‘ঢাকা ১৭, বগুড়া ৪ ও ৬ আসনের এমপি পদ ফিরিয়ে দেওয়া হোক’, দাবি হিরো আলমের
Published: 28th, March 2025 GMT
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ (কাহালু ও নন্দীগ্রাম), বগুড়া-৬ (সদর) ও ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আশরাফুল হোসেন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ দাবি জানান।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো.
এরপর আশরাফুল হোসেন ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ওই তিন আসনের উপনির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণার দাবি জানান। তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যেহেতু ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ঘোষণা করা হয়েছে। হিরো আলম(কে) ঢাকা ১৭, বগুড়া ৪ ও ৬ আসনের এমপি পদ ফিরিয়ে দেওয়া হোক, আমি তো অনেক নির্যাতিত হয়েছি।’ পরে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে অনেকেই বনে–জঙ্গলে ঘুরেছে। সে সময় আমি নির্বাচন করেছি। ইশরাক যদি মেয়র হয়, তাহলে আমাকে এক দিনের জন্য হলেও এমপি দিতে হবে।’
এ বিষয়ে গতকাল রাতে আশরাফুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার ভোটার থেকে শুরু করে দেশবাসী খুব ভালো করেই অবগত আছেন, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ এবং ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের হারিয়ে বিপুল ভোটে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে চাপ দিয়ে ফলাফল ছিনতাই করে শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীদের অবৈধভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে। ফল ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ করেও ন্যায়বিচার পাইনি। উল্টো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয়েছে।’
আরও পড়ুনইসিতে আপিল করে বগুড়া-৪ আসনের প্রার্থিতা ফিরে পেলেন হিরো আলম১০ ডিসেম্বর ২০২৩আশরাফুল হোসেন আরও বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিএনপি নেতা ইশরাকের ফল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ছিল। আদালতের নির্দেশে তাঁকে পাঁচ বছর পর বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এখন ঢাকা-১৭, বগুড়া-৪ ও ৬ আসনে সংসদ সদস্য পদে ছিনতাই হওয়া ফলও নির্বাচন কমিশন থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। সংসদের মেয়াদ থাক না থাক, অন্তত জনগণের রায়কে সম্মান জানিয়ে নির্বাচন কমিশন ফলাফল জালিয়াতি করে দেশবাসীর সঙ্গে যে তামাশা করেছিল, আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করে জাতির সঙ্গে তামাশার অবসান হোক।’
আরও পড়ুনকাহালুতে হিরো আলমের ওপর ‘নৌকার সমর্থকদের’ হামলা২৪ ডিসেম্বর ২০২৩আশরাফুল হোসেন ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একতারা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ভোট গ্রহণের দিন তাঁর ওপর হামলা হয়। পরে তিনি ভোট বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন আশরাফুল হোসেন। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত নৌকার প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে বগুড়া-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান বিজয়ী হন।
আরও পড়ুনআরাফাত ও হিরো আলমের ভোটে দুই চিত্র৩১ জুলাই ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশর ফ ল হ স ন ২০২৩ স ল অন ষ ঠ ত ছ নত ই আওয় ম ৬ আসন ইশর ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয়দের বিদেশে পড়াশোনায় আগ্রহ কমছে, কারণ কি শুধুই রাজনীতি
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের অনেক নামী প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে যান ভারতের ছাত্রছাত্রীরা। করোনাপরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও শিক্ষার্থীদের বিদেশযাত্রার প্রবণতা কমছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, বিদেশে অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ১৫ শতাংশ। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য দেশে যাওয়ার আগ্রহ কমছে ভারতীয়দের?
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান
ভারতের সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালে বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তুলে ধরেছে। এ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরে (২০২৪) শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ শতাংশ কমেছে।
লোকসভায় এক সংসদ সদস্যর প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৯৮৯ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী অন্য দেশে পড়াশোনা করেছেন। ২০২৪ সালে এসে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন ভিনদেশে। অর্থাৎ এক বছরে সোয়া লাখের বেশি শিক্ষার্থী কমেছে।
সবচেয়ে বেশি কমেছে কানাডায়। এ দেশে শিক্ষার্থী কমার হার ৪২ শতাংশ। ইংল্যান্ডে প্রায় ২৮ শতাংশ, আমেরিকায় প্রায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কম পড়তে গেছেন।
আরও পড়ুনইংল্যান্ডে পড়াশোনা: খণ্ডকালীন চাকরি ও স্কলারশিপের সুযোগ, আইইএলটিএসে ৬.৫ স্কোর হলে আবেদন ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কাছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরাবরই খুব আকর্ষণীয়। তবে অন্য দেশেও পড়ার ঝোঁক রয়েছে। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অন্য কয়েকটি দেশে বিপরীতমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাশিয়া ও ফ্রান্স। ২০২৩–এর তুলনায় ২০২৪ সালে রাশিয়ায় ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ, ফ্রান্সে সংখ্যাটি ১৪ শতাংশ।
রাশিয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেলে পড়তে যাওয়ার ঝোঁক বেশি। হাজারো শিক্ষার্থী সে দেশে যাচ্ছেন ডাক্তারি পড়তে। সেখানে পড়াশোনার খরচ যেমন কম, তেমনি মেডিকেলের পাঠ নেওয়ার জন্য কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি থেকে বসবাসের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়। শুধু এমবিবিএস নয়, পিএইচডি করতেও অনেকে রাশিয়ায় যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনলিথুয়ানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: ৩৫০টির বেশি প্রোগ্রামে পড়াশোনা, স্কলারশিপের সুবিধা, সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ১৪ নভেম্বর ২০২৪ছাত্র কমার কারণ—
বিদেশে ভারতীয়দের পড়তে যাওয়ার প্রবণতা কমার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক কারণ। বিভিন্ন দেশে দক্ষিণপন্থী দলের উত্থান হয়েছে। এর ফলে কঠোর হয়েছে অভিবাসননীতি। ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কারণে গন্তব্য হিসেবে আমেরিকা, ইউরোপের একাধিক দেশ আগের মতো আর অনুকূল নয় বলে তাঁদের মত।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও পররাষ্ট্রনীতি ছাত্রসংখ্যা কমার পেছনে কিছুটা দায়ী বলে মন্তব্য তাঁদের। এ ক্ষেত্রে কানাডার প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এ দেশেই সবচেয়ে বেশি কমেছে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। তার প্রভাব পড়েছে ভিসার ক্ষেত্রে।
ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার যে নীতি, তা কোনো ভিনদেশির পক্ষে সুবিধাজনক নয়। কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। এর ফলে এই দুটি দেশে পড়তে যাওয়া ভারতীয় শিক্ষার্থীরা অন্য দিকে ঝুঁকেছেন। ইউক্রেন, রাশিয়ায় অনেক মেডিকেল ছাত্র পড়তে যেতেন, সেখানে যুদ্ধ হলেও যাচ্ছেন। আমেরিকা বা কানাডার মতো সেখানে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা নেই, পড়াশোনার খরচও কম।’
বিদেশে না যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বিক মন্দা, শিল্প উৎপাদনে ঘাটতি, কর্মসংকোচন নিয়োগের ক্ষেত্রকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। অতীতে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়তে যেতেন যে লক্ষ্য নিয়ে, সেখানে কোথাও নিয়োগ খুঁজে নেওয়া, তেমন পরিস্থিতি আর নেই। বড় বহুজাতিক সংস্থায় কর্মী ছাঁটাইয়ের খবর পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে।
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজ, আইইএলটিএসে ৫.৫–এ আবেদন০২ অক্টোবর ২০২৪আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে জনকল্যাণের ধারণাটা ফিকে হয়ে আসছে। যে উদারনৈতিক নীতির ফলে অন্য দেশের ছাত্রছাত্রীরা স্বাগত ছিল, সেখানে আজ বাধা তৈরি হয়েছে। এর ফলে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভারতীয় ছাত্রদের যে মেধা ও পরিশ্রম, তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। এই প্রবণতা আগামী দিনেও বজায় থাকবে।’
শুধু বিদেশযাত্রা নয়, দেশের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশের সঙ্গে বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট করতে চাইছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার গুরুত্ব কমছে। বাজেট কমছে, নিয়োগের সম্ভাবনা কমছে। তাই কলেজে ছাত্র ভর্তি কমে গিয়েছে। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে সম্ভবত সেই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বাইরের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার উৎসাহ কমে যাচ্ছে অথবা যোগ্যতাতেও ঘাটতি হচ্ছে।’