মায়ের কোলে বসে আড়াই বছরের আহনাফ কুষ্টিয়ায় ফিরছিল, মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন তার বাবা। আজ শুক্রবার ভোরে বগুড়া থেকে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন। প্রায় দেড় শ কিলোমিটার পথ নিরাপদে আসেন তাঁরা। বাড়ি পৌঁছানোর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘটল দুর্ঘটনা। নিমিষেই পরপারে চলে গেল আহনাফ ও তার মা। তার বাবাও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া–ঈশ্বরদী মহাসড়কে কুষ্টিয়া শহরের ত্রিমোহনী বাইপাস মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়েছে।

নিহত আহনাফ ইতি খাতুন (২৬) ও আবদুল কাদের দম্পতির ছেলে। তাঁদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের গোসালা সড়কে। আবদুল কাদের বগুড়ায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদের ছুটিতে আবদুল কাদের মোটরসাইকেলে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে ফিরছিলেন। ভোরে তাঁরা বগুড়া থেকে রওনা হন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ ত্রিমোহনী মোড়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রাক তাঁদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে আহনাফ ও তার মা ইতি খাতুনের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই তিনি ছুটে যান। গিয়ে দেখতে পান, মা ও ছেলে পাশাপাশি পড়ে আছে। বাবা পাশে বসে কাঁদছেন। তাঁর মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া হাইওয়ে ও মডেল থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকের ধাক্কায় এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা ঈদের ছুটিতে বগুড়া থেকে কুষ্টিয়া শহরে বাড়ি ফিরছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে কারাবন্দীদের জন্য কী কী খাবার থাকছে

ঈদের দিনটা আর দশটা দিনের মতো নয়। আনন্দের এদিন কারাগারগুলোও কাটে ভিন্ন আবহে। কারাবন্দীদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। ঈদের নামাজের জামাতে শরিক হন কারাবন্দীরা। এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে কারাগারে থাকা সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের ‘দূরত্ব’ ঘুচে যাবে। সবার জন্য থাকবে একই ব্যবস্থা।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আছেন। এবার প্রথমবারের মতো তাঁদের ঈদুল ফিতরের দিন কাটবে কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ বন্দীদের মতোই কারাগারে থাকা ভিআইপিসহ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের একই ধরনের খাবার দেওয়া হবে। এদিন সকালের খাবারে থাকছে পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। দুপুরে থাকছে পোলাও বা খিচুড়ি, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, সালাদ, মিষ্টি ও পান। আর রাতে দেওয়া হবে ভাত, আলুর দম ও ডিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৩১ জন কারাগারে আছেন। তাঁদের মধ্যে ডিভিশন পেয়েছেন ১০৮ জন, যাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ২৯ জন; সাবেক সংসদ সদস্য ২২ জন; সরকারি কর্মকর্তা ৪৪ জন এবং অন্যান্য পেশার ১৩ জন। ডিভিশন পাননি ভিআইপি হিসেবে কারাগারে থাকা ২৩ জন।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ বন্দীদের মতোই কারাগারে থাকা ভিআইপিসহ (বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের একই ধরনের খাবার পরিবেশন করা হবে। এদিন সকালের খাবারে থাকছে পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। দুপুরে থাকছে পোলাও বা খিচুড়ি, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, সালাদ, মিষ্টি ও পান। আর রাতে দেওয়া হবে ভাত, আলুর দম ও ডিম।

অন্যদিকে সারা বছর সাধারণ বন্দীদের সকালে দেওয়া হয় হালুয়া, রুটি ও ডিম। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে ভাত, ডাল, সবজি। রাতে খাবার দেওয়া হয় ভাত, ডাল, মাছ বা গরুর মাংস। আর ডিভিশন পাওয়া বন্দীদের খাবার তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী আলাদা রান্নার ব্যবস্থা করা হয়।

ঈদের দিন কারাগারগুলোর চার দেয়ালের মধ্যে বন্দীদের জন্য ঈদের নামাজের জামাত হয়। উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি বন্দীদের জন্য তাঁদের স্বজনদের আনা খাবারও তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। ঈদের পরদিন যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কারাগারের ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে কারাগারগুলো।জান্নাত-উল ফরহাদ, সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও গণমাধ্যম), কারা অধিদপ্তর

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল ফরহাদ গত শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের দিন কারাগারগুলোর বন্দীদের জন্য ঈদের নামাজের জামাত হয়। উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি বন্দীদের জন্য স্বজনদের আনা খাবারও তাঁদের খেতে দেওয়া হয়। ঈদের পরদিন যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কারাগারের ভেতরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবে কারাগারগুলো।

সারা দেশের ৬৮ কারাগারে এখন বন্দীর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৭২৩। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ৮ হাজার ১০০।

আরও পড়ুনক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩১ ‘ভিআইপি বন্দী’ কেমন আছেন১৭ জানুয়ারি ২০২৫

এই কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুয়ায়ী বন্দীদের জন্য আলাদা বন্দোবস্তের আয়োজন করা হয়। ঈদের পরদিন কারাগারের ভেতরে বন্দীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঈদের পরদিন থেকে তিন দিন বন্দীদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে দেওয়া হবে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করতে পারবেন তাঁরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ