মুসলিমদের প্রথম কিবলা আল কুদস (বায়তুল মুকাদ্দাস) মুক্ত করা, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ফিলিস্তিন স্বাধীন করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশ। 

শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়। 

মোস্তফা তারেক উল হাসান বলেন, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনের নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী নারী ও শিশুদের হামলার মাধ্যমে দুর্বলদের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রেখে নিজেদের কাপুরুষতার প্রমাণ দিচ্ছে। তারা কখনও এ যুদ্ধে জয়ী হতে পারবে না। আমরা ফিলিস্তিন মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। 

তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে ফিলিস্তিনের পক্ষে শুধু জাতিসংঘে গিয়ে একবার বক্তব্য দিতে দেখেছি, এরপর তার সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো বক্তব্য বা অবস্থান দেখিনি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের অফিস সম্পাদক মোস্তফা হাফেজ আলী, উপদেষ্টা মাওলানা হায়দার আলী। এসময় কমিটির অন্যান্য সদস্য ও নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাকিস্তান ও ভারতকে বাংলাদেশের দুই বার্তা

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচের ঢাকা সফরের খবরটি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের চেয়েও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। হয়তো তার কারণও আছে। বৈঠকটি এমন সময়ে হলো, যখন অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, ট্রান্সশিপমেন্ট, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সীমান্তে হত্যাসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সে বিষয়ে নয়াদিল্লির তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকাটাই স্বাভাবিক। আরেকটি কারণ হতে পারে, ভারত ও পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের কারণে সার্ক মৃতপ্রায়। ঢাকা ও ইসলামাবাদ সার্কের পুনরুজ্জীবন চায়। কয়েক বছর আগে এক ভারতীয় কূটনীতিক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, সার্ক মৃত হলেও দাফন করার দরকার নেই। যেকোনো সময় পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। 

আরও পড়ুনইউনূস-মোদি বৈঠকের ফলাফল কী০৯ এপ্রিল ২০২৫

১৫ বছর পর এবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো। এর আগে বৈঠক হয়েছিল ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে উচ্চপর্যায়ে কূটনৈতিক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের ইতিহাসের গৌরব ও বেদনা দুটোই জড়িত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। 

প্রথম আলোয় দুই পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকের শিরোনাম ছিল: ‘৭১-এ গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ ৩ সমস্যার সমাধান চায় ঢাকা।’ খবরে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে দেশটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিনটি বিষয়ের সুরাহা চেয়েছে ঢাকা। অপর দুটি সমস্যা হলো পাকিস্তানের কাছে ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৪৩২ কোটি ডলার পাওনা পরিশোধ ও এখানে আটকে পড়া ৩ লাখ ২৫ হাজার পাকিস্তানিকে ফেরত নেওয়া। এ ছাড়া ১৯৭০ সালে বাংলাদেশের ঘূর্ণিদুর্গত মানুষের জন্য আসা ২০ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তাও ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গও তুলেছে ঢাকা।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য বলছে, চলতি মাসের ৪ তারিখে পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের দাবি মেটাতে হলে পাকিস্তানকে তাদের রিজার্ভের এক-চতুর্থাংশের বেশি ব্যয় করতে হবে।

অনেকে ভেবেছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, তখন বাংলাদেশ ৫৪ বছর আগের প্রসঙ্গ না–ও তুলতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার বোধ হয় কিছুটা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু এই বৈঠকের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশের অবস্থানের কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

এর আগেও বিভিন্ন বৈঠকে ক্ষমা পাওয়া ও দেনা–পাওনার বিষয়টি উঠলেও পাকিস্তান বরাবর এড়িয়ে গেছে।  ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে বঙ্গবন্ধু দেনা–পাওনা উত্থাপন করলে তিনি দম্ভ করে বলেছিলেন, ‘আমি ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে আসিনি।’ বৈঠক ওখানেই শেষ।  ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে না কেন?

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করেছি। এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান ও ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রেরিত বিদেশি সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর।’

পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ঢাকায় এসে আমি খুশি। আলোচনা খুব চমৎকার হয়েছে।’ আলোচনা চমৎকার হয়েছে বলা হলেও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বাংলাদেশের দাবি সম্পর্কে কোনো কথা নেই। সেখানে শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের কথা বলা হয়েছে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরসূচিও চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি ২৭ ও ২৮ এপ্রিল ঢাকা সফর করবেন। 

গত বছরের ২ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর কৃতকর্মের জন্য দেশটি ক্ষমা চাইলে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাটা সহজ হয়ে যাবে।

পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন–এর খবরে বলা হয়, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ভাঙন ধরার পর ঢাকার নেতারা বিশেষভাবে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতীয় শিবিরে অবস্থান করছিলেন এবং দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছিলেন এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন। গত বছর আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পতন ও ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। 

ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকার টানাপোড়েন তৈরি হওয়ার কথাটি সত্য নয়। এটি হয়েছে মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতার কারণে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে পাকিস্তান বিরোধিতা করে। এমনকি সেখানকার পার্লামেন্টেও এর বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়।

পাকিস্তানি পত্রিকায় যেমন পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি ভারতের গণমাধ্যমেও ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন রয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর খবরে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপন করে এবং একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি আরও উল্লেখ করে, একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে খাটো করে দেখছে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।

পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ একাত্তরের গণহত্যা ও পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলায় ভারত খুশি হয়েছে। সেখানকার সংবাদমাধ্যম একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকার কথাও ফলাও করে প্রচার করেছে। 

কিন্তু কোনো দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তো কারও খুশি বা বেজার হওয়ার ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় স্বার্থের নিরিখে। যেদিন পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছে, সেদিনই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়। মুর্শিদাবাদের ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশকে জড়ানোর খবরেরও প্রতিবাদ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারত ক্রমাগত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিগ্রহের অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। এমনকি ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিষয়টি তুলে ধরেন। 

কোনো দেশেই সংখ্যালঘু নিগ্রহ কাম্য নয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব যেমন আমাদের সরকার ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের, তেমনি ভারতের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও সেই দেশটির সরকার ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের। এটা নিয়ে একে অপরের প্রতি আঙুল তোলার চেয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করি।  

অনেকে ভেবেছিলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, তখন বাংলাদেশ ৫৪ বছর আগের প্রসঙ্গ না–ও তুলতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার বোধ হয় কিছুটা পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু এই বৈঠকের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশের অবস্থানের কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

এটা অন্তর্বর্তী সরকারের সাহসী ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন বলে মনে করি। এ বিষয়ে একজন সাবেক কূটনীতিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন,  ‘একাত্তরের সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সম্পর্ক। এখানে নমনীয় হওয়া বা ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’

দুই দেশকে দুই বার্তা দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করল, ‘আমরাও পারি।’ 

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৩৩
  • গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো দিন
  • নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চায় হেফাজতে ইসলাম
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরো ৫৪ ফিলিস্তিনি
  • সংস্কারের আগে নির্বাচন দিলে শহীদ পরিবার বিচার পাবে না, আশঙ্কা জুলাই মঞ্চের
  • ফিলিস্তিনিদের মুক্তির উপায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বিদায়: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম
  • শহীদি সমাবেশ সফল করতে রাজশাহীতে গণসংযোগ
  • পাকিস্তান ও ভারতকে বাংলাদেশের দুই বার্তা