মিয়ানমারে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়েছে আজ শুক্রবার। এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু মিয়ানমার নয়, এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে ভারত, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে।

ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০ বছরে মিয়ানমারে এত মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার নজির নেই। এর প্রভাবে আজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর পরাঘাত বা আফটার শক আরও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মান্দালয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর অবশ্য বলেছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৩।তবে ভূমিকম্পের এই মাত্রা বেশ বড় বলেই বিবেচিত হয়।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের পাশের দেশ মিয়ানমারের মান্দালয়। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৫৯৭ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলছিলেন, মিয়ানামের সেন্ট্রাল বেসিনের একটি ফল্ট বা চ্যুতি আছে। এর নাম ‘সাগাইং ফল্ট’। এটি শান মালভূমি ও সেন্ট্রাল মিয়ানমার বেসিনের মাঝামাঝি এলাকা। সেখানেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ। এর প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়েছে।

যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, সেটি ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ মধ্যে পড়েছে। সাবডাকশন জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুটো টেকটোনিক প্লেট সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং একটি ডুব দেয় বা অন্যটির নিচে পড়ে যায়। এই ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ বিস্তৃতি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা পর্যন্ত। এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।

এ এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ হলেও গত ২০ বছরে এ অঞ্চলে এই মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলছিলেন, দিন দিন এ অঞ্চলে ভূমিকম্প বাড়লেও গত ২০ বছরে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, এমন নজির নেই। তাই এবারের এ ভূমিকম্প বেশ বড় ভূমিকম্প। এর প্রভাব বিস্তীর্ণ এলাকায় পড়েছে।

প্রথমে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটারের দূরে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, এটি ছিল পরাঘাত বা আফটার শক। আরও কয়েকটি পরাঘাত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একসময় পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগের প্লেটগুলো ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। এগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর সেখানে পৌঁছানোর পর শক্তি অটুট থাকলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই ভূমিকম্প।

এই প্লেটের নানা ভূগর্ভস্থ চ্যুতি আছে। সেগুলোই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের সিলেট থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং হিমালয়ের পাদদেশের এলাকাগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ। দেখা যাচ্ছে, এসব স্থানে ভূমিকম্প বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ও এর কাছাকাছি এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ৪১। গত বছর তা বেড়ে হয় ৫৪।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত র র ভ ম কম প ভ ম কম প র ভ ম কম প ব র উৎপত ত ৭ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মসজিদের একাংশ ধসে তিনজনের মৃত্যু

মিয়ানমারে আজ শুক্রবার অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে একটি মসজিদ আংশিকভাবে ভেঙে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির বাগো অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে মসজিদের একাংশ ধসে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। দুজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের বাগো অঞ্চলের তাউংনু শহর থেকে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন বলেন, ‘আমাদের পবিত্র জুমার নামাজ চলার সময় ভূমিকম্প শুরু হয়। তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

আজ দুপুরের দিকে মিয়ানমারে শক্তিশালী ওই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, সাগাইং শহর থেকে উত্তর–পশ্চিমে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। এর উৎপত্তি ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের অবস্থান মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দূরে।

শক্তিশালী ভূমিকম্পটির কয়েক মিনিট পর একই এলাকায় ৬ দশমিক ৪ তীব্রতার ভূমিকম্প–পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখনো কিছু জানায়নি। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

ইতিমধ্যে জান্তা সরকার এই দুর্যোগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ঝুঁকি বেড়ে গেল, অভিমত বিশেষজ্ঞের  
  • বাংলাদেশে এক মাসে পাঁচবার কম্পন
  • কেন মিয়ানমারে এমন ভূমিকম্প!
  • ভূমিকম্প হলে যা করবেন
  • মিয়ানমারে বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন: রাষ্ট্রদূত
  • ভূমিকম্প: নিরাপদে আছেন মিয়ানমারে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা
  • মিয়ানমার: ভূমিকম্পে ধসে পড়ল ৯১ বছরের পুরনো সেতু
  • মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে নিহত ২৩
  • মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে ২৩ জন নিহত
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মসজিদের একাংশ ধসে তিনজনের মৃত্যু