিতরের জামাতের বিশালত্ব যেন সকলেরই চিরচেনা। এবারের ঈদ জামাত যেন অতীতের সকল রেকর্ড ছাপিয়ে এক বিশাল জনসমুদ্রের রূপ নিয়েছে। এ বছর প্রায় ৬ লাখ মুসল্লি ঈদুল ফিতরে নামাজ আদায় করেন, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় লক্ষাধিক বেশি।

ঈদের আগের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার বহু মুসল্লি শোলাকিয়ার জামাতে নামাজ আদায়ের আকর্ষণে চলে আসতে শুরু করেন। আর আজ ঈদের দিন ভোর বেলা থেকে যেন জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের অন্যান্য জেলা থেকে জনস্রোত বইতে থাকে ঈদগাহ অভিমুখে। বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মুসল্লিদের ব্যাগ ও দেহ তল্লাশি করেছেন। পথে পথে অনেকেই ১০-২০ টাকা করে পলিথিনের জায়নামাজ বিক্রি করেছেন। জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। এর অনেক আগেই ঈদগাহ মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। জামাতে ইমামতি করেন শহরের বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব বিশিষ্ট মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

এই ঈদগাহের সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে শুরু হয় জামাত। জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। প্রথম গুলিটি ছোঁড়েন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। গুলি ছুঁড়ে জামাতের সংকেত দেওয়ার এই ঐহিত্য বিশ্বের বুকে একমাত্র শোলাকিয়া ঈদগাহের বলে মনে করা হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরকে বেশ কিছু তোরণ ও উৎসব পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়।

এবারের ১৯৮ তম জামাতে মুসল্লিদের যে বিপুল পরিমাণ ঢল নেমেছিল, তাতে মূল মাঠের আশপাশের রাস্তা, পার্শ্ববর্তী নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতু, আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনা, পতিত জমিতেও মুসল্লিরা কাতার বেঁধে নামাজ আদায় করেছেন। ঈদগাহের পাশেই পর্দাঘেরা একটি জায়গায় মহিলাদের জন্যও পৃথক জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

২০১৬ সালে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর থেকেই নেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রায় ১১শ’ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সেনা সদস্য, ৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন।

পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। ছিল বেশ কয়েকটি ক্যামেরাবাহী ড্রোন। মাঠে ছিল পুলিশ ও র‌্যাবের ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। গড়ে তোলা হয়েছিল আর্চওয়েসহ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশি করে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হয়। মাঠের পাশেই মোতায়েন ছিল ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ও মেডিক্যাল ক্যাম্প। পর্যাপ্ত সুপেয় পানি এবং ওজুর সুব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দু’টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। নামাজ শেষে দু’টি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

জামাত শুরুর আগে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ও ঈদগাহ কমিটির পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রতমত সমবেত মুসল্লিদের স্বাগত ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

জামাত শেষে মোনাজাতে ইমাম আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। বাংলাদেশের উত্তরোত্তর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের শহীদি মৃত্যু কবুল করার জন্যও সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ